নিজে জানুন, অন্যকে জানান, সচেতনতা বাড়ান
কোরবানির পশু ক্রয়ের আগে জেনে নিন প্রয়োজনীয় তথ্য
দুয়ারে কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। আগামী ২৫ অক্টোবর, ২০১৫ বাংলাদেশে পালিত হবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। চারদিকে প্রস্তুতি চলছে আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার তাকওয়া অর্জনের আয়োজন। বাড়ির ছেলে-বুড়ো সবাই মিলে ছুটবে কোরবানির পশু কিনতে। তবে প্রায়শই কোরবানির পশু নিয়ে আমাদের নানা ধরনের বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়। যেমন – দুষ্টু লোকের পাল্লায় পড়ে অসুস্থ পশু কিনে আনার সেটি কোরবানি দেওয়ার আগেই মারা যাওয়া, পেটে বাচ্চাসহ কোরবানির পশু কিনে আনা, পশুর যত্ন-আত্তি ও কোরবানি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বিভিন্ন কার্যাবলী সহ আরও নানা ধরনের বিপত্তি। কোরবানির পশু কেনার সময় একটু সতর্ক ও কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা থাকলেই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।
সুস্থ পশু চেনার উপায়
পশুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয় এবং নাকের ওপরটা ভেজা ভেজা থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরু সুস্থ। অসুস্থ পশু খাবার খেতে চায় না।
গরুর কুঁজ মোটা ও টানটান থাকলে বুঝতে হবে গরুটি সুস্থ।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কোরবানির পশুকে মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাইয়ে স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত মোটাতাজা করে কোরবানির হাটে নিয়ে আসে। এসব গরু অন্যসব গরুর চাইতে ফোলা থাকে। তাই সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গাভী বা বকনা গরু কেনার সময় একটু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা ক্রয়কৃত পশুটি যদি গর্ভবতী হয় তাহলে কোরবানি হবে না।
দুই বছরের কম বয়সী গরু বা মহিষ এবং ছয় মাসের কম বয়সী ছাগল বা ভেড়া কোরবানির উপযোগী নয়।
ভারত থেকে আসা গরুগুলো অনেকটা পথ অতিক্রম করে আসার ফলে এরা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে দেখে বুঝা যায় না এরা সুস্থ না অসুস্থ। তাই এক্ষেত্রেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে ভারতীয় গরু না কিনে দেশী গরু কেনাই ভালো।
স্বাস্থ্যবান ও আকারের তুলনায় মোটা গরু অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত হয়। তাই এ ধরনের গরু না কেনাই ভালো।
পশুর গায়ে কোনো খত আছে কি-না খেয়াল রাখতে হবে।
শিং ভাঙা, লেজ কাটা, জিহ্বা, ক্ষুর, মুখ, গোড়ালি খত আছে কি-না তা ভালো করে দেখে নিতে হবে।
কোরবানির পশুর যত্ন ::
পশুকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিতে হবে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক গরু সুস্থ রাখতে হলে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি কাচা ঘাস বা পাতা জাতীয় ঘাস, ১২ থেকে ১৫ কেজি খড়, ৩ থেকে ৫ কেজি দানাদার খাদ্য ও পরিমাণমতো পানি দিতে হবে।
একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগল দিনে মোট দেড় থেকে দুই কেজি খাবার খেয়ে থাকে।
আপনি চাইলে অল্প কয়েকদিনেই পশুকে মোটাতাজা করতে পারেন। এজন্য পশুকে মোটাতাজাকরণ খাদ্য খাওয়াতে হবে। এসব খাবার আপনি নিজেই তৈরি করতে পারবেন। যেমন – ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র উপাদানে ১০ কেজি পরিমাণ খড় ছোট করে কেটে নিতে হবে। এর সাথে আড়াই কেজি পরিমাণ পচা গুড়, ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া সার এবং ৫-৬ কেজি পানি নিতে হবে। এবার খড়, পচা গুড়, ইউরিয়া সার একত্রে মিশিয়ে পানির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক গরুকে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন কেজি এসব খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। এর সাথে সাথে প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন – ভুট্টার গুড়া, গম বা যব গুড়া, প্রোটিন ফিশ বা সয়াবিন তেল জাতীয় খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
কোরবানি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে করণীয় ::
যেই স্থানে পশুটি জবাই করবেন সেই স্থানটি আগে থেকেই নির্ধারণ করে স্থানটি ভালো করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে।
পশু কোরবানির জন্য কসাইয়ের প্রয়োজন হবে। তাই আগে থেকেই ভালো মানের কসাই ঠিক করে রাখতে হবে। অদক্ষ কসাই দ্বারা পশু কোরবানি না করাই ভালো।
কোরবানির আগে ও পরে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই আগে থেকেই অতিরিক্ত পানির ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।
প্রয়োজনীয় দা, বটি, ছুড়ি, চাপাতি আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
এ সময় বাড়তি বোল, বালতি, হাঁড়িপাতিলের প্রয়োজন পড়ে। এগুলো সংরক্ষণে রাখুন। গোশত পরিষ্কারের জন্য পরিষ্কার সুতি কাপড়, কাগজ, পলিথিন ব্যাগ, চাটাই, টিস্যু, দড়ি ইত্যাদি সংরক্ষণে রাখুন।
কোরবানি করার আগে পশুকে অতিরিক্ত পানি খাওয়াতে হবে। এতে পশুর চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়।
গোশত মাটিতে না রেখে চাটাই বা পলিথিনের ওপর রাখতে হবে। গোশত বিতরণের জন্য কিছু পলিথিন ব্যাগও আগে থেকেই কিনে রাখুন।
জবাই করার পর সেই স্থান পরিষ্কার করার জন্য ঝাড়– ও ব্লিচিং পাউডার কিনে রাখুন।
যেসব আত্মীয়স্বজনকে গোশত দেবেন, তার একটা তালিকা তৈরি করে নিন। এরপর বাকি সব কাজেরও একটি তালিকা তৈরি করে রাখুন।
যতদ্রুত সম্ভব গোশত বিতরণ করার কাজটি করা যায়, সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। তা না হলে গোশত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
জবাইকৃত পশুর বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। পশুর রক্ত অপসারণের ব্যবস্থা না থাকলে মাটি খুঁড়ে রক্ত অপসারণ করে আবার মাটিচাপা দিন। এসব বিষয়ে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন।
চামড়া সংরক্ষণ করতে সংরক্ষণ কৌশল অবলম্বন করুন।