Main Menu

ডাকাতি করছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল

+100%-


ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লাগামহীন বেতন ও সেশন ফি আদায় করা হচ্ছে। বেতন-ফি’র এই বৃদ্ধির হার বর্তমানে চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। অভিভাবকদের সাথে কথা না বলেই সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের বুকে ‘‘ছুরি বসানোর’’ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কারো কথাই শুনছে না তারা।

স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে নিরুপায় অভিভাবকরা মানববন্ধন, এমনকি দফায় দফায় সমাবেশ করেও শিক্ষাপ্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। মোটা অংকের বেতন ফি আদায়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা।

রেজিষ্ট্রেশনবিহীন বিদেশী নামধারী এসব ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাইকোর্টের আদেশও মানছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফি নিয়ে অভিভাববকদের কোন ধরনের অনুযোগ, অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষ আমলে নেন না। এমনকি কারণে অকারণে শিক্ষার্থীদেরকে চাপের মুখে রাখেন তারা। প্রতিবাদ করতে গেলে অনেক শিক্ষার্থীকে বছরের মাঝামাঝিতে ছাড়পত্র দিয়ে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।

নাজেহাল হতে হয় শিক্ষার্থী অভিভাবকদের। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চেয়ে কোথাও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না অভিভাবক মহল।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন বৃদ্ধির হার দ্বিগুণেরও বেশি। তবে এ ব্যাপারে কোনো অভিভাবক স্বপরিচয়ে মুখ খুলতে রাজি নন।

তারা জানান, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বর্ধিত বেতন ফি বৃদ্ধির ব্যাপারে আপত্তি নেই বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে লিখিত বন্ডও নিয়েছে। এখন মুখ খুললে সন্তানদের সমস্যা হবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সেশান ফি আদায়ে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও সেই বিষয়টি কৌশলে পাশ কাটিয়ে পঞ্চাশ শতাংশ হারে মাসিক বেতন বৃদ্ধি করে তার সঙ্গে সাত শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, রাজধানীর মাষ্টারমাইন্ড স্কুলে কে জি ওয়ানে ভর্তি ফি নেওয়া হয়েছিল প্রায় এক লাখ টাকা। মাসিক বেতন ৮ হাজার টাকা।  কে জি টুতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর মাসিক বেতন বৃদ্ধি করে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে সেশন ফি।

ম্যাপল লিফ স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তার ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। মাসিক বেতন ৫ হাজার ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এখন ৭ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। তার উপর পুনঃভর্তি ফি ৩৭ হাজার টাকাও দিতে হচ্ছে। কেন কী কারণে এত টাকা নেওয়া হচ্ছে সেই বিষয়টিও জানা যাচ্ছে না।

ধানমন্ডির সানিডেইল স্কুলের এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, সানিডেইল কর্তৃপক্ষ প্রতি শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন চার হাজার টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে। কেজি ওয়ানের বেতন পাঁচ হাজার ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে নয় হাজার ৭০০ টাকা করা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীর বেতন ছয় হাজার ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে দশ হাজার ১০০ টাকা করা হয়েছে। স্কুল প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে হুমকি দেওয়া হয় ছেলেকে অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে।

ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলের ধানমন্ডি শাখার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানিয়েছেন, ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল (ইএসএস) কর্তৃপক্ষও ছাত্র বেতন প্রায় দুই হাজার টাকার বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বেতনের টাকার সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে সাত শতাংশ ভ্যাট।

বাজেট ঘোষণা করার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলো লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে বেতনের অংক। স্ট্যান্ডার্ড ওয়ানের বেতন যেখানে ৪ হাজার ৪০০ টাকা ছিল সেখানে করা হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ টাকা। তৃতীয় শ্রেণীর বেতন ৪ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার ৪০০ টাকা করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সেশন ফি ছিল ১৪ হাজার টাকা কিন্তু এখন মাসিক বেতন বাড়িয়ে ২৪ হাজার টাকা আদায় করে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সাত শতাংশ ভ্যাট।

একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি স্কুল পুনঃভর্তি বা সেশন চার্জ জুনের মধ্যেই পরিশোধ করতে হবে বলে অভিভাবকদের জানিয়ে দিয়েছে। আবার কিছু কিছু স্কুল পুনঃভর্তি ফি না নেওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৫০ শতাংশ বেতন বাড়িয়ে দিয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, “শিক্ষা আইন করে সকল ধরনের শিক্ষাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবো। শিক্ষা আইনের কিছু ধারা নতুন করে সংস্কার হচ্ছে। সেখানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নিয়ন্ত্রণ, প্রশ্ন ফাঁসের ব্যপারে কঠোর শাস্তির বিধান এমনকি শিক্ষা বাণিজ্যের ব্যপারে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আইন থাকবে। তার পরেও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নিয়ে দির্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধানে আমরা আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নিচ্ছি। সম্প্রতি এই ব্যাপারে একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে।”

গত ২৩ এপ্রিল ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদানকারী বিদ্যালয়গুলোতে পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায়ে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন হাইকোর্ট। একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার এবং বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

‘ফ্রি স্টাইলে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’ শিরোনামে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি সংবাদ যুক্ত করে এ রিট করেন আইনজীবী জে আর খান রবিন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বদরুদ্দেজা বাদল।

চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা, আইন, স্বরাষ্ট্র এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহপরিচালকসহ ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদানকারী ২৩টি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর গত সপ্তাহে রাজধানীর ২৪টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে নির্দেশনা মুলক চিঠি পাঠিয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে পাঠানো নির্দেশনা স্কুল কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে কোন মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে কিনা জানা যায়নি।






Shares