Main Menu

সামান্য কমছে জ্বালানি তেলের দাম, ভোক্তা উপকার কতোটুকু?

+100%-

Raza-220160409021438জ্বালানি তেল নিয়ে তেলেসমাতি অব্যাহত আছে, জনগণও সইছে সেই জ্বালা। অনেকদিন ধরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে এসে ঠেকলেও সরকার দাম কমায়নি। বাংলাদেশের মানুষ সর্বোচ্চ দামেই তেল কিনছে।

হঠাৎ করে সরকার জানালো তিন ধাপে ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের দাম কমানো হবে।  এর মধ্যে প্রথম ধাপে কমানো হবে প্রতি লিটারে ১০ টাকা। তবে এর মধ্যে জানা গেলো ১০ টাকা করে নয়, চার থেকে দশ টাকা করে কমানো হবে।

এই যে সামান্য কমছে তার সুফলও আসলে সাধারণ জনগণ পাবে না। তেলের দাম কমানোর সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনের ভাড়াও কমানো হবে এটাই প্রত্যাশা। কিন্তু মনে হচ্ছে তেলের দাম কমানোর এই পুরো সুবিধাটাই কব্জা করবেন পরিবহন মালিকরা। যখন তেলের দাম বাড়ে তখন এক মুহূর্ত লাগে না ভাড়া বাড়াতে। কমলে নানা অজুহাত। পরিবহন মালিকরা গাড়ির যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য খরচ বাড়ার বিষয়গুলো সামনে এনে এখনকার ভাড়া বহাল রাখতে চাচ্ছেন। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ভাড়া বাড়ে। কিন্তু তেলের দাম কমলে ভাড়া আর কমে না। এই দুর্বলতা সত্যিকারভাবেই সরকারের, জনগণের নয়।

গণপরিবহন খাতের ভাড়া নির্ধারণে সরকারের একটি ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি রয়েছে। তারা কি করে তা বলা কঠিন। সহজে শুধু এটুকু বোঝা যায় যে যাত্রী কল্যাণের বিষয়টি সবসময় উপেক্ষিত। আমাদের গণপরিবহন খাতের ভাড়া নির্ধারণ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ নয়। গণপরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত বাড়তি ভাড়া আদায়সহ অন্যান্য দুষ্কর্ম করলেও তা দেখার ও প্রতিকারের কেউ নেই।

সামগ্রিকভাবেই জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে সরকারের অবস্থান জনবান্ধব নয়। জ্বালানি তেলের দাম এক বছর আগে যেখানে ব্যারেল প্রতি ছিল ১০৩ ডলার, সেখানে তা নামতে নামতে এখন ৩০ এর ঘরে। ২০০৯ সালের পর জ্বালানি তেলের দাম কখনও এতো কমেনি। এবং বিশ্ব পরিস্থিতি এমন ধারণাই দিচ্ছে যে খুব শিগগির আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম আর বাড়ছে না। বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের এখনকার দাম বিগত ১১ বছরের সর্বনিম্ন।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম টানা দুই বছর ধরে নামছে। আর এ সুযোগে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) আগের দীর্ঘ সময়ের ২৯ হাজার কোটি টাকা দেনা মিটিয়েও শুধু গত অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লাভ দেখাচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বিপিসির মুনাফার পরিমাণ এ বছর আরও বাড়বে। সরকার হয়তো এতে তৃপ্তির ঢেকুড় তুলবেন, কিন্তু জনগণের পকেট থেকে যেভাবে পয়সা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক দেখানো হলো, তা বিরল।

জনগণ জ্বালানি তেল কিনছে উচ্চমূল্যে। এতে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়েছে, কৃষি উৎপাদনে খরচ বেড়েছে, আর শিল্পে পড়েছে বিরূপ প্রভাব। বিপিসি নামের একটি দুর্নীতিগ্রস্ত ও অদক্ষ প্রতিষ্ঠানকে লাভের মুখ দেখাতে কৃষি থেকে শুরু করে শিল্প উৎপাদনসহ সাধারণ জনগণকে চাপের মধ্যে রাখা বিস্ময়কর।

এক সময় বলা হতো জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে তা পাচার হয়ে ভারতে চলে যাবে, কারণ সেখানে তা বেশি। কিন্তু এখন ভারতে জ্বালানি তেলের দাম একেবারেই দরিদ্র মানুষের নাগালে চলে এসেছে, তাহলে তা কমানো হবে না কেন?

এক সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে লাভবান করতে দাম কমছে না, অন্যদিকে বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনে বিপদে আছে আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পিডিবির তেলভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে উচ্চমূল্যে কেনা তেল দিয়ে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পিডিবি লোকসানে পড়ছে, যা পুষিয়ে নিতে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সমন্বয় করতে হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের দাম কমলে কৃষি, পরিবহন ও সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলো স্বস্তি পাবে। কৃষিতে উৎপাদন ব্যয় কমে আসতো। কারণ দেশে এখনো তেলচালিত সেচ পাম্পের সংখ্যাই বেশি। তেলের দাম কমানো গেলে কৃষি ও শিল্পপণ্য পরিবহনের ভাড়াও কমে আসতো। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয়ও কম পড়তো। বিদ্যুতের দাম কমানো গেলে শিল্প উৎপাদন ব্যয় কমে আসতো। এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়তো সামগ্রিক অর্থনীতিতে ও ব্যবসাক্ষেত্রে।

গোল্ডম্যান স্যাক্স প্রকাশিত পূর্ভাভাষে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারলপ্রতি ৫০ ডলারের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ‘কমোডিটি প্রাইস ইনডেক্স’ বলছে, এ বছর ক্রুড অয়েলের দাম গড়ে ৫৭.৫০ ডলার এবং ২০২০ সাল নাগাদ ৭১.৯০ ডলার হবে। দেশে এখন গড়ে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল। এক লাখ ২৫ হাজার টন অকটেন আর এক লাখ ৪০ হাজার টন পেট্রলের ব্যবহার রয়েছে। দেশে জ্বালানি তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ খাতে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিবহন খাতে। অবশিষ্ট তেল ব্যবহৃত হয় কৃষি, শিল্প, গৃহস্থালি ও অন্যান্য খাতে।

আন্তর্জাতিক বাজার বিবেচনা করে দেশের বাজারে তেলের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব। ভারতে এবার যে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে তাতে বড় অবদান জ্বালানি তেলের দাম কম থাকা। জ্বালানি তেলের দাম কমায় ছোট, মাঝা্রি, বড় সব শিল্প ও বাণিজ্যে বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। সদাশয় সরকার তা ভেবে দেখতে পারে।

এদিকে ফার্নেস অয়েলের দাম কমানো হলেও তার সুফলও জনগণ পাবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না, কারণ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ার কথা বলছে সরকার। তাই তেলের দাম সামান্য কিছু কমিয়ে যদি  তার চেয়ে বেশি বা সমানও বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে জনগণের লাভটা কোথায়? এবং একই সাথে যদি পরিবহন ভাড়াও সরকার কমাতে না পারে তাহলে তেলের দাম এই সামান্য কমানোর অর্থ কী? সূত্র:: জাগো নিউজ






Shares