রেল, সড়ক. জল ও আকাশ পথে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় ভারত
বাংলাদেশের আশুগঞ্জ দিয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে প্রায় চার হাজার মেট্রিকটন চাল ভারতের ত্রিপুরায় পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে পাঁচটি জাহাজে করে আসা পাঁচ হাজার ৮০ মেট্রিকটন চাল মধ্যে চারটি জাহাজ থেকে খালাস করা হয়েছে। সর্বশেষ জাহাজ থেকে চাল খালাস কার্যক্রম চলছে। এদিকে চালের পর এবার নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রীও নিতে চায় ভারত। এ জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ জানিয়েছেন ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। গত শুক্রবার নয়াদিল্লীতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে মুখ্যমন্ত্রী এই অনুরোধ জানান। ভারতের ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক দেশের কথা’ পত্রিকা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়, শুক্রবার নয়াদিল্লীতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ট্রানজিট/ট্রান্সশিপন্টের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের ব্যবস্থা নিতে মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ জানান। এছাড়া রেল, সড়ক. জল ও আকাশ পথে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার আহবানও জানান তিনি।
এদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতে নেওয়ার খবরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার স্থলবন্দরের ব্যবসায়িদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তারা মনে করছেন, এতে আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ব্যবসায়িরা যেমন লোকসান গুনবেন তেমনি সরকারও বঞ্চিত হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে।
আখাউড়া স্থল শুল্ক কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান জানান, ‘শনিবার পর্যন্ত প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন চাল ভারতে গেছে। মোট ১৩ দিনে প্রায় দুইশ’ গাড়িতে এসব চাল ভারতে যায়। নিয়মিতভাবে চাল ভারতে গেলে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে।’
আখাউড়া স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন বাবুল জানান,‘এই স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য ভারতে রফতানি হচ্ছে সেগুলো যেন ট্রানজিটের আওতায় ভারত নেওয়ার সুযোগ না দেওয়া হয়। যদি চালের মতোই অন্যান্য পণ্য বিনা শুল্কে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারত নিয়ে যায় তাহলে এই বন্দরের ব্যবসারত অর্ধশতাধিক আমদানি-রফতানিকারক ও অন্ততঃ ৩৫টি সিএন্ডএফ এজেন্টের পথে বসতে হবে এবং বৃহত্তম রপ্তানিমুখি বন্দরটি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের উপর দিয়ে গত ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি সহায়তার পাঁচ হাজার মেট্রিক টন চাল নিতে শুরু করেছে ভারত। অন্ধ্র প্রদেশ থেকে আসা এসব চাল জাহাজে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আসার পর সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আগরতলায় নেওয়া হয়।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়িরা জানান, গত এক বছর ধরে এই বন্দরের পরিস্থিতি এমনিতেই নাজুক। এই বন্দর দিয়ে সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বেশি রফতানি হওয়া পাথরও এখন বন্ধের পথে। কেননা, ভারতীয় পাথর বাংলাদেশিরা এনে তা প্রক্রিয়াজাত করে আবার সেখানকার এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পাঠানো হতো। কিন্তু ভারতীয়রা এখন তাদের দেশের ভেতর দিয়েই বেশিরভাগ পাথর পরিবহন করে।
আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম জানান, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখন যদি বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় পণ্য নেওয়া হয় তাহলে আমাদের পণ্যের চাহিদা থাকবে না। ফলে সরকার যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হবে তেমনি পথে বসতে হবে বন্দরের ব্যবসায়ীদেরকে।’
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো. আব্বাস উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভারতে চাল পরিবহনকারি কাভার্ড ভ্যানগুলোকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চালের ভ্যানগুলো ভারতে না যাওয়া পর্যন্ত অন্য পণ্য রফতানি করতে দেওয়া হয় না।
উল্লেখ্য,আখাউড়া স্থলবন্দরটি দেশের অন্যতম রফতানিমুখী স্থলবন্দর। এই বন্দর দিয়ে মাছ, শুটকি,জুস,চিপস,পাথর, সিমেন্ট ইত্যাদি পণ্য রফতানি হয়ে থাকে।