খালে দোকান বরাদ্দ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন নবীনগরের নাটঘর ইউপি চেয়ারম্যান
বিশেষ প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে খাল দখল করে দোকান বরাদ্দ দিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এই কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এই ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামী লীগের নেতারা।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০০৮ সালে উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িঘর বাজারের পাশে একটি খাল কিছু স্বার্থবাদী ভরাট করে ফেলে। খালটি ভরাটের পর সরকারী ভূমি অফিসের মাধ্যমে প্যারিফেরী করে দখলে নিয়ে দোকান তৈরি করেন। পানি নিষ্কাশনের একমাত্র সরকারী খালটি ভরাট করে ফেলায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি কিছু মানুষের কাছ থেকে দোকান ভিটি বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামানের বড় ভাই ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে এরশাদুল হক লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। গত বছর প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয় এরশাদ। এর আগে, ২০০৯ সালে লীজকারী ও গ্রামের জনসাধারন মানুষের সাথে একটি ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয় এবং সেই ঝগড়ায় তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান নির্মম ভাবে নিহত হন। এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই জায়গা বরাদ্দকে কেন্দ্র করে আরও ৪টি খুনের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মরহুম ওয়াহেদ মিয়া, মরহুম জজ মিয়া, মরহুম মলাই মিয়া ও মরহুম আব্দুর রশিদ। এরই প্রেক্ষিতে খালের উপর দোকান লীজটি স্থগিত করা হয়। বিগত একমাস আগে সেই দোকান গুলো এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জমান নিজেই সেই জায়গায় দোকান বরাদ্দ দেওয়া শুরু করেছেন। তিনি প্রতি দোকান থেকে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে নিচ্ছেন। ১২০টি দোকান ভিটি থেকে প্রায় দেড় হতে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব, তহশিলদার, এসিল্যান্ড ও ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের নেতৃত্বে বরাদ্দ দিচ্ছেন। যাহারা পুর্বে দখলে ছিল এবং লীজ প্রাপ্তদেরকে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানের নিজস্ব লোকজনকে লীজ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এরফলে আবারও কুড়িঘর গ্রামে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। এনিয়ে যে কোন সময় সংঘর্ষ হতে পারে।
এই বিষয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক বলেন, এই জায়গাটি রেকর্ডে খাল ছিল। পরে এটি ভরাট করে লীজ দেওয়া হয়। সেই লীজের তালিকায় আমার নাম রয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি বার বার বলেছি জায়গাটি বুঝিয়ে দিতে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেই জায়গা আমাকে দেওয়া হয়নি।
নাটঘর ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল হক বলেন, এই খালটি সরাসরি তিতাস নদীতে গিয়েছে। কোন জায়গায় ১০০ফিট বা কোন জায়গায় ৫০ফিট প্রসস্থ ছিল। খালটি স্থানীয়রা ভরাট করে ফেলে। এখন এই ভূমি অফিসের নায়েব জায়গা কিভাবে লীজ দিয়েছে আমরা জানি না। চেয়ারম্যান ও নায়েবের মাধ্যমে সামনের দোকান ১লাখ ২০ হাজার ও পেছনের দোকান এক লাখ টাকা করে নিচ্ছেন।
কুড়িঘর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য খোকন মিয়া বলেন, কিভাবে দোকানের জায়গা বরাদ্দ পাচ্ছে, তা জানি না। চেয়ারম্যান দোকান গুলো ভাগবাটোয়ারা করছেন।
জালাল উদ্দিন নামের একজন বলেন, ২০০৯ সালে টাকা নিয়ে লীজ পেয়েছি। এর কাগজপত্রও আছে। কিন্তু বিগত ১৪ বছরেও আমি কোন জায়গা বা দোকান পাইনি। স্থানীয় আবু স্যামা, জাহের মিয়া, শিরু মিয়াসহ কয়েকজন বৃদ্ধ জানান, আমরা বর্তমান চেয়ারম্যান আক্তারের প্রয়াত ভাই এরশাদকে টাকা দিয়েছি। লীজের তালিকায় আমাদের নামও আছে। কিন্তু দোকান বরাদ্দ দেয়নি। নতুন করে চেয়ারম্যান কি যেন করছে, সবার কাছ থেকে সে লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে। আর আগে যাদের দোকান ছিল তাদের দোকান বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করেছে। কিন্তু এখন আমাদের দোকান দিচ্ছে না।
মোবারক হোসেন নামের এক ফার্মেসির মালিক বলেন, চেয়ারম্যানের কাছে দোকান চেয়েছিলাম, তিনি দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন। খুশি আমি তাকে টাকা দিয়েছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি। আগে যারা লীজ পেয়েছেন তারাই দোকান করছেন। আমি শুধু বিষয়টি সমন্বয় করছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের এমপি এবাদুল করিম বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমি ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে ঘটনা দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এই মার্কেট দখলকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে এক ইউপি চেয়ারম্যান সহ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আমরা চাই না এসব বিষয় নিয়ে যেন বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক। বেআইনি ভাবে দেশের জন্য ক্ষতিকর এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তা করতে দিব না।’