রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে পারে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ
আনন্দবাজার:: হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসা সম্পর্কে কমবেশি মূলধারার বহু চিকিৎসকের বিতৃষ্ণা আছে। প্রায় ২০০ বছর আগে জন্মলগ্ন থেকে বিতর্ক পিছু না ছাড়লেও বিশ্বের এক বিশাল সংখ্যক মানুষ আস্থা রাখেন হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসার ওপর। কলেরা, বসন্ত, প্লেগ বা টাইফয়েডের মহামারি থেকে বাঁচতে ১০০ বছর আগেও আমাদের দেশের প্রধান অস্ত্র ছিল হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ। কলেরা, বসন্ত, প্লেগের মহামারির সময়েও হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ অনেক অসুস্থকে সুস্থ করতে সাহায্য করেছিল বলে জানা গিয়েছে। নানান বিজ্ঞানভিত্তিক সমীক্ষা করার পরই সরকারি আয়ুষ মন্ত্রক রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করে কোভিড-১৯ অতিমারিকে দূরে সরিয়ে রাখতে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের ওপর আস্থা রেখেছেন, বললেন মিনিস্ট্রি অব আয়ুষের সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিয়োপ্যাথির (সিসিআরএইচ) সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইসরি বডির সদস্য হোমিয়োপ্যাথি বিশেষজ্ঞ রথীন চক্রবর্তী।
অতিমারি সৃষ্টির জন্যে দায়ী কোভিড-১৯ ভাইরাসের কাছাকাছি সম্পর্কের কিছু করোনাভাইরাসকে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের সাহায্যে নিকেশ করা গিয়েছে। করোনা গোষ্ঠীভুক্ত বিভিন্ন ভাইরাস ঘটিত অসুখের প্রতিরোধক বা প্রিভেন্টিভ মেডিসিন হিসাবে কাজ করে হোমিয়োপ্যাথিক ওষুধ আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০। কোভিড-১৯ অন্য ভাইরাসদের থেকে শক্তিশালী হলেও নভেল করোনার ক্ষেত্রেও ওষুধটি কাজ করে বলে রথীনবাবুর দাবি। সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিয়োপ্যাথির (সিসিআরএইচ) সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইসরি বডির ৯ জন গবেষক চিকিৎসক ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত মানুষের ওপর আর্সেনিক অ্যালবাম ওষুধ প্রয়োগ করার পর রোগের বিস্তার ঠেকিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছেন। তার পরই কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানালেন রথীনবাবু।
অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়লেও আমাদের দেশে যখন কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়নি সেই সময় বিশ্বজুড়ে এই অসুখের উপসর্গ সবিস্তার জেনে নিয়ে হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক গবেষকরা কাজ শুরু করেন। এর আগে ২০০৯ সালে এইচ১এন১ ভাইরাস, অর্থাৎ সোয়াইন ফ্লু রোগীদের ওপর আর্সেনিক নামের হোমিয়োপ্যাথি ওষুধটি প্রয়োগ করে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়া গিয়েছিল।
সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব রিসার্চ ইন হোমিয়োপ্যাথি থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানা গিয়েছে যে আর্সেনিক হোমিয়োপ্যাথি ওষুধটি শ্বাসনালীর মিউকাস মেমব্রেনকে সুরক্ষিত রাখতে এবং ইমিউনো প্রোটেকটিভ অ্যাকশন বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। রথীন চক্রবর্তী এ-ও জানালেন যে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে জাপানি এনসেফেলাইটিসের এক বিশেষ স্ট্রেনের ওপর হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে ২০০৭-২০১২ সাল পর্যন্ত ইন ভিট্রো ও ইন ভিভো স্টাডি করা হয়েছিল। সেখানে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের অ্যান্টিভাইরাল গুণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের সাহায্যে একই সঙ্গে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি ভাইরাসের বাড়বৃদ্ধি আটকে দেওয়া যায় বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। আর এই কারণেই কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক তাদের প্রচারিত অ্যাডভাইসরিতে করোনা প্রতিরোধে আর্সেনিক অ্যালবাম ৩০ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানালেন রথীনবাবু। আর্সেনিক ছাড়াও রাস্টাক্স সমেত বেশ কিছু ওষুধ শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়িয়ে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বেশ কিছু কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর ওপর হোমিয়োপ্যাথি ওষুধ প্রয়োগ করে দ্রুত তাঁদের সুস্থ করে তোলা গিয়েছে বলে জানালেন রথীনবাবু।
করোনা আক্রান্ত অল্প উপসর্গ নিয়ে আসা অনেক রোগীকে বাড়িতে রেখে হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের সাহায্যে সুস্থ করে তুলেছেন বলে দাবি করলেন হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক প্রণব মল্লিক। তবে তিনি এ-ও জানালেন যে শুধু ওষুধ খেয়ে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। মেনে চলতে হবে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধিও। মাস্ক পরে বাইরে বেরনোর পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। অযথা মুখে, নাকে বা চোখে হাত দেওয়া চলবে না। বাড়ি ফিরে বা খাবার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে রগড়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। বাইরের পোশাক ছেড়ে পরিচ্ছন্ন হয়ে বাড়িতে থাকতে হবে। বয়স্ক ও শিশুদের সংক্রমণের হাত এড়াতে বাইরে বেরনো বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়ার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে বলে জানালেন প্রণববাবু। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে কোনও প্রতিরোধ ব্যবস্থাই কখনও একশো শতাংশ কার্যকর হয় না। তাই ওষুধের ব্যবহার ও সব রকম বিধিনিষেধ মেনে চলার পরেও যদি ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে বলে আশঙ্কা করেন বা কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে অবশ্যই রোগ গোপন না করে ডাক্তার দেখাতে বললেন প্রণব মল্লিক।