রমজানে ফল বিক্রি না করার হুমকি
বাংলাদেশে বিষাক্ত ফরমালিন মেশানো ফলের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ফল ব্যবসায়ীরা। তাঁরা এই দাবি আদায়ে শনিবার রাজধানী ঢাকায় সব ধরণের ফলের দোকান এবং আড়ত বন্ধ রেখেছেন।
গত ১১ই জুন মৌসুমী ফল, যেমন আম, লিচু, জামসহ সব ধরণের ফলে বিষাক্ত ফরমালিনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। রাজধানীতে তাঁরা ৮টি পয়েন্টে ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযান চালাচ্ছেন সেই থেকে। অভিযানে এ পর্যন্ত ফরমালিন মেশানো বিপুল পরিমাণ ফল আটক করে ধ্বংস করা হয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আটক ও জরিমানাও করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকার ফল ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড-এর এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন যে, ফরমালিন বিরোধী অভিযানের নামে ফল ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, অভিযানে ফরমালডিহাইড-৩০০ নামের একটি ভুল যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এই যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন শনাক্তের নামে দেশি-বিদেশি ফলমূল ধ্বংস করা হচ্ছে। যার ফলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনে ফরমালিনবিরোধী অভিযানে কোটি কোটি টাকার ফল জব্দ ও নষ্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু যে ফরমালডিহাইড-৩০০ যন্ত্রের মাধ্যমে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা আসলে তৈরি হয়েছে বাতাসে ফরমালডিহাইড বাষ্প পরিমাপের জন্য, তাজা ফলে ফরমালিনের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য নয়। ইতিমধ্যে খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট (বিসিএসআইআর)-এর সংশ্লিষ্ট গবেষক ও কেমিস্টরা এই যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ বিতর্কিত এই যন্ত্র ব্যবহার করেই ফল নষ্ট করা হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ম করে জেল জরিমানা দেয়া হচ্ছে।
তাই সংবাদ সম্মেলনে ‘ভুল’ যন্ত্রের মাধ্যমে ফরমালিনের মাত্রা পরীক্ষার নামে ফলমূল ধ্বংস ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দোকান ও আড়ত বন্ধ রেখে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ফল ব্যবসায়ীরা। সোমবারের মধ্যে দাবি মানা না হলে বিদেশ থেকে ফল আমদানি বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, আসন্ন রমজানেও তাঁরা বাজারে ফল সরবরাহ করবেন না।
ফল আমদানিকারকরা বলেন, বাণিজ্য নীতিমালা মেনেই ফল আমদানি করা হয়। এ সব ফল রেফ্রিজারেটর কনটেইনারে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমদানি করা হয়ে থাকে। তাজা ফল চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর কর্তৃপক্ষ ফলের কনটেইনার খুলে ফলগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরিতে পাঠায়। এরপর সেখানে সেগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তাই এতে ফরমালিন বা রাসায়নিক পদার্থ থাকার প্রশ্নই আসে না।
ওদিকে, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ফল উৎপাদকারী, বিশেষ করে আম ও লিচু উৎপাদনকারীরা এই ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বিএসটিআই তাদের ফরমালিন বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ফরমালিন মেশানোর অপরাধ প্রমাণ হলে হত্যা প্রচেষ্টার মামলা করা হবে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে