‘মা’ হওয়া এত সহজ নয়
খুজিস্তা নূর-ই নাহারীন মুন্নী:‘মা’ হওয়া এত সহজ নয়। তবুও প্রতিটি নারী `মা’ ডাকটি শুনার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। কারণ এই একটি মাত্র সম্পর্ক যেখানে স্বার্থের ঘোর টোপ নেই, নিষেধের বেড়াজাল নেই। খোলা হাওয়ার মত একরাশ স্নিগ্ধতা, ভালোলাগা, আদর আর মমতা। সৃষ্টিকর্তার পর যে ডাকটি বুকের ভিতর আনচান করে তা হচ্ছে মা’। যে কোন ভালো লাগায়, অর্জনে, অসুখে বিপদে কেবল একজনই আশ্রয়, মা’।
সন্তান যত কুৎসিত কদাকার অসুস্থই হোক মায়ের কাছে সে আদরের, মমতার, সাত রাজার ধন। কারণ সে মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ভীষণ আরাধ্য একজন। মা’ কত কষ্ট করে একটি শিশুর জন্ম দেয় কিন্তু সন্তানের মুখ দেখা মাত্র কষ্ট ভুলে মুহূর্তেই বুকে তুলে নেয়। কত সাধনায়, কত যত্নে তাকে লালন- পালন করে। সন্তান কেবল মায়ের শরীরের অংশ নয় পুরো হৃদয়টা জুড়েই সে। তাই একমাত্র মা-ই পারে সমস্ত স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে সুখ দুঃখ দূরে সরিয়ে রেখে অহর্নিশ সন্তানের মঙ্গল কামনায় দিন যাপন করতে। কারণ পৃথিবীর সবটুকু সুখ, পাওয়া আহরণ করে সে নিজের সন্তানকে দিতে চায়। একমাত্র সন্তানকে ঘিরেই তাঁর দিনযাপন, স্বপ্ন, সুখ, আনন্দ।
সন্তানের চোখে প্রতিজন মা’ অপরূপা, সুন্দরী। কারণ মায়ের কাছ থেকে পাওয়া মমত্ববোধ, আদর, ভালবাসার রঙ যে ভীষণ মিষ্টি আর সুন্দর হয় । হয়তো মা’ চোখে ভালো দেখতে পায় না, ভালো করে কথা বলতে পারে না, বয়সের ভারে নুজ্জ প্রায়, বালি রেখায় মুখ, হাত, পা সবকিছুই বিবর্ণ বিশ্রী । কিন্তু তাতে কি, তিনি তো আমার মা’, যিনি নিজের দুঃখ ভুলে আমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন, আশায় বুক বেঁধেছেন, রাতের পর রাত জেগে অসুস্থ আমায় সেবা- যত্ন করে সুস্থ করে তুলেছেন। পরীক্ষার রাতে রাত জেগে জেগে সঙ্গ দিয়েছেন, সাহস যুগিয়েছেন। জায়নামাজে দুহাত তুলে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনায় আমার সাফল্য কামনায় নিমগ্ন থেকেছেন। নিজের আনন্দ উৎসব ধূলিসাৎ করে আমায় সুখ দিতে চেয়েছেন। এই সেই মা’, যিনি সন্তানের মঙ্গল কামনায়, সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে নিজেকে সুখ আর স্বাচ্ছন্দ্য থেকে বঞ্চিত করেছেন। এই সেই মা যে সন্তানের মুখ পানে চেয়ে নিজের শত বেদনা সয়েছেন, কত না বলা কথা,কত অশ্রু, কত অভিমান সংগোপনে আড়াল করে রেখেছেন। এই সেই মা যিনি নিজেকে নিঃশেষ করে সন্তানকে পরিপূর্ণ করতে চেয়েছেন।
হতে পারে আমার মা’ দেখতে সুন্দরী নয়, স্মার্ট নয়, সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে জানে না, বড্ড বেশী আটপৌরে সাদামাটা,সেকেলে, অনেক বেশী বুদ্ধিমানও নন কিন্তু তিনি আমার গর্ভ ধারিণী মা’ । তাঁর সমস্ত বিসর্জন আমাকে মানুষ করার পেছনে। অথবা অন্য ভাবে বলতে গেলে আমার সমস্ত অর্জন কেবলই তাঁর পরিশ্রম, আত্মত্যাগ, বিসর্জনের ফলশ্রুতিতে । অতএব আমার সমস্ত প্রশংসা, প্রাপ্তি, অর্জন কেবলই মা- এর জন্য, মা’ এর করতলে।
জীবনে মা’কে কখনও কষ্ট দেওয়া যাবে না, অবহেলা করা যাবে না, অপমানিত হতে দেওয়া যাবে না, মা’ এর অপারগতা নিয়ে লজ্জিত হওয়া যাবে না। কারণ মা’ এর স্থান সবার উপড়ে । মা’ তুমি যেমনই হও, তোমার জন্যই আজকের আমি। তোমায় নিয়ে গর্বিত আমি, সেলাম তোমায় ।