কমিটি বাণিজ্যের ফল ভোগ করছে ছাত্রদল
ডেস্ক ২৪ : রাজপথে এখনো নিরব বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। দলের এই সংকট মুহূর্তে ছাত্রদলের নিরবতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে সংগঠনটির ভূমিকাকে।
রাস্তায় নেমে আসার জন্য বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ দেয়ার পরও রাজপথে সক্রিয় হয়নি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। উল্টো কেন্দ্রীয় প্রথম সারির অনেক নেতাই মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। ফলে তৃণমূলের কর্মীরা যোগাযোগ করতে পারছেন না তাদের সাথে।
সর্বশেষ রাজপথে নেমে আসার জন্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহবানের পরও সাড়া নেই। ভিডিও বার্তায় পাঠানো বক্তব্যে তিনি সব বিভাজন ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন।
এত কিছুর পরও দৃশ্যপটে নেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে রাজপথে দাবানল ছড়ানো এই সংগঠনটি এভাবে মুটিয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারেনি অনেকে।
ছাত্রদলের বর্তমান অবস্থার জন্য অদক্ষ কমিটিকেই দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে কমিটি নিয়ে বাণিজ্য করার কারণে ত্যাগী যোগ্য অনেক নেতাই বাদ পড়েছেন দল থেকে। অনেক ক্ষেত্রে আবার পদ দিতে গিয়ে সমতাও করা হয়নি।
ফলে কমিটি হওয়ার পর থেকেই ভেঙ্গে গেছে হাই কমান্ডের নির্দেশনা। টাকা দিয়ে পদ নেয়ার কারণে রাজপথে ত্যাগ স্বীকার করতে অনীহা নেতাদের। অন্যদিকে সিনিয়রদের দিয়ে কমিটি হওয়ার কারনে জুনিয়ারদের সাথে সমন্বয় করাও সম্ভব হয়নি।
পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেয়ার কারনেও ঝুকি নিয়ে কেউ রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় হচ্ছে না। কমিটি না দেয়ার এক বছর ক্যাম্পাসে প্রবেশের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় কমিটিতে বাণিজ্য করার কারণেও দলের সংকট মুহূর্তে এসব নেতারা রয়েছেন আন্দোলন সংগ্রামের বাহিরে। কেউ কাউকে দোষারোপও করতে পারছেন না।
তবে রাজপথে না থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা ও বিভাগীয় কমিটি এবং ঢাবি কমিটির অনেক নেতাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুকে তাদের আন্দোলন এখনো অব্যহত রেখেছেন।
জানা যায়, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ও হাবিবুর রশিদ হাবিব গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসিরকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কিন্তু নতুন এ দুই নেতাও আন্দোলনের দৃশ্যপটে ছাত্রদলকে হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার হন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবেদ।
পরবর্তীতে ছাত্রদলের এই ক্রান্তিলগ্নে সর্বশেষ দলটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন সহ-সভাপতি ও ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। একের পর এক গ্রেপ্তার হচ্ছেন ঠিকই কিন্তু চিত্র থেকে যাচ্ছে আগের মতোই।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের শীর্ষনেতারা নিজ-নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হওয়ায় ছাত্রদলের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে। ছাত্রনেতারা ঢাবি ক্যাম্পাস বা রাজপথ থেকে গ্রেপ্তার হলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা নতুন উদ্দীপনায় আন্দোলনে নামতে পারত।
উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর ছাত্রদলের সভাপতি জুয়েলকে উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ১৭ নভেম্বর দলটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবকে শান্তিনগরের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তারা দুজন গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের হয়ে কোনও ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ভারপ্রাপ্ত দুই নেতাও পূর্বসূরি জুয়েল-হাবিবের পথেই হেটেছেন। আন্দোলন-সংগ্রাম দূরের কথা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও বন্ধ ছিল।
সবমিলিয়ে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ দায়িত্ব গ্রহণের পর সর্বাত্মক চেষ্টার ঘোষণা দিলেও বর্তমান তার মোবাইল বন্ধ রয়েছে। ফলে দলের নেতাকর্মীরা নির্দেশনা পাচ্ছে না এই মুহুর্তে তাদের কি করা উচিত।