ভারতের সংসদে উঠছে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি – বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফেরত দেয়ার আশ্বাস
সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ৩৮ বছর পর অনুসমর্থন দিতে যাচ্ছে ভারত সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সম্প্রতি ভারত সফরে গেলে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে এ বিষয়ে আশ্বাস দেন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রতিবেদন দিয়ে এ বিষয়ে অবহিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যামামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ক্যাপ্টেন মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহউদ্দিন ভারতে পলাতক থাকলে তাদের হস্তান্তরেরও আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসেইন ভূইঞা সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি’ নামে পরিচিতি ওই চুক্তি ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত হলেও ভারত এতদিন তা বাস্তবায়ন বা অনুসমর্থন করেনি। সাহারা খাতুনের নয়াদিল্লি সফরের সময় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়। এ সময় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, তারা এ চুক্তি অনুসমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় পার্লামেন্টের পরবর্তী অধিবেশনে প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর সরকার চুক্তিতে অনুসমর্থনের উদ্যোগ নেবে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এ চুক্তিতে অনুসমর্থন দিয়ে তা কার্যকর করেছে। এখন ভারত তা কার্যকর করলে দুদেশের মধ্যে বিরাজমান সীমান্ত ও ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি সহজতর হবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে আত্মগোপনে থাকা বঙ্গবন্ধুর দণ্ডিত খুনীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও সে দেশের সরকারের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ভারত সরকার দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করেছেন সাহারা খাতুন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সেনা সদস্য ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে হানা দিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। ওই মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও এ কে এম মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বাকি ৭ জনের মধ্যে মোসলেহউদ্দিন ও আব্দুল মাজেদ বতর্মানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া, আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী ও এম এ রাশেদ চৌধুরীও বিদেশে পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের পরোয়ানাও রয়েছে। দণ্ডিত আব্দুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
গত ২৪ ফেব্র“য়ারি সাহারা খাতুনের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাহারা খাতুন সোমবার মন্ত্রিসভাকে জানান, প্রতিবেশী দুই দেশের স্থলসীমা, জলসীমা, ভিসা প্রক্রিয়া ও মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচল সহজ করা এবং সীমান্তে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে সন্ত্রাস দমন, নারী ও শিশু পাচার রোধ ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়েও। সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানালে ভারত সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বন্ধের পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।