Main Menu

নবীনগরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী

[Web-Dorado_Zoom]

নবীনগরে চাঞ্চল্যকর কলেজ শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার জুঁই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও হত্যা রহস্য উদ্‌ঘাটনে ব্যর্থসহ বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। বিশেষ করে জুনের পর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত অর্থাৎ গত চার মাসে একের পরে খুন, চুরি-ডাকাতির ঘটনা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জুঁই লাউর গ্রামের আবুল হাসনাত মেয়ে ও ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ কলেজ থেকে সদ্য এইচএসসি পাস করে নবীনগর সরকারি কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন।

জানা যায়, গত ১৯শে সেপ্টেম্বর ভোরে নিজ ঘর থেকে নিখোঁজ হন জুঁই। পরে দুইদিন পর বাড়ির পাশের পুকুরে স্থানীয় এক ব্যক্তি কচুরিপানা সংগ্রহ করতে গিয়ে একটি ভাসমান লাশ দেখতে পায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে লাশ উদ্ধারের পর নিশ্চিত হওয়া যায় এটি জুঁইয়ের লাশ। পরে হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের দাবিতে গত ২৫শে সেপ্টেম্বর জাকির আহাম্মদ কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা প্রশাসনের কাছে জুঁই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এ ছাড়া উপজেলার সলিমগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে থাকা পুলিশ নির্যাতনে আব্দুল্লাহ (২৭) নামে এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। মৃত আব্দুল্লাহ বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়- গত ২৭শে সেপ্টেম্বর চুরির ঘটনায় পুলিশের হাতে আটকৃত আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন বিকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে ফাঁড়ির পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে তাকে পাঠায়। রাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই ঘটনায় এলাকাই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ফাঁড়ি বন্ধ থাকে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। পরে ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রধান আসামি এসআই মহিউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্তসহ গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া গত ২রা অক্টোবর হত্যা, বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনের একাধিক মামলার আসামি খান সাহেব (৩৮) কে দুইনলা বন্দুকসহ গ্রেপ্তার করেছে নবীনগর পুলিশ। এ ছাড়া গত ২৪শে সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে নবীনগর থানা পুলিশ। তবে ঘটনার রহস্য এখনো উদ্‌ঘাটন হয়নি।

এদিকে, গত ১৫ই জুলাই বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নবীনগরের বিদ্যাকুট ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামে এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। শিশুটির মা জানান, মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে দ্রুত তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করেন। শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা এবং তার মায়ের সঙ্গে আলোচনার পর ১৯শে জুলাই নবীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ২২শে সেপ্টেম্বর বিকালে নবীনগর পৌর সদরের আদালত পাড়ায় বউ সাজ বিউটি পার্লার থেকে বিদেশি পিস্তল, জাল টাকার নোটসহ তিন মহিলাকে গ্রেপ্তার করে নবীনগর পুলিশ।

অন্যদিকে, নবীনগর পৌর সদর পদ্মপাড়ায় মাইন উদ্দিন সওদাগরের বাড়িতে ভাড়াটিয়া প্রবাসী শরীফ মিয়ার বাসায় দুর্বৃত্তরা ঢুকে নগদ ৭ লাখ টাকা ও প্রায় ২ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয় এক নারীকে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে লঞ্চ ঘাট এলাকা থেকে লুট হওয়া টাকার এক লাখ ৪০ হাজার ঢাকাসহ মোহাম্মদ জাকারিয়া ইফতি (২২) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে।

উপজেলার বিটঘর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে গত ১৬ই অক্টোবর গভীর রাতে কুপিয়ে ও জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করা করেছে ওমর হাসান (২৩) নামে এক যুবককে। পুলিশ অভিযুক্ত খাইরুল আমিন নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।

উপজেলার নারী নেত্রী সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশি টহল জোরদারসহ পুলিশকে আরও কঠোর অবস্থানে গিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

নবীনগর থানার ওসি শাহীনূর ইসলাম বলেন, জুঁই হত্যাসহ প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চলছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিটি ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) পিয়াস বাসক জানান, থানায় জনবল সীমিত হলেও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে। চুরি-ছিনতাই বন্ধে টহল জোরদার করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।






Shares