আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস



আজ ১৭ই মার্চ। বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন। অনন্য সাধারণ নেতৃত্বের মাধ্যমে সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপান্তর করেন। ১৯৭১-এ মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মন্ত্রের মতোই বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানের সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় খালি হাতে লড়াইয়ে নামতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আবহমানকালের শাশ্বত বাঙালির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির আকাক্সক্ষাকে তিনি বাস্তবায়িত করেছিলেন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের মহাপুরুষ শেখ মুজিবের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধু ছিলেন মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক। তিনি বাঙালি জাতিকে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতা। দিয়েছেন স্বাধীন-সার্বভৌম মানচিত্র আর শস্য-শ্যামল জমিনের ওপর সূর্য লাল পতাকা।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু রেখে গেছেন তার অমর কীর্তি স্বাধীন বাংলাদেশ। যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রগতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীসহ জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াইয়ের দুর্জয় প্রেরণা, ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় আর সকল ষড়যন্ত্রের কুহেলিকা ভেদ করে সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের দৃপ্ত শপথ নিয়ে কৃতজ্ঞ বাঙালি আজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রপতি এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব শিশু-কিশোরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শৈশব থেকেই নতুন প্রজন্মের মধ্যে সৎ গুণাবলির উন্মেষ ঘটাতে হবে, যাতে তারা দেশ ও মানুষকে ভালোবাসতে শেখে। বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমতা ছিল অপরিসীম। তাই তাঁর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই দিনে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার শপথ নিতে হবে। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, দেশের সব শিশুসহ দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। এ সময় শিশু সমাবেশে আলোচনা সভা, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-১৮ই মার্চ বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য রাখবেন। সারা দেশে জেলা ও উপজেলা সদরে দিবসটি উপলক্ষে শিশু সমাবেশ, র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা সদরে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ডিএফপি ও গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সপ্তাহব্যাপী পুস্তক ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।