একজন হ্যাকার হামজা বেনডেল্লাজের গল্প
হ্যাকিং জগতের রবিনহুড খ্যাত হ্যাকার হামজা বেনডেল্লাজের সাথে।তিনি হ্যাকিং বিশ্বে “BX1” নামে পরিচিত।
হামজা বেনডেল্লাজ কি একজন হ্যাকিং জগতের নায়ক নাকি শুধুই একজন সাইবার অপরাধী?
হামজা বেনডেল্লাজ SpyEye কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহার করে অমেরিকান ব্যাংক হতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার হ্যাক করে এবং ব্যাংক হতে হ্যাক কৃত সব অর্থ তিনি অসহায় দরিদ্র ফিলিস্তিনদের বিলিয়ে দেন। এজন্য তিনি হ্যাকিং জগতের রবিনহুড নামে সবার কাছে পরিচিত।এখন এটা আপনার চিন্তা ভাবনার উপর নির্ভর করে যে, হামজা বেনডেল্লাজ কি আপনার কাছে রবিন হুড নাকি শুধুই একজন সাইবার অপরাধী?
হামজা বেনডেল্লাজ এবং রাশিয়ান কোডফেন্ডেট কে SpyEye কম্পিউটার ভাইরাস ব্যবহার এবং অমেরিকান ব্যাংক হতে মিলিয়ন ডলার চুরি করার জন্য দণ্ডিত করা হয়।হামজা বেনডেল্লাজ প্রথম চিহ্নিত হন যখন তিনি ৮,৫০০ ডলারে SpyEye ভাইরাসের একটি কপি আমেরিকান আন্ডার-কভার অফিসারের কাছে বিক্রি করে। পরে তাকে 2013 সালে থাইল্যান্ডে একটি এয়ারপোর্ট হতে গ্রেফতার হয় এবং মার্কিন প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
২৭ বছর বয়সী আলজেরিয়ার কম্পিউটার বিজ্ঞানে এ স্নাতকের বিরুদ্ধে ২১৭ টির বেশী আমেরিকান ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা চুরি করার অভিযোগ করা হয়। ব্যাংক জালিয়াতি, এবং অন্যান্য অভিযোগের জন্য তিনি ১৭ বছরের কারাদণ্ড এবং এবং ২৪ মিলিয়ন ডলার জরিমানার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
হামজা বেনডেল্লাজের নিযুক্ত আইনজীবী আটলান্টা জে এল স্ট্রংওয়াটার এক সাক্ষাতকারে আল জাজিরাকে বলেন যে তার ক্লায়েন্ট তার এ কর্মের জন্য যেকোনো শাস্তি গ্রহণের জন্য প্রস্তুত।
তাঁর হ্যাক কৃত অর্থের পরিমাণ টাকার অংকে হিসাব করলে ১০০ মিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করা হয়। হ্যাক কৃত সব অর্থ তিনি অসহায় দরিদ্র ফিলিস্তিনদের বিলিয়ে দেন।
হামজার কারাদণ্ড এবং মৃত্যুদণ্ড
তার বিরুদ্ধে আনিত আভিযোগের শাস্তি হিসেবে তার মৃত্যুদণ্ডের গুজব চারদিকে ছড়িয়ে পরে, তার এক অনুসারী @Hassan_JBr এ খবর শুনতে পেয়ে টুইটার টুইট করেন যে: “Algerian hero is 1/10 most dangerous hackers. Hacked 217 banks, sent $280,000,000 to Palestine. His sentence? death.”
তিনি একই টুইট ৪,৫০০ বার করেন।
এমনকি আলজেরিয়াই মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোয়ান পোলাসচিক, ফরাসি ভাষায় টুইট করেন যে “কম্পিউটার অপরাধের জন্য তাদের রাজধানীতে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয় না”
মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, হামজা বেনডেল্লাজকে তারা শাস্তির আওতায় এনেছেন সেহেতু তারা তার অপরাধের ইতি টেনেছেন।এবং সে চার্জের সঙ্গে যুক্ত করে এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এফবিআই উপপরিচালক mark Giuliano বলেন,অপরাধীদের,বাণিজ্যিকভাবে ম্যালওয়্যার ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষমতা বন্ধ করার জন্য এটা আমাদের প্রচেষ্টার একটি মাইলফলক।হামজা বেনডেল্লাজের তৈরি ম্যালওয়্যারটি দ্বারা কোন মার্কিন নাগরিক ব্যক্তিগতভাবে সনাক্তকরণ-যোগ্য তথ্য এবং বিশ্বজুড়ে যেকোনো ব্যক্তির থেকে তথ্য চুরি করার জন্য ব্যবহার করা হত।
হামজা বেনডেল্লাজ অপরাধে জর্জরিত হওয়া সত্ত্বেও সমর্থকেরা এয়ার ফ্রান্স এবং ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট হ্যাক চালিয়ে তার মুক্তির জন্য হ্যাশট্যাগে #FreeHamzaBendellaj এবং #FreePalestine লিখে তার মুক্তির জন্য আহ্বান জানায়।
Cyberdeterrence ও cyberwar লেখক মার্টিন লিবিকির মতে, এই ধরনের (হামজা বেনডেল্লাজ)অনলাইনে হ্যাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অনেক বেশী দীর্ঘ হতে হবে।
“সাইবার অপরাধ এখনও একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাব তাদের জন্য যারা চালাক এবং যারা ঝুঁকিকে উপেক্ষা করে এবং তাদের জন্য যারা এটির সাথে পরিচিত। তিনি আল জাজিরাকে বলেন,”এই দীর্ঘ, সাইবার অপরাধ থেকে লোকসান সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনার জন্য যে আইন রয়েছে কম্পিউটিং আর্কিটেকচার এবং ব্যাংকিং এবং অন্যান্য অর্থ-হ্যান্ডলিং শিল্পও এর অওতাভূক্ত। এ শিল্পের লোকসান এড়াতে আর্কিটেকচারের মধ্যে তৈরি কাঠামোর উপর নির্ভর করতে হবে”।
ইন্টারনেটে হামজা বেনডেল্লাজের মৃত্যুর খবর নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পরে। এবং একটি ছবি ভাইরালও হয়ে যায়।ছবিতে দেখা যায় হামজা বেনডেল্লাজের সাদৃশ্য একজনের গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলছে। এতে করে তার সমর্থকদের মাঝে শোক ছড়িয়ে পড়ে।অনেকের মতে ছবিটি ফটোশপের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে আবার অনেকে বলছেন ছবির লোকটি হামজা বেনডেল্লাজ নয়। তবে এখনো প্রশ্ন থেকে যায় যে হামজা বেনডেল্লাজের কি জীবিত নাকি মৃত? এবং জীবিত হলে উনি এখন কোথায়?