কেমন আছেন মাশরাফি, কীভাবে কাটছে সময়
তার মনের জোর নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অল্পবিস্তর খোঁজ-খবরও যারা রাখেন, তারা পর্যন্ত বলতে পারবেন কোনও চাপ, কোনও বাধা তার দৃঢ় মানসিকতায় চিড় ধরাতে পারেনি এতটুকু। দুই পায়ের সাত সাতটি অস্ত্রোপচার যার বড় প্রমাণ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও চিরচেনা সেই মাশরাফি মুর্তজা। মানসিক শক্তি কাজে লাগিয়ে করোনাযুদ্ধে জয়ী হওয়ার চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা তার।
বাসাতেই চিকিৎসকদের দেওয়া পরামর্শ মেনে চলছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। গত শনিবার তার শরীরে কোভিড-১৯ ধরা পড়ার পর থেকে নিয়ম মেনে নিজেকে ঘরে আটকে রেখেছেন তিনি। ফলও পাচ্ছেন, এই মুহূর্তে তার শারীরিক অবস্থা সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন মাশরাফির বাল্যবন্ধু বাবলু।
মাশরাফির আক্রান্তের তিন দিন পর কোভিড-১৯ ধরা পড়ে তার ছোট ভাই মোরসালিন বিন মুর্তজার। গতকাল (মঙ্গলবার) পজিটিভ হন তিনি। তবে মাশরাফির দুই সন্তান সাহেল ও হুমায়রার করোনা পরীক্ষায় ফল ‘নেগেটিভ’ এসেছে। আর তার স্ত্রী সুমনা হক সুমির ফল এখনও আসেনি।
মাশরাফি আক্রান্ত হওয়ার পরদিনই দুই সন্তানকে নড়াইলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী সুমি মাশরাফির সেবায় মিরপুরের বাসাতেই আছেন। পাশাপাশি মাশরাফির কয়েকজন বাল্যবন্ধুও আছেন সঙ্গে। তাদের মধ্যে অন্যতম বাবলু। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনিই জানিয়েছেন মাশরাফির সবশেষ অবস্থা। সেখানে স্বস্তির খবরই মিলেছে, ‘মাশরাফির অবস্থা খুব ভালো। শরীর আস্তে আস্তে ঠিক হচ্ছে। কাশিটাও এখন কম। একেবারেই স্বাভাবিক আছে এই মুহূর্তে।’
দুই দিন আগে অবশ্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল মাশরাফিকে। সেই পরীক্ষার ফলও সন্তোষজনক। আপাতত কোনও সমস্যা নেই বলে জানালেন বাবলু, ‘মাশরাফির যেহেতু অ্যাজমার সমস্যা ছিল, এই কারণে সতর্কতা হিসেবে পরীক্ষা করা হয়েছে। এক্স-রেতে কোনও ত্রুটি পাওয়া যায়নি। এই মুহূর্তে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মাশরাফি সবকিছু করছে। ভাবিসহ আমরা কয়েক বন্ধু মাশরাফির সঙ্গে আছি।’
করোনায় আক্রান্ত হলেও কাজকর্ম থেমে নেই নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফির। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। এই গ্রুপে প্রশাসনের অনেক কর্তাব্যক্তিরাই আছেন। কোনও সমস্যা হলে সবকিছু দেখভাল করছেন মাশরাফির ব্যক্তিগত সহকারী জামিল আহমেদ সানি।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, ‘ভাই (মাশরাফি) অসুস্থ হলেও তার কাজ থেমে নেই। সবকিছুই অনলাইনে তিনি দেখছেন। আমাদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। ওখানে ডিসি-এসপিরা আছেন। কোনও দিক-নির্দেশনার প্রয়োজন হলে উনি ওখানেই দিচ্ছেন। এছাড়া কোথাও যোগাযোগের প্রয়োজন হলে আমি করছি। কোথাও যেতে হলে আমি যাচ্ছি।’
রাজনৈতিক কাজকর্ম ছাড়াও টিভি দেখে সময় কাটছে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়কের। লা লিগা ও প্রিমিয়ার লিগের খেলা দেখছেন বন্ধুদের সঙ্গে।
এর পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হচ্ছে মাশরাফির। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে তার বিশেষ কোনও আকর্ষণ কখনোই ছিল না। ফলে বিরক্তি নিয়েই খেতে হচ্ছে খাবার। তবে বাবলু জানালেন, এই মুহূর্তে বন্ধু ও স্ত্রীর ‘অত্যাচার’ ভালোই সহ্য করছেন সাবেক এই অধিনায়ক।
কেউই মাশরাফিকে কোনও প্রকার চাপ নিতে দিচ্ছেন না। মাশরাফি নিজেও চাপ নিয়ে পরিস্থিতি জটিল করতে চাইছেন না। ২২ গজে মনের জোরে যেভাবে বারবার ফিরে এসেছেন, সেভাবেই করোনাযুদ্ধ জয়ী হওয়ার মিশনে বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক!