বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের অবস্থান
ডেস্ক ২৪: হিংসার আবহে বাংলাদেশের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্টতা পেলেও আওয়ামী লীগের বিপদ কাটেনি৷ বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে চলেছে বিরোধী বিএনপি ও তার শরিক দলগুলি৷ এ পরিস্থিতিতে ভারতের ভূমিকা কী হওয়া উচিত? কী বলছে পত্র-পত্রিকাগুলি?
গণতন্ত্রের শর্ত অনুযায়ী, বিরোধী দল ছাড়া বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনি ফলাফলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ পাশাপাশি এটাও ঠিক যে বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া ও অন্যান্য বিরোধী নেতা-নেত্রীদের আলোচনার টেবিলে আনতে পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে ভারতও চেষ্টার কসুর করেনি৷ কিন্তু সরকার ও বিরোধীপক্ষ নিজেদের অবস্থানে বরাবর অনড় থেকে গেছে৷ ফলে নির্বাচন হয়েছে একতরফা৷ পরিণাম – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ কোনো নির্বাচনি পর্যবেক্ষক পাঠায়নি৷ ভারত অবশ্য পাঠিয়েছে৷ বলেছে, বাংলাদেশের সংকট কাটাতে সর্বস্তরের জনগণের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ খোঁজা উচিত ছিল৷ দরকার ছিল অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন৷ ভারত বরাবরই এই অবস্থান নিয়ে এসেছে, আর এখনও তাই মনে করে৷
নির্বাচন পরবর্তি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কম হবে বলে মনে করে না দিল্লি৷ বরং সমস্যাপীড়িত নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জটিল হবে৷ খতিয়ে দেখতে হবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশিদ বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো পক্ষকেই সমর্থন করতে রাজি নয় ভারত৷ দিল্লি উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, বেশি দিন রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে ভারতে অনুপ্রবেশ বাড়তে পারে, যেটা একেবারেই কাম্য নয় দিল্লির৷ হাসিনা সরকারকে সেটা জানিয়েও দিয়েছে ভারত৷ ভারতের জাতীয় পত্র-পত্রিকার একাংশের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তদারকি, সরকারের অধীনে নির্বাচন না করানোর জেরে বিএনপি ও তার অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর সহিংসতা চলবে৷ যার শিকার হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়৷ শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সীমান্তপার থেকে বাড়তে পারে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতাও৷
আওয়ামী লীগ চাইছে এক ধর্মনিরপেক্ষ উদার বাংলাদেশ৷ অন্যদিকে জামায়াতের বাঁচা-মরা নির্ভর করছে ইসলামিক পরিচয়ে৷ সেটাই হবে জামায়াতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংসাদপত্রের সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়, প্রাক-নির্বাচনকালে হাসিনা সরকারের সংকটমোচনে ভারত ব্যর্থ হয়েছে৷ এখন দিল্লির যেটা করণীয়, তা হলো এই কঠিন সময়ে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাসিনা সরকারের সমর্থনে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলা৷ কারণ, এই মুহূর্তে অনেক দেশ নতুন নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে৷ সেটা খারিজ করলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে বাংলাদেশ৷
বলা বাহুল্য, নতুন নির্বাচন মানে বাংলাদেশের ওপর বাড়তি আর্থিক বোঝা৷ দীর্ঘদিন হরতাল, অবরোধে বাংলাদেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থা৷ পাশাপাশি দিল্লি মনে করে, বিরোধী দলগুলির দিকে সদিচ্ছার হাত বাড়িয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করা, যাতে এক নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠে৷ খালেদা জিয়াকেও নতুন করে চিন্তা করতে হবে জামায়াতের সঙ্গে হাত মেলানো কতটা কাঙ্খিত৷
ভারতের মতো অনেকেই এখন তাকিয়ে আছে নির্বাচন-পরবর্তীকালে হাসিনা সরকার কোন পথে এগোয়, তার দিকে৷