জামাত শিবিরের “মগজ ধোলাই” জন্ম দিয়েছে হাজারো ইরাদকে
অনেক দিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন ব্লগারের লেখা আমার চিন্তা শক্তিকে ঝাকুনি দিয়েছে, আমার বিন্দুমাত্র ধারনাও ছিল না যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্লগার (বনলতাসেন২১) এত সুন্দর লেখা লেখতে পারে। স্যালুট আপনাকে বনলতাসেন২১।
লেখাটি একটু বড় হলেও সবাইকে লেখাটুকু পড়ার অনুরোধ করছি; বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার FB বন্ধুদের। পাশাপাশি লেখাটি শেয়ার করার ও অনুরোধ করছি।
জামাত শিবিরের “মগজ ধোলাই” জন্ম দিয়েছে হাজারো ইরাদকে!
“জামাতে ইসলামি বাংলাদেশ” কাগজে কলমে একটি রাজনৈতিক সংগঠন কিন্তু আদৌ এটি কোন পলিটিক্যাল দল নয়। এটি এককথায় একটি সফল জঙ্গি তৈরির কারখানা। তাদের জঙ্গি তৈরীর মূল মন্ত্র “মগজ ধোলাই”।
তারা তাদের মগজ ধোলাই প্রকল্প কখন কি প্রেক্ষাপটে চালু করে আমার আগের পোস্টে (http://www.amarblog.com/
তাদের অর্থায়নে পরিচালিত হাজার হাজার মাদ্রাসা তাদের প্রথম স্টেপ। সেখানে কোমলমতি শিশু কিশোরদের কুশিক্ষা দিয়ে এবং ভুল ধারণা দিয়ে তারা মগজ ধোলাই করে। কিশোরদের জন্যে শিবিরের একটি ম্যগাজিন আছে “কিশোর কণ্ঠ”।
সেটা যারা পড়েছেন তারা খুব ভালো ভাবেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন। সেই ম্যাগাজিনটিতে প্রয়োজনমতো সুক্ষ্ণ এবং স্থুলভাবে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি এবং প্রগতিশীল মানুষদের (যাদের সবাই জামাতের বিরুদ্ধে তথা ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে সোচ্চার) নামে বিভিন্ন কুৎসা রচনা এবং “নাস্তিক” ও “ইসলাম বিরোধী” আখ্যা দিয়ে করে শিশু কিশোরদের বিভ্রান্ত করে তারা। ফলাফল?(http://
তাদের এমন ভাবে ব্রেইনওয়াশ করা হয় যে তারা আত্মঘাতী হতেও দ্বিধা করে না। কারণ তাদের এই ধারণা দেয়া হয় যে তারা ইসলামের সেবা করছে জিহাদ করছে। ধর্মের জন্যে জীবন দিচ্ছে। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যারা ব্যাপক পড়াশোনা করেছেন তারা খুব ভালো ভাবেই জানেন “সর্বোৎকৃষ্ট জিহাদ” হলো নিজ “কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে” যুদ্ধ করা। তারা এমন ভাবে কিশোর তরুণদের বিভ্রান্ত করেছে যে তারা এটা বলতেও দ্ধিধা করে না যে “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ” হাদিসটি ভুয়া হাদিস। আরো হাজারটা উদারণ আমি দিতে পারবো কিভাবে তারা ইসলাম ধর্মকে অনৈতিক ভাবে অপব্যাবহবহার করে।
এরপরে তারা টার্গেট করে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের ছেলেদের। যারা বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট একাডেমিতে পড়ে। এক্ষেত্রে তাদের মুল অস্ত্র “ইসলাম ধর্ম”।
বিভিন্ন ওয়াজ মহফিল, তাবলিগ. ধর্মীয় সভা ইত্যাদির মাধ্যমে তারা সদ্য কৈশর উত্তীর্ণ করা তরুণদের কোমল মনে প্রভাব ফেলে। ধীরে ধীরে স্লো পয়জনিং এর মতো করে সেই তরুণদের মনে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষ তারা প্রবেশ করায়। উঠতি এই সব ছেলেদের হঠাৎ করেই দাড়িগোফ রেখে কঠোর ধর্মীয় বিধান পালন করতে দেখা যায়। বিধর্মী বন্ধু বান্ধবদের তারা ত্যাগ করে এবং রীতিমতো ঘৃণা করা শুরু করে। পুরোপুরি ধর্মীয় উগ্রবাদ তাদের মাঝে প্রবেশ করিয়ে দেয় সফল ভাবে। এই ছেলেদের এই ভাবেই মুলত ব্রেইন ওয়াশ করে জামাত শিবির। ফলাফল এই ছেলেদের দিয়ে তারা দেশবিরোধী কাজ করায়। এবং এই প্রকৃয়া বহু আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে। জামাতের এই সব লোকেরা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন।
তারা এ ক্ষেত্রে সফল যে তারা তাদের জঙ্গি এবং নব্য রাজাকার বানাবার মিশন নিয়ে এত গভীরে পৌঁছে গেছে যে এখন কেঁচো খুড়তে সাপ বের হলেও আর আশ্চর্য হতে পারছি না। ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে তারা উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে ফেলেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়, থানায়, পাড়ায় তাদের কার্যক্রম চলছে। নিজেদের সংগঠনের নামে না হলে অন্য ব্যানারে।
আর ফলাফল হচ্ছে এই তরুনরাই ধর্মীয় উগ্রতায় অন্ধ হয়ে দেশে শহীদ মিনার ভাঙচুর. পতাকা ছেড়া, মানুষ হত্যা, হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি উপসনালয়ে আগুন দেয়া (ইসলামে যা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। দ্রষ্টব্য সুরা বাকারা) এসবের মতো ঘৃণ্য কাজ করছে। এটাই জামাতে ইসলামী করেছিল একাত্তরে। তারা তখনের তুলনায় এখন আরো বেশী সংগঠিত এবং শক্তিশালী।
এবার নিজ জেলার প্রেক্ষাপটে একটু বর্ণনা করি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে সবাই জানে মৌলবাদের আস্তানা হিসেবে। মুফতি আমীনির লিবোরেল মৌলবাদ এখানে বেশ পোক্ত। এখানে হিন্দু এবং আহমদীয়া সম্প্রদায়ের মানুষ গুলোর উপর কি কি অত্যাচার করা হয়েছে সেটা কমবেশী আমরা সবাই জানি। এখানে যখন চিত্তনঞ্জন সাহার দোকান ভাংচুর মৌলবাদীদের দ্বারা করা হয়েছিলো তখন কোন মানুষ এগিয়ে আসেনি। কেন আসেনি? সবাই কি মৌলবাদী? এখানে তো শারদীয় পুজা বলুন আর কালীপুজা বলুন মুসলমান হিন্দু সমান আনন্দ করে। মুসলমানের বিয়েতে হিন্দু প্রতিবেশীর জন্যে আলাদা খাসির আইটেম করা হয়। তাহলে কারণ টা কি? সেটা হলো ভীতি। আজকে আমি মৌলবাদের প্রকাশ্য বিরোধীতা করলাম কালকেই আমার বাড়িতে আগুন লাগবে। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন বাংলাদেশের সব জেলাতেই অবস্থা কাছাকাছি। বরং কোথাও আরো বেশী ভয়ংকর। মাদ্রাসার ছাত্রদের কিশোর বয়স হতেই মাগজ ধোলাই শুরু করে তারা।তাদের নিও ট্রেডিশন হচ্ছে ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা।আর “মগজ ধোলাই” বা “ব্রেইন ওয়াশ” যেটাই বলি না কেন এটা হলো তাদের নব্য রাজাকার তৈরীর খুবই সামান্যতম একটি কৌশল।
ব্লগার থাবা বাবা(আহমেদ রাজীব) কে হত্যাকারীদের অন্যতম নাঈম শিকদার ইরাদের পিছনের ইতিহাস টুকু একটু ঘাটলে কিছু বিষয় পরিষ্কার হবে। মানে তাদের মগজ ধোলাই প্রকল্পের প্যাটার্নটা।
আসুন দেখি তার বন্ধুরা কি বলে তার ব্যাপারে।
নাঈম শিকদার ইরাদ। জন্ম এবং বড় হয়ে ওঠা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। তার প্রাইমারী স্কুল ছিলো “খ্রীস্টিয়ান মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়”, মাধ্যমিক স্কুল “অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়”।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সেরা স্কুল এগুলো। এইচএসসি “ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ”।
ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্রদের কথা বললে ইরাদের নাম অবশ্যই আসবে। সাইন্স গ্রুপের মেধাবী ছাত্র ছিলো। ইরাদ ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলো। পরিবার ছিলো “সম্ভ্রান্ত মুসিলম” ট্যাগধারী পরিবার। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানা। নিজের উচ্চতা নিয়ে একটু সংকুচিতো থাকতো ছেলেটি। সবার সাথে মিশতো না। তার পরিবর্তন হলো এইচএসসি লেভেলে গিয়ে। সে নিজের খেয়ালে থাকতো। কারো সাথে মিশতো না। তার পুরান বন্ধুরা তাকে খুঁজেই পেতো না।
পরিবর্তনটা ছিলো সে হঠাৎ করেই কঠোর ভাবে ইসলামের নিয়ম কানুন মানা শুরু করলো। সমস্যা সেটা না। সমস্যা ধর্মান্ধতা। ধর্মান্ধতার বীজ তার ভেতর বপন হয়ে গিয়েছিলো। তার বাবা মা এটা নিয়ে চিন্তিতো থাকতো। তার আচার আচরনে উগ্রতা প্রকাশ পেতে থাকলো। সেটাও যদি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকতো তাহলে হয়তো সে এইচএসসিতে প্রত্যাশিত রেজাল্ট করতে পারতো। পরে সে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ে ভর্তি হয়। আজকাল টাকা থাকলেই বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনিতে ভর্তি হওয়া যায়।
পরের ঘটনা আমরা সবাই জানি। কিভাবে ব্লগার থাবা বাবার হত্যা মিশনে নাঈম শিকদার ইরাদ অংশ নেয়।(কালের কণ্ঠ ৪মার্চ)
জামাতের মগজধোলাই প্রকল্পের বলি একজন ইরাদ নয় বাংলাদেশে হাজার হাজার ইরাদ আছে।কিছুদিন আগেই আমেরিকায় স্ট্রিং অপারেশনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার কৃত নাফিসের কথা তো আমরা সকলেই জানি।এরকম কত নাফিস আর ইরাদের জন্ম দিয়েছে জামাতের মগজ ধোলাই প্রকল্প তার কতটুকু খোঁজ আমরা জানি? আমরা আসলে কিছুই জানি না।
জামাত শিবিরের কর্মীদের নিজ অর্থায়নে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়। পাশ করার জন্যে নয় বরং নব্যরাজাকার সৃষ্টি মাধ্যমে বাংলাদেশে মৌলবাদের পাঁকা ঘাটি সৃষ্টির জন্যে। পত্র পত্রিকার কল্যানে “নানাভাই” নামক এক পালের গোদার কথা আমরা জেনেছি। পুলিশ বা গোয়েন্দা বাহিনী তাকে এখনও এরেস্ট করতে পারে নি। সে ছিলো থাবা বাবার হত্যাকারীদের ইন্ধনদাতা।
এ রকম হাজার হাজার “নানাভাই” ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইন্সটিটিউটে। যাদের কাজই হলো সদ্য কৈশর উত্তীর্ণদের “ব্রেইন ওয়াশের” মাধ্যমে পথভ্রষ্ট করা। তাদের মাধ্যমে “কিলিং স্কোয়াড” তৈরী করা। জামাতের নিজস্ব অর্থায়নে এই সব কাজ করা হয়। জামাতের নিজস্ব কতগুলো ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান আছে তা আমরা সবাই ইদানিং মুখস্ত করে ফেলেছি। এর অদ্যাক্ষর দিয়ে স্লোগান ও দিয়েছি। কিন্তু আমাদের পত্রপত্রিকায় এখনও তো সেই সব প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন একিদিকে ছাপা হচ্ছে আরেক দিকে পতাকা হাতে স্লোগানরত যুবক-যুবতীদের ফটো ছাপা হচ্ছে! তাদের খুঁটির জোর(পড়ুন টাকার জোর) যে কত সেটা অনুমান করতে কষ্ট হবার কথা না। আর তারা কি ইচ্ছা করলেই অন্য ব্যাবসায়ীক সংগঠন কিনতে বা সৃষ্টি করতে পারে না? আলবৎ পারে! আর তাদের অর্থায়নের বৈদেশিক উৎসগুলোও এখন ওপেন সিক্রেট! হাজার কোটি ডলার তাদের কাছে কোন ব্যাপারই না!
আর বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট ইউনিতে যারা শিবিরের সভাপতি বা এই ধরনের কিছু তাদের কঠোর নিয়ম পালন করতে হয়। জামাতের নেতাদের কথা ছাড়া তারা এক পাও চলেন না। পরবর্তীতে তাদের কর্ম সংস্থানের জন্যে তো রয়েছেই জামাতের পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। দিগন্ত টিভির ডিরেক্টর ছিরেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সভাপতি।
তাদের মিশন বাংলাদেশকে পুরোপুরি মৌলবাদী রাস্ট্র হিসেবে তৈরা করা। এতে তারা সফল হোক না হোক বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতা বলুন আর ধর্মীয় উগ্রতা বলুন সেটা তারা সৃষ্টি করে ফেলেছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট অনৈতিক ভাবে তাদের সাথে জোট বেঁধেছে “ভোটের রাজনীতির” ব্যানারে।
সরকার কি করছে? এককথায় বলতে গেলে সরকার কিছুই করতে পারছে না। জামাতকে নিষিদ্ধ করে দিলে তারা যে অন্য নামে অন্য ব্যানারে তাদের কাজ কর্ম চালাবে না সেটা ভাবার মতো বোকা এদেশের জনগণ নয়। তাই সরকার যেন অবলমম্বন করছে “পলিসি অব ডু নাথি”!
লিখেছেনঃ বনলতাসেন২১ (তারিখঃ শুক্রবার, ০৮/০৩/২০১৩ – ২২:২৮)