বাচ্চাদের ডায়রিয়া:: প্রতিকার ও চিকিৎসা
এই গরমে বাচ্চারা সচরাচরই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাই আমরা বাচ্চাদের কখন ডায়রিয়া বলবো, ডায়রিয়া হলে বাচ্চাদের কি সমস্যা হয় আর এই ডায়রিয়া হলে করনীয় কি তা নিয়ে আজকে একটু জানতে চেষ্টা করবো। ডায়রিয়া কখন বলবো? যখন একটা বাচ্চা দিনে ৩ বার বা তার বেশি পাতলা পায়খানা করে বা ১ বারই অনেক পরিমানে পানির মত পাতলা পায়খানা করে তাহলে তাকে আমরা ডায়রিয়া বলবো। বাচ্চারা অনেক সময় শুধু পাতলা পায়খানা নিয়ে আমাদের কাছে আসে আবার অনেক সময় অন্য কোন রোগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ডায়রিয়া নিয়ে আসতে পারে। যদি পাতলা পায়খানার সাথে বমি, হালকা জ্বর থাকে এবং তা যদি ১৪ দিনের কম স্থায়ী হয় তাহলে তাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় Acute Watery Diarrhoea বলি। তাছাড়াও পায়খানার সাথে অনেক জ্বর, পেটে ব্যাথা বা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া থাকতে পারে সেক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই অন্য কোন রোগের জন্য পাতলা পায়খানা হচ্ছে কিনা সেটা আগে দেখতে হবে।
আজকে আমরা Acute Watery Diarrhoea নিয়ে কিছু জানতে চেষ্টা করবো। ডায়রিয়া কেন বাচ্চাদের জন্য মারাত্মক? ডায়রিয়া বাচ্চাদের জন্য মারাত্মক কারণ ডায়রিয়ায় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং শরীরে বিভিন্ন লবনের তারতম্য দেখা দিতে পারে যা খুবই মারাত্মক। আর বাচ্চাদের এই পানিশূন্যতার ফলে খুব দ্রুতই শারীরিক অবনতি ঘটে এমনকি অনেক সময় মৃত্যুও হতে পারে। কিভাবে বুঝবো আমার বাচ্চার শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে? ১) বাচ্চা যদি খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ২) বাচ্চা যদি দুর্বল হয়ে যায়, স্বাভাবিক খেলাধুলা না করে। ৩) বাচ্চা যদি প্রতি ৪-৬ ঘন্টার মধ্যে প্রস্রাব না করে অথবা সারাদিনে নূন্যতম ৪-৫ বার প্রস্রাব না করে। ৪)বাচ্চার জিহ্বা যদি শুকিয়ে যায়। ৫) বাচ্চা যদি পানি খেতে চাচ্ছে কিনৃতু খেতে না পারে। এসব লক্ষ্মণ দেখা দিলে দেরী না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলে বাচ্চার ডায়রিয়া হলে করনীয় কি? ক) বাচ্চার বয়স যদি ৬ মাসের কম হয় তাহলে বার বার বুকের দুধ খাওয়ান। পাশাপাশি খাবার স্যালাইনও দিতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় অনেক বাচ্চা কোটার দুধ খায় তাদের ক্ষেত্র অবশ্যই কোটার দুধ বন্ধ করে দিতে হবে।
আর অবশ্যই বাচ্চার খাওয়া দাওয়া, খেলাধুলা, প্রস্রাবের পরিমানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। খ) আর বাচ্চার বয়স যদি ৬ মাসের বেশি হশ তাহলে ১)যদি বুকের দুধ খায় তাহলে তা চালিয়ে যেতে হবে। ২)পাশাপাশি প্রতিবার পায়খানার পর খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। ৩)বাবুকে পোলাওর চালের ভাত, কাঁচকলা ভর্তা, আলু সিদ্ধ, মুরগীর মাংস খাওয়াতে পারেন, এসব খাবার পায়খানাকে শক্ত করতে সাহায্য করে। ৪) পায়খানার মধ্যে কোন ফলের রস না খাওয়ানোই ভালো আর খাওয়াতে চাইলে পাকা কলা আর ডাবের পানি খাওয়াতে পারেন। ৫) তাছাড়াও পাতলা পায়খানার মধ্যে আপনি চাইলে বাবুকে বাসায় তৈরী টক দই ১ চামচ করে দিনে ২ বার করে খাওয়াতে পারেন। আজ এখানেই শেষ করছি, সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আর বিশেষ করে পরিবারের ছোট্ট সোনামনির যত্ম নিবেন।
ধন্যবাদ
ডাঃ তৌকিতুল আলম সরকার (চয়ন) সহকারী রেজিস্ট্রার, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান। স্বপ্নদ্রষ্টা, শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র।