চলে গেলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এক স্বপ্নকার
কুমিল্লা, ২১ নভেম্বর: চলে গেলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম এক স্বপ্নকার রফিকুল ইসলাম। বুধবার রাত বাংলাদেশ সময় ১০টার দিকে কানাডার ভ্যাংকুভারের একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।রফিকুল ইসলামের ভগ্নিপতি কুমিল্লার ব্যবসায়ী সালামত উল্লাহ খান তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে রেখে গেছেন। গত শতকে বাঙালি জাতির অন্যতম অর্জন ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ঘটনা। ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে` আন্তর্জাতিকভাবে পালনের প্রথম ভাবনা আসে কানাডার ভ্যাংকুভারে অবস্থানকারী প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালামের মাথায়। এরই চূড়ান্ত পরিণতিতে ২০০০ সালের ৪ জানুয়ারি ইউনেস্কোর মহাপরিচালক কাইচিরো মাটসুরা এক চিঠিতে ইউনেস্কোর সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালনের আহবান জানান। ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধু মাতৃভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকেই স্বীকৃতি দেয়নি, অমর একুশের শহীদদের আত্মদান থেকে উৎসারিত স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনকেও মর্যাদা দিয়েছে। জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে আমাদের মহিমান্কিত করেছে। বিশ্বের ১৯০টি দেশে এখন প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে। ওই সব দেশের মানুষ জানছে ঢাকার বুকে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে কী ঘটেছিল, কী কারণে রফিক, সালামরা প্রাণ দিয়েছিল। একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রুপ দানে ভূমিকা রাখা একজন রফিকুল ইসলাম। তিনি কুমিল্লার সন্তান। ১৯৫৩ সালের ১১ এপ্রিল কুমিল্লা শহরের উজীর দিঘীর পাড়ে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা আবদুল গণি। মাতা করিমুন্নেসা। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। কুমিল্লা উজীর দিঘীর পাড় হরে কৃষ্ণ স্কুলে তার শিক্ষা জীবন শুরু। ১৯৫৮ সালে কুমিল্লা হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এইচএসসি ও ডিগ্রি পাশ করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। ১৯৭১ সালে তিনি এ কলেজের ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। একাত্তরে ২নং সেক্টরে মুজিব বাহিনীর হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেন। যুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সম্মুখ যুদ্ধে তার ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সাফু শহীদ হন। তিনি দেশে ৭ বছর প্রশিকায় চাকরির পর ১৯৯৫ সালে কানাডায় পাড়ি জমান। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি কানাডায় বসবাস করছিলেন। |