প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে জঙ্গি হবার প্রবণতা বেশি কেন? একটি মুক্ত চিন্তা।
চিন্তিত নিরন্তর :: আজ সকাল থেকেই অফিসে প্রায় সবাই বলাবলি করছিল, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জঙ্গিদের আস্তানা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঢালাও ভাবে এ ধরনের কথা মেনে নেয়া যায় না। আবার অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো এ ধরনের ঘটনার জম্ম দিয়েছে এমনটা নেই বললেই চলে।
একটা সময় ছিল যখন এ দেশে জঙ্গিবাদের আস্তানা হিসেবে মনে করা হত মাদ্রাসাগুলোকে। এখনো তাই মনে করা হয়। এ ধারনার পেছনে যুক্তিযুক্ত কারণ অবশ্যই আছে। পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে বোমা হামলা দিয়ে এদেশে যে উম্মুক্ত জঙ্গিবাদ শুরু হয়েছিল, সেটা কওমি মাদ্রাসা পন্থী হুজি গ্রুপ এর দায় এড়াতে পারেনা। কিন্তু সময় বদলের সাথে সাথে অতি উচ্চবিত্ত, শিক্ষিত শ্রেনীর মধ্যে জঙ্গি বাদের যে প্রবনতা বেড়ে চলছে তা সকলকেই ভাবিয়ে তুলেছে। গুলশানের রেস্তোরাঁয় যারা হামলা করেছে , সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও মিডিয়াতে আমরা তাদের শুধু মুখায়ব দেখে আশ্চর্য হচ্ছি যে এই ছেলেগুলো কিভাবে এমন নোংরা কাজের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে?
শিক্ষিত শ্রেনীর মানুষদের জঙ্গি বাদের সাথে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা নতুন নয়। সারা পৃথিবীতেই উচ্চশিক্ষিত ও টেকনোলজির ব্যবহার খুব ভাল জানে এমন মানুষেরাই জঙ্গি বাদের সাথে জড়িত। বিভিন্ন ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণিত। তবে আমাদের দেশে এর শুরুটা সাধারন লোকদের মাধ্যমে শুরু হলেও , দিনকে দিন তা উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে। পত্রিকার পাতায় প্রায়ই হিজবুত তাহরীর , আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও অনান্য নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সাথে ছাত্রদের জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চলে আসে। কিছু বখে যাওয়া ছাত্রদের জন্য নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মত প্রতিষ্ঠান কলঙ্কিত হচ্ছে তা মানা যায়না। কিন্তু কেন এরা বখে যাচ্ছে ? অর্থের অভাব নেই, পারিবারিক শিক্ষাও রক্ষনশীল না। তারপরেও কেন এরা এমন কাজে জড়াচ্ছে? এমন প্রশ্ন এখন সবার মনে।
ভাগ্যিস দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছেলেরা এ ধরনের কাজে জড়াচ্ছে না। নইলে এদেশের জঙ্গিবাদ পাকিস্তানের চাইতেও ভয়াবহ হত। পাবলিক ভার্সিটির ছাত্রদের এমন কিছু করার প্রবনতা কম কেন তা একটু ভাবলেই বোঝা যায়।
পাবলিক ভার্সিটিতে ছত্ররা উম্নুক্ত রাজনীতি করার সুযোগ পায়। যারা রাজনীতি না করেও তারাও নানা কারণে রাজনীতি নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়। যার কারনে উশৃংখল ছেলেরা ক্যাডার ভিত্তিক রাজনিতিতে জড়াবার সুযোগ পায়। এটা ধ্বংসাত্মক হলেও এর উত্তাপ ভার্সিটির গন্ডিতেই সিমাবদ্ধ। অন্যদিকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে রাজনীতি চর্চা একেবারেই কম। এটা সেশন জট থেকে মুক্তি দিলেও দেশকে নিয়ে ভাববার সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। রগচটে স্বভাবের ছেলেরা জঙ্গি বাদে জড়িয়ে পড়ছে। এমন অবস্থার পেছনে আরেকটা কারণ হচ্ছে, পড়াশুনার চাপ কম থাকা। পাবলিক গুলোতে পড়াশুনায় অপেক্ষাকৃত বেশি চাপ দেয়া হয়, এতে ছাত্ররা অন্যদিকে ভাববার সুযোগ পায়না।
সাধারণত নর্থসাউথ বিশ্ব বিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠানে উচ্চবিত্তদের ছেলে মেয়েরাই পড়ার সুযোগ পায়। এদের আর্থিক সংকট নেই বললেই চলে। বর্তমান সময়ের জঙ্গিবাদে অর্থ সবচেয়ে বড় নিয়ামক। যেখানে পাবলিক ভার্সিটি বা ন্যাশনাল ভার্সিটির ছাত্রদের অর্থের অভাব বেশ। উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরা বাবা মায়ের প্রতক্ষ্য “টেক কেয়ার” থেকে বঞ্চিত থাকে। অনেক পরিবারেই বাবা মা উভয়েই কর্ম ব্যস্ত থাকায় তা সম্ভব হয়ে উঠেনা। তাই বাবা মায়ের চোখের আড়ালেই সন্তানের এমন কুকর্মে জড়িয়ে পরা সম্ভব হয়। আধুনিক ছেলেদের এমনটা হবার পেছনে পারিবারিক শিক্ষাটা অনেক বড় কারণ। ধর্মিয় মূল্যবোধ থাকলে নিষিদ্ধ মাসে এমন রক্তপাত হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
আমরা যে যাই ভাবিনা কেন একটু সচেতন হলেই এমন কুকর্ম থেকে আমাদের সমাজের শিক্ষিত শ্রেনীকে দুরে রাখা সম্ভব। জংগিবাদ কোন প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি নয়। এটা বহু আগে থেকেই মানুষকে ভাবিয়ে যাচ্ছে।