রিয়াদের বাথা,হারা বিদেশে এক টুকরো বাংলাদেশ
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের হারা এবং বাথার নাম শুনে নাই বাংলাদেশে এমন লোক খুব কমই আছে বলেই আমার ধারনা । ঢাকা হোটেল,গাজীপুর সুপার মার্কেট,কাওরান বাজার সবজী মার্কেট ,ফেনী গলি বাংলায় লেখা এই সাইনবোর্ডগুলো দেখলেই মনটা জুড়িয়ে যায় । বাংলাদেশ থেকে ছয় হাজার মেইল দূরে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের প্রানকেন্দ্র বাথাতে ঢুকলেই মনে হয় এ যেন একটুকরো বাংলাদেশ । কি নাই এখানে ? বাংলাদেশের গ্রাম গঞ্জের হাট বাজারের সকল কিছুই আজ পাওয়া যায় এই বাথাতে । বাংলাদেশ থেকে কার্গো বিমানে প্রতিদিন আসছে হাজার হাজার টন সবুজ শাক-সবজী । শাক-সবজীর সাথে আসছে নানান রকম মৌসুমী ফল । সপ্তাহের প্রতিদিনতো বটেই বিশেষ করে বৃহঃস্পতিবার আর শুক্রবার এখানে বসে বাংলাদেশি মানুষের মিলনমেলা । রিয়ার নগরীর আশ-পাশ ছাড়াও রিয়াদের বাহির থেকেও মিলন মেলায় যোগ দিতে আসে হাজার হাজার বাংলাদেশি । গঞ্জের মতো অনেকেই আসেন সারা সপ্তাহের বাজারটা সেরে নিতে আবার কেউ আসেন আত্নীয় বা বন্ধুদের সাথে দেখা করতে ।
বৃহঃস্প্রতি আর শুক্রবার এখানে মানুষের পদচারনা এতটা বৃব্ধি পায় যে খাবার হোটেল গুলোতে বসার জায়গা না দিতে পেরে দোকানীরা বারান্দায় চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা করে বসার জন্য । অলি গলিতে তিল ধারনের জায়গা থাকেনা । সপ্তাহের এই দুইদিন বাথা বাংলা মার্কেটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার চিন্তা করলেই ঘা বিজে যায় ঘামে । ঐদিনে সেখানকার গলি দিয়ে গাড়ী ঢোকানো হয়ে যায় অঘোষিত নিষিব্ধ । এখানে বাংলাদেশিদের উদ্যোগে আনা হয় বাংলাদেশি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এবং বিভিন্ন সাপ্তাহিক বা মাসিক ম্যাগাজিন । বাংলাদেশের নামি-দামী কনজ্যুমার সামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান যেমন স্কয়ার,বিডি,প্রান ইত্যাদির পন্য মন কেড়েছে আরব-অনারব সবার । বাংলাদেশে ইলিশের সংকট থাকলেও এখানে থাইল্যান্ডের ইলিশের প্যাকেটের গাঁয়ে “চাদপুরের ইলিশে” ষ্টিকার লাগিয়ে সংকট কাটানোর চেষ্টা চলছে জুরে সুরে । বাংলাদেশি কচুর লতা থেকে শুরু করে সকল প্রকার তাজা সবজি পাওয়া যায় নিত্যদিন ।
সৌদি আরবে জনসম্মুখে পান খাওয়া নিষিব্ধ থাকলেও টেবিলের উপর পাষ্টিকের বোলের উপর পান আর সাথে নানান পদের মসলা সাজিয়ে পান বিক্রি চলছে দেদারছে । অনেকেই এখান থেকে পাইকারী পান কিনে নিয়ে রিয়াদের বিভিন্ন অঞ্চল গড়ে উঠা বাংলাদেশি সুপারমার্কেট গুলোতে বিক্রি করছে । তার পাশেই আরেকজন বসে আছেন ঝাল মুড়ি বিক্রি করতে । বিনোদন প্রিয় প্রবাসীদের চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে এখানে বাংলাদেশিদের মালিকানায় গড়ে উঠেছে অডিও-ভিডিও সিডি,ভিসিডি ক্যাসের দোকান । বাংলাদেশি মার্কেটে বাংলাদেশি কারিগরদের দ্বারা তৈরী মক্কা সুইটস এর মিষ্টি জয় করেছে বাংলাদেশি ছাড়াও অন্যান্য দেশের মানুষের মন ।
বাংলাদেশের জেলা ভিত্তিক বিভিন্ন সমবায় সমিতি,আর্থসামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত মিটিংগুলো হোটেলগুলোতেই সম্পন্ন করা হয় বেশি । গনতান্ত্রিক দেশের মানুষ গনতন্ত্র চর্চা করবেনা তা কি হয় ? হোক সেটা প্রবাস । কায়েম থাকুক সেখানে রাজতন্ত্র । শিকড়ের টান কখনোই ভুলা যায়না । বলতে গেলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর রিয়াদের প্রবাসী শাখাগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এই বাথা থেকেই । রাজনৈতিক হরতাল,মিছিল আর সংঘর্ষ এখানে না থাকলেও এখানে আছে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে লাঠি মিছিল আর সংঘর্ষের মতো ক্ষতিকর কর্মকান্ড লক্ষ করা যায় মাঝে মধ্যেই । এই গত পরশু দিনও চোখের সামনে ঘটে গেলো এমনি একটি মহড়া । এখানে রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি মিছিল আর সংঘর্ষ নাকরতে পারার ইচ্ছাটা পুরন করা হয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বকৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে । এ যেন দুধের স্বাদ গোলে মিটানোর মতো অবস্থা । সবচেয়ে আতংকের বিষয় হচ্ছে এই বাংলা মার্কেগুলোতে বড় বড় সুনাম থাকলেও এখানে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট অপকর্মগুলোর দায়ভার নিতে হয় পুরো বাংলাদেশি নাগরিকদের । আমাদের পার্শবর্তী দেশের একশ্রেণীর স্বার্থান্নেসী মহল বাংলাদেশিদেরকে বিদেশের মাটিতে হেয় আর অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করতে সদা প্রস্তুত । বাংলাদেশি শ্রমিকদের একেবারে ছোট ছোট দোষ-ক্রুটি গুলিকে রঙ মাখিয়ে হলুদ সাংবাদিকতার মাধ্যেমে স্থানীতভাবে পত্রিকায় প্রকাশ করে সৌদি প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশিদেরকে ছোট করার চেষ্টা চলছে মরন পর । পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক,প্রিন্ট এবং অনলাইন মিডিয়াগুলো বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ধরনের সফলতা,প্রবাসে বিভিন্ন সফল ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সম্মানজনক কাজগুলোকে সৌদি সরকার এবং বাংলাদেশের সরকারের সামনে উপস্থাপন করতে পারলে বাংলাদেশিদের বদনাম ঘুছানো সম্ভব । আর তা করতে সক্ষম হলেই বিভিন্ন দেশে আগ্রহী হবে বাংলাদেশি শ্রমিক নিতে এবং তখনি বাংলাদেশ পাবে বিশাল অংকের রেমিটেন্স । |