ভারতের কেরালা অঙ্গরাজ্যে হিন্দুদের মধ্যে এক প্রকার ট্যাক্স বা কর প্রচলিত ছিলো। করটির নাম- ‘স্তনকর’ বা ‘breast tax’
আজ থেকে কয়েকশ’ বছর আগে ভারতের কেরালা অঙ্গরাজ্যে হিন্দুদের মধ্যে এক প্রকার ট্যাক্স বা কর প্রচলিত ছিলো। করটির নাম- ‘স্তনকর’ বা ‘breast tax’। এর আরেকটি নাম মুলাককারাম (mulakkaram)।
স্তনকর বা ব্রেস্টট্যাক্স কি ?
ঐ সময় নিয়ম ছিলো শুধূ ব্রাহ্মণ ব্যতিত অন্য কোন হিন্দু নারী তার স্তনকে ঢেকে রাখতে পারবে না। শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ শ্রেণীর হিন্দু নারীরা তাদের স্তনকে একটুকরো সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পারতো, বাকি হিন্দু শ্রেণীর নারীদেরকে প্রকাশ্যে স্তন উন্মুক্ত করে রাখতে হতো। তবে যদি কোন নারী তার স্তনকে কাপড় দ্বারা আবৃত করতে চাইতো, তবে তাকে স্তনের সাইজের উপর নির্ভর করে ট্যাক্স বা কর দিতে হতো। এই নির্মম করকেই বলা হয় স্তনকর বা ব্রেস্টট্যাক্স।
১৮০৩ সালে নাঙ্গেলী (Nangeli) নামক এক নারী তার স্তনকে আবৃত করে রাখে। যথন গ্রামের ট্যাক্স কালেকটর তার থেকে স্তনকর চাইতে আসে, তখন নালেঙ্গী তা দিতে অস্বীকার করে এবং নিজের দুটি স্তনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে পাতা দিয়ে মুড়ে ট্যাক্স কালেকটরকে দিয়ে দেয়। তখন কাটা স্তন দেখে ট্যাক্স কালেকটর অবাক হয়ে যায়। স্তন কেটে ফেলার কিছুক্ষন পরেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য নাঙ্গেলীর মৃত্যু হয়। স্ত্রীর মৃত্যু শোকে নালেঙ্গীর স্বামীও সাথে সাথে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার পর থেকেই স্তনকর রোহিত হয়।
(সূত্র: ক-https://en.wikipedia.org/wiki/Nangeli, খ-http://goo.gl/cASX7x, গ-http://goo.gl/G7cJcy)
তবে স্তনকর রোহিত হলেও দক্ষিণভারতে নারীদের স্তন আবৃত করার জন্য বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা পর্যন্ত করতে হয়েছে তাদের। ১৯ শতাব্দীর মাঝে এসে যখন কিছু হিন্দু নারী তাদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার দাবি করে, তখন হিন্দু পুরোহিতরা স্পষ্ট করে বলে দেয়, নিচু বর্ণের নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করা ধর্ম বিরোধী। বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৯ সালে দক্ষিণ ভারতে একটি দাঙ্গা সংগঠিত হয়। এই দাঙ্গার উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দু নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার আদায় করা। এই দাঙ্গায় ‘কাপড়ের’ দাঙ্গা হিসেবেও পরিচিত। (সূত্র:https://en.wikipedia.org/wiki/Channar_revolt)
মাঝখান দিয়ে একটু বাড়তি কথা ঢুকাচ্ছি। কিছুদিন আগে এক হিন্দুর স্ট্যাটাসে (https://goo.gl/lyRM3W) দেখছিলাম। সে বলছিলো ঐ সময় মহিশুর (দক্ষিণ ভারতের এলাকা) শাসনকর্তা টিপু সুলতান নাকি তরবারি ভয় দেখিয়ে অনেক হিন্দু নারীকে মুসলিম বানিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। ইতিহাস বলছে, ঐ সময় টিপু সুলতান হিন্দুদের এ জংলী কালচার মোটেও পছন্দ করেননি। তিনি চেয়েছেন এই নগ্নতা বন্ধ হোক। তিনি হিন্দু নারীদের আহবান করেছিলেন- “যদি তোমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো, তবে কাপড় পরার অধিকার পাবে।” এ কথা শুনে হাজার হাজার হিন্দু নারী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলো (http://goo.gl/r7noEm)। অথচ এই ইতিহাসটি এখন বিকৃত করে প্রচার করে হিন্দুরা।
উপরের ঘটনা দ্বারা এটাই প্রকাশ পায়ে যে, ঐ সময় হিন্দুরা ছিলো অ্যামাজন জঙ্গলের জংলীদের মত অসভ্য ও বর্বর। মুসলিম শাসকরা এসে হিন্দুদের সভ্যতা শিক্ষা দেওয়াতে তারা কিছু সভ্যতা শিখতে পেরেছে। এ সম্পর্কে হিন্দু ইতিহাসবিদ সুরজিত দাসগুপ্ত বলে- “ঐ সময় হিন্দু নিম্নবর্ণের লোকদের উর্ধাঙ্গ অনাবৃত রাখতে হত। সে সময় ভারতবর্ষের কেরালাতে অমুক হিন্দু নারী ইসলাম গ্রহণ করেছে এটা বলার প্রয়োজন ছিলো না, বলতে হতো শুধু ‘কুপপায়ামিডুক’ শব্দখানা। এ শব্দখানার অর্থ ‘গায়ে জামা চড়িয়েছে’। (সূত্র: বই-সুরজিত দাসগুপ্তের ‘ভারতবর্ষ ও ইসলাম’, পৃষ্ঠা: ১৩০-১৩১)
সূত্রঃ নয়ন চ্যাটার্জী