Main Menu

চরম নাটকীয়তা ছড়িয়ে আবুধাবী টেস্ট ড্র!!!

+100%-

cri181015সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে এমন রোমাঞ্চ অনেকদিন পর গতকাল একটু সময়ের জন্য ঝলক মেরেছিল। নিশ্চিত ড্র জেনে শেষ দিনে এই খেলার দিকে তেমন একটা নজর দেইনি। সেই নজর না দেওয়া সময়টুকুই এখন আফসোস। আবুধাবীর শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যকার প্রথম টেস্ট ড্র হবে এটা আগেই জানতাম। কিন্তু পঞ্চম দিনে পাকিস্তান সহজে ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য মাত্র ১৯ ওভারে ৯৯ রানের যে টার্গেট দিয়েছিল, রোমাঞ্চটা সেখানেই ঘুঁটি পাকিয়েছিল।

আর ইংলিশরাও ঠিক জয়ের জন্যই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং অর্ডার বদল করে মারকুটে বাটলারকে ওপেনিংয়ে নামিয়েছিল। কিন্তু খেলা শেষ হতে তখনো ৮ ওভার বাকি থাকতেই আলোক স্বল্পতায় ফ্লাডলাইট জ্বলে ওঠায় ১১ ওভারে ৪ উইকেটে ৭৪ রানেই ইংলিশদের সেই ইচ্ছায় গুড়েবালি। খেলার তখনো ৮ ওভার বাকি। আর ইংলিশদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৫ রান। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ড্র হওয়ায় হাফ ছেড়ে বাঁচে পাকিস্তান।

প্রথম চারদিন যে টেস্ট ম্যাচের চরিত্র ছিল নিশ্প্রাণ ড্র। শেষ দিনে তা এমনভাবে জমে উঠবে কোনো দলই কিন্তু ভাবেনি। প্রথম চারদিনে যেখানে উভয় দলের পড়েছে মাত্র ১৬ উইকেট। সেখানে শেষ দিনে পড়েছে উভয় দলের ১৫ উইকেট। ইংল্যন্ডের ১+৪= ৫টি ও পাকিস্তানের ১০টি।

১৩ অক্টোবর টস জিতে পাকিস্তান ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ম্যাচের তৃতীয় ওভারে ওপেনার সান মাসুদ এন্ডারসনের বলে বোল্ড হলে ইংলিশরা আর্লি উইকেট নিয়ে যেমন স্বস্তিতে থাকার কথা, বাস্তবে ম্যাচে আর তা ঘটেনি। মোহাম্মদ হাফিজ আর শোয়েব মালিক সেই ধাক্কা সামলে দলকে মজবুত ভিত গড়ে দেন। এই জুটি ১৬৮ রান অবিচ্ছিন্ন থাকার পর হাফিজ যখন সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ২ রান দূরে তখন স্টোকসের বলে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পা দেন হাফিজ। প্রথম দিন শেষে পাকিস্তানের রান ৪ উইকেট ২৮৬। শোয়েব মালিক নটআউট ১২৪ রানে আর আসাদ শফিক নটআউট ১১ রানে। খেলা হয়েছিল ৮৭ ওভার।

দ্বিতীয় দিনে এই জুটি আরো ২৪৮ রান যোগ করেন। পাকিস্তানের রান যখন ৪৯৯ তখন সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় পাক-ব্যাটসম্যান আসাদ শফিক আউট হন ১০৭ রান করে। অপর ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিক করেন ডাবল সেঞ্চরি। শোয়েব মালিকের ইনিংস শেষ হয় ২৪৫ রানে। শেষ পর্যন্ত ২৬ ওভার খেলার বাকি থাকতে পাকিস্তান ৮ উইকেটে ৫২৩ রানে ইনিংস ডিকলার করে। ইংল্যান্ড ২৬ ওভার খেলার সুযোগ পেলেও খেলা হয় মাত্র ২১ ওভার। ইংলিশরা কোনো উইকেট না হারিয়ে তোলে ৫৬ রান।

টেস্টের প্রথম দুই দিন যেমন পাকিস্তান অনায়াসে ব্যাট করেছে, তেমনি ইংলিশরাও তৃতীয় ও চতুর্থ দিন নিজেদের পছন্দ মত ব্যাট করেছে। উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না। আসলে দর্শকদের তখন থেকেই এই টেস্ট থেকে মন উড়ে যায়। ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন অলস্টার কুক একাই পাকিস্তানের পথের কাঁটা হয়ে রেকর্ড বুকে ঢুকে পড়েন। তুলে নেন ডাবল সেঞ্চুরি। তৃতীয় দিন শেষে কুক নটআউট ছিলেন ১৬৮ রানে। সঙ্গী ছিলেন রুট নটআউট ৩ রানে। ইংল্যান্ডের তৃতীয় দিন শেষে রান তখন ৩ উইকেটে ২৯০।

চতুর্থ দিন পুরোটাই দখল করলেন ইংলিশ ক্যাপ্টেন কুক। করলেন ডাবল সেঞ্চুরি। কুক ২০০ করেছেন ৩৯৫ বলে। যার মধ্যে ১৬টি চারের মার। পাকিস্তানের ৫২৩ রানের প্রথম ইনিংস টপকানোর পর দলের রান যখন ৫৪৯ তখন কুক আউট হলেন। ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কুকের চেহারায় তখনো ছিল না কোনো ক্লান্তির ছাপ। কুককে আউট করেন পাকিস্তানের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান শোয়েব মালিক। ক্যাচটি নিয়েছিলেন সান মাসুদ। কুক আউট হন ২৬৩ রান করে। কিন্তু চলতি বছর এটি কোনো ব্যাটসম্যানের দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটিং করার রেকর্ড। কুক সময় নেন ৮৩৬ মিনিট। মোকাবেলা করেন ৫২৮ বল। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, পরবর্তী ১৬৩ রান করতে কুক মাত্র ২টি চারের মার মারেন। শোয়েব মালিক ২৪৫ করেছিলেন ৬৩৯ মিনিটে। যেখানে চারের মার ছিল ২৪টি আর ছক্কা ছিল ৪টি। বল খেলেছেন ৪২০টি। সেখানে কুক ২৬৩ রান করতে শোয়েব মালিকের চেয়ে প্রায় ২০০ মিনিট (১৯৭) বেশি সময় নেন। আর চারের মার কম মারেন ৬টি। আর কুকের ইনিংসে কোনো ছক্কার মার ছিল না। যে কারণে সময় হিসেবে রেকর্ড বুকে ঢুকে যান ইংলিশ ক্যাপ্টেন।

কুকের সামনে এখন আরেকটি রেকর্ডের হাতছানি। আর মাত্র ১৪৪ রান করতে পারলেই প্রথম কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে দশ হাজার রান ক্লাবের মেম্বার হবেন অলস্টার কুক। যা হয়তো চলতি বছরেই ইংল্যান্ড অর্জন করতে যাচ্ছে।
চতুর্থ দিনের খেলা যখন শেষ হয় তখন ইংল্যান্ডের রান ৮ উইকেটে ৫৬৯। পাকিস্তানের চেয়ে ৪৬ রানের লিড। তখনো ইংল্যান্ড ইনিংস ডিকলার করেনি। যেহেতু উভয় দলের একটি করে ইনিংস তখনো বাকি, তাই পঞ্চম ও শেষ দিনের এই খেলায় আমার মত ক্রিকেট ভক্তদের একটু উদাস নজর থাকারই কথা অন্তত নিশ্চিত ড্র জেনে!

পঞ্চম দিনে ইংল্যান্ড ৯ উইকেটে ৫৯৮ রান তুলে ইনিংস ডিকলার করে। পাকিস্তানের চেয়ে তখন তাদের লিড ৭৫ রানে। এই ৭৫ রানের লিড যে কতোটা রোমাঞ্চকর হতে পারে, তা পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৭.৫ ওভারে ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে করে দেখালো। পাকিস্তান লাঞ্চে যায় ২ উইকেটে ৩৫ রান নিয়ে। একমাত্র অভিজ্ঞ ইউনিস খান ও ক্যাপ্টেন মেজবাউল হক ছাড়া আর কেউ পাকিস্তান ইনিংসে দাঁড়াতেই পারেননি। প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়া শোয়েব মালিক দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে আউট!

ওপেনার হাফিজ ৩৪, ইউনিস খান ৪৫, মেজবাহ-উল হক ৫১ আর সরফরাজ আহমেদ ২৭ ছাড়া আর কোনো পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পরেননি। ফলে ইমরান খানের উইকেট যখন ডেব্যু ইংলিশ বোলার আদিল ওসমান রশিদ তুলে নেন তখন পাকিস্তান মাত্র ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৫৭.৫ ওভারে। ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ২১ ওভারে ৯৯ রানের।

প্রথম ইনিংসে ইংলিশ ডেব্যু বোলার আদিল ওসমান রশিদ ৩৪ ওভার বল করে ১৬৩ রান দিয়ে কোনো উইকেটের দেখা না পেলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৮.৫ ওভারে ৬৪ রান দিয়ে দখল করেন ৫ উইকেট। বাকি ৪টি উইকেট নেন আলি ও এন্ডারসন ২টি করে।
ইংল্যান্ড জয়ের জন্যই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে। ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনে কুক থেকে যান রিজার্ভ বেঞ্চে। আলি’র সঙ্গে ইনিংসের গোরাপত্তন করেন মারকুটে উইকেটকিপার-কাম ব্যাটসম্যান বাটলার।

কিন্তু বাটলারকে সেই সুযোগ দেননি দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য করা শোয়েব মালিক। এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে মাত্র ৫ বলে ৪ রান করেই আউট হন তিনি। ২৯ রানে ইংলিশদের অন্য ওপেনার আলি আউট হন ১১ রান করে। শুরু হয় ম্যাচে শেষ বিকালের চরম উক্তেজনা। ৩৫ রানে ইংল্যান্ডের তৃতীয় উইকেট পড়লে ম্যাচে তখন রুদ্ধশ্বাস অবস্থা তৈরি হয়।

৯.২ ওভারে ৬৬ রানে ইংল্যান্ডের চতুর্থ উইকেট পড়লে ম্যাচে তখন চরম নাটকীয়তা শুরু হয়। কিন্তু ইংলিশ ব্যাটসম্যান রুট তখন চরম ক্ষিপ্রতার সঙ্গে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে। রুট ৩৩ ও বেল ৫ রানে নটআউট তখন। শেষ পর্যন্ত ১১ ওভারে যখন ইংল্যান্ডের রান ৭৪, খেলার বাকি মাত্র ৮ ওভার, জয়ের জন্য রান দরকার ইংল্যান্ডের আরো ২৫টি আর পাকিস্তানের দরকার আরো ৬ উইকেট, তখন আলোক স্বল্পতায় ফ্ল্যাডলাইট জ্বলে ওঠে। আর মাঠের দুই অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার রাইফেল ও অক্সেনফোর্ড সেখানে খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। যদিও এই ড্রতে ইংশিশদের মন ভরেনি। অনেকটা ঘাটে এসেও জয়ের দেখা না পাওয়ার ক্ষোভ ছিল ইংলিশদের মনে! ফলাফল ম্যাচ ড্র।

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষ দিনে এমন চরম উক্তেজনা ছড়িয়েও ড্র। আগামী বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। তৃতীয় কোনো ভেন্যুতে এটাই ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট লড়াই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
টস: পাকিস্তান
পাকিস্তান: ৫২৩/৮ (ডিকলার) ও ১৭৪ (শোয়েব মালিক ২৪৫, আসাদ শফিক ১০৭ ও স্টোকস ৪/৫৭, রশিদ ৫/৬৪)
ইংল্যান্ড: ৫৯৮/৯ ও ৭৪/৪ (অলস্টার কুক ২৬৩, রুট ৮৫ ও ওহাব রিয়াজ ৩/১২৫, শোয়েব মালিক ২/২৫)
প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: অলস্টার কুক (ইংল্যান্ড)
ডেব্যু: আদিল ওসমান রশিদ (ইংল্যান্ড)






Shares