মনের আগুন নিভিয়ে ফেলুন, এখনই…..



রাগলে মানুষের চেহারা প্রচন্ড রকম কুতসিৎ হয়, তবে এটা আমরা খুব সহজেই খালি চোখে দেখতে পাই।
কিন্তু রাগ সময় আমাদের ভেতরটা আরো অনেক বেশী কদাকার হয়, সুখের কথা এটা কেউ দেখতে পাই না।
রাগ বা উত্তেজনা এক ধরনের আগুন। ইহা শরীরের অভ্যন্তর দাহ করে এবং অর্জিত জ্ঞান ও বিদ্যাকে পুড়িয়ে ফেলে মানুষের অন্তরকে কালো দাগে কালিমা লিপ্ত করে। শরীরের সুস্থ, স্বাভাবিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়, শরীরে বিভিন্ন রোগের বীজ বপন করে।
আগুন ভিতর-বাহির যেখানেই জ্বলুক না কেন ক্ষতি করবেই। অতিরিক্ত রাগ আপন মানুষকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে দেয়, সম্মানহানির কারণ হয়ে দাড়াঁয় এবং জীবনকে অশান্তিময় করে তুলে। তাই সকলের উচিত রাগ বা উত্তেজনা পরিহার করা।
তবে আগুন দিয়ে যেমন অনেক কিছু বিনির্মান করা যায় তেমনি এই রাগকে আপনি অনেক কঠিন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এর ব্যবহারটি হতে হবে ইতিবাচক এবং উদ্দেশ্য হতে হবে মহান। জেনে-বুঝে যদি ঠান্ডা মাথায় রাগতে পারেন তবেই সম্ভব এর মাধ্যমে উপকৃত হওয়া। তখন রাগের নামটিই হয়তো বদলে যাবে।
মনে রাখবে… রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন ।
রাগকে কিভাবে বেধে ফেলবেন?
ক্ষমাঃ এটা এমন একটি গুন যা বর্ননা করে শেষ করা সম্ভব নয়। অন্যের ছোট-খাট ভূলগুলো ক্ষমা করতে শিখুন। কেউ কিছু করলে যা আপনার রাগের কারন হলো, ভাবুন তার অবস্থান থেকে। মানুষ মাত্রই ভুল। এটা ভুলে যাবেন না। আমাকেও তো রোজ কতজন ক্ষমা করছে যার হিসেব হয়তো আমি জানিনা। এখনই বলুন… যাহ, তোকে মাফ করে দিলাম।
রাগ প্রতিপালন না করে ভুলে যানঃ কোন কারনে আপনার রাগ হলো আপনি শত চেষ্টা করেও ক্ষমা করতে পারলেন না বা আপনার রাগ প্রদর্শন করার মতো অবস্থা নেই। মনে মনে রাগ পুষে রাখবেন না। এটা আপনার জন্য অনেক ভয়াবহ হতে পারে। ক্ষমাই করে দিন নয়তো ভূলে যান। কারন এটা আপনার জন্য কোন শূভ ফল বয়ে আনতে পারবে না। মনে মনে ভাবুন, যা হয়েছে ভালই হয়েছে। আর একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, কাউকে কষ্ট দিয়ে কখনো সুখী হওয়া যায় না, তেমনি আপনাকে যে কষ্ট দিলো যদি সত্যি সত্যি তার দোষ হয় তবে প্রকৃতি অবশ্যই তাকে সাজা দিবে। আপনার কিছু করতে হবে না।
সুস্বাস্থ্যঃ সুস্বাস্থ্যের সাথে রাগের একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। শারিরিক-মানষিক সুস্বাস্থ্য অর্জনের চেষ্টা করুন। আপনার শরীর,আপনার মন, আপনাকেই সুস্থ রাখতে হবে। কোন ডাক্তারের সাধ্য নেই আপনাকে সুস্থ রাখার, যদি না আপনি নিজে নিজেকে সুস্থ রাখেন। একটু চেষ্টা করলেই জানতে ও শিখতে পারবেন কিভাবে সুস্বাস্থ্য অর্জন করা যায়। প্রয়োজনে নিজের জীবন-যাপন পদ্ধতি পরিবর্তন করুন।
সঙ্গঃ সঙ্গ একটি বিশাল ভুমিকা রাখে প্রতিটি মানুষের জীবনে। সুন্দর জীবন-যাপন করতে চাইলে আপনার সঙ্গী যদি সুন্দর-সুস্থ-জ্ঞানী না হয় তবে কিন্তু ব্যপারটা খুব কঠিন হবে। ভাল বন্ধু-বান্ধব ও ভাল সহকর্মী এবং উত্তম পরিবেশে থাকতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে আবাসস্থল বা কর্মস্থল বা এলাকা পরিবর্তন করুন। একটাই জীবন, একটাই সুযোগ। আপনাকে ২য়বার আর পৃথিবীতে পাঠানো হবে না বা আপনার কোন উপায় নেই পরে কিছু করার। যা করার এখনই করুন।
ধর্মঃ একমাত্র ধর্ম মানুষের রগে রগে ঢুকে একজন মানুষকে চুড়ান্ত পরিবর্তন করতে পারে। যেটা আপনার জন্য খুব কঠিন মনে হচ্ছে আপনি ধর্ম-কর্ম শুরু করেন অন্তর থেকে একদিন না একদিন আপনার পরিবর্তন হবেই। রাগ কন্ট্রোল করার জন্য ইবাদত বড় ভুমিকা রাখতে পারে। নিজেকে ধৈর্য্যশীল করার জন্য এবং নিজের ভাবাবেগ পরিবর্তনের জন্য ধর্মে আন্তরিক মনোনিবেশ করতে পারেন। সফলতার সম্ভাবনা নিশ্চিত।
সচ্ছলতাঃ অভাব মানষিক শান্তি নষ্ট করার সবচেয়ে বড় কারন। আর্থিক সঙ্গতি বাড়াতে চেষ্টা করুন। আপনি আপনার উপার্জন থেকে প্রতিদিন কিছু জমাতে চেষ্টা করুন। কোন প্রকার ঋনের মধ্যে যাবেন না। বিশেষ করে সুদের উপর কখনই ঋন নেবেন না। ঋন মানুষকে নিকৃষ্ট পশু পর্যন্ত বানাতে পারে। ঋন করে যেটা করতে চাচ্ছেন তা সঞ্চয় করে কিছুদিন পরেই না হয় করুন। অল্পের মধ্যে চলতে চেষ্টা করবেন। বড় কোন ঝামেলায় না যেয়ে নিজের মানষিক শান্তি বজায় রাখুন। বর্তমান নষ্ট করে কখনো ভবিষ্যত অর্জনের চেষ্টা করবেন না, তাহলে আপনি বর্তমান এবং ভবিষ্যত দুটোই হারাবেন। আমাদের আরেকটা সমস্যা হলো যা আছে তা নিয়ে আমরা তুষ্ট নই, আরো চাই আমাদের। এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসুন।
ভাবুনঃ নিজের সাথে নিজে কথা বলুন, নিজের বিচারক নিজেই হোন। দেখবেন চলার পথ সহজ হয়ে যাবে। অনেক কিছু আবিস্কার করবেন নিজের সম্পর্কে। নিজেকে নিজে গুছিয়ে নিতে পারবেন। অনেকদুর যেতে পারবেন অনেক সুখের সাথে। কখনো রাগলে নিজেকে শাসন করুন এবং সংকল্প করুন এধরনের পরিস্তিতি হলে যেনো আর না রাগেন এবং ভবিষ্যত রাগ নিবারনের পন্থা নিজেকে দিয়ে রাখুন।
হাসুনঃ হাসি-খুশি থাকতে চেষ্টা করুন সকল সময়। রাগ কমাতে চেষ্টা না করে বরং হাসি-খুশির মাত্রা বাড়িয়ে দিন, তবে দেখবেন রাগতে ইচ্ছাই হবে না কারন আপনি ইতিমধ্যেই হাসি-খুশি থাকার আসল মজাটা উপলদ্ধি করতে পেরেছেন। ছোটদের সাথে আনন্দ ফুর্তি করুন, এমনভাবে যেন আপনিও একজন শিশু। নিজের শিশু কালের কথা ভাবুন। বড়দের সাথে ছেলেমানুষী করুন, বসের সাথে দুষ্টমি করুন মাঝে মাঝে, বন্ধু-বান্ধব-সহকর্মীদের সাথে আনন্দ ফুর্তি করুন বা ফুর্তির একটা পরিবেশ তৈরী করতে সচেষ্ট থাকুন। আত্নীয়দের মাঝে মাঝে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ান। সামজিক হোন। বিপদে সবার পাশে দাড়ান। যা যা একজন মানুষের ভালো গুন হওয়া উচিত তাই করুন নয়তো করতে চেষ্টা করুন। জীবনকে উপভোগ করুন সবকিছুর ভিতর।
শেষ কথা হলো, আপনি যদি সত্যি সুখ চান, সুন্দর জীবন চান, শারীরিক-মানষিক উন্নতি চান, তবে রাগ ঝেড়ে ফেলতেই হবে। কিভাবে ঝেড়ে ফেলবেন তার পথ আপনাকে নিজেই আবিস্কার করতে হবে, আপনার অবস্থান-অবস্থা-পরিবেশ বিবেচনা করে। নিজে নিজেকে সাহায্য করুন।
মনে রাখবে…. রাগ এমন একটি অস্ত্র যাহা অন্যের দিকে নিক্ষেপ করবেন কিন্তু ক্ষতি আপনারই হবে। কেননা রাগ এমন একটি দানব যে তার নিজ মনিবকেই সর্বদা আক্রমন করে, অন্যকে নয়।