Main Menu

মার্চ : স্বাধীনতা অর্জনের মাস । আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

+100%-
আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি মুসলিম জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। সুদীর্ঘকালের আপসহীন আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।
এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের জনসমুদ্রে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
৭ মার্চ তার এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি মুসলিমরা পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে জাতি উজ্জীবিত হয়ে উঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি মুসলমানরা ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাঙ্খিত মুক্তির লক্ষ্যে।
এর পথ বেয়ে ১৯৭১ সালের ভয়াল ২৫ মার্চের পর বাঙালি মুসলিম জাতির স্বাধীনতা অর্জনের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এরপর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ৪ লক্ষাধিক মা-বোনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার এবং ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের বিজয় অর্জিত হয়। আর বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের এদিন প্রতিবছর যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে গর্জে উঠে উত্তাল জনসমুদ্র। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারী শ্লোগানের উদ্দামতায় বসন্তের ক্ষীপ্র হাওয়ায় সেদিন পত পত করে ওড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খঁচিত লাল-সবুজের পতাকা।
সেদিন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরোহণ করেন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। ফাগুনের সূর্য তখনো মাথার উপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ, তোমার নেতা আমার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে। তিনি তার দরাজ গলায় ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি…।’ এরপর জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার মহান নেতা ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম…।’
মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণ। এই স্বল্প সময়ে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি তার ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে মতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া এবং বিভিন্ন স্থানে হত্যাকা-ের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রীত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করবো। আজো আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলে দিতে চাইÑ আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোন কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।’
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সর্বশেষ দুটি বাক্য, যা পরবর্তীতে বাঙালি মুসলমানদের স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিক-নির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
৭ মার্চের ভাষণের পরদিন অর্থাৎ ৮ মার্চ থেকেই এই ভাষণের নির্দেশনা মুতাবিক বাঙালি মুসলমানরা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সার্বিক প্রস্তুতির কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। চলমান অসহযোগ আন্দোলন ব্যাপকতায় রূপ নেয়। একযোগে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে সংগ্রামের অগ্নিশপথ। বাঙালির সংগ্রামের তোড়ে পাকিস্তানি অপশাসনের ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এ সময় থেকেই অঘোষিতভাবে অবিসংবিদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে চলে আসে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের শাসনভার। এরপর থেকেই বাঙালি মুসলমানরা ক্রমেই মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত হন





Shares