আশি বছরের বৃদ্ধের মতো শিশু বায়জিদকে হাসপাতালে ভর্তি
মাগুরায় বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু বায়জিদ শিকদারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বায়জিদের বয়স মাত্র চার বছর হলেও, তার শরীরের আশি বছরের বৃদ্ধের মতো দেখায়। কিন্তু তার চাহনি, অঙ্গভঙ্গি অনেকটা বৃদ্ধ মানুষের মতো। শরীর এর মধ্যেই কুঁজো হয়ে গেছে। ঝুলে পড়েছে শরীরের চামড়া।
ডাক্তারদের ধারণা, অত্যন্ত বিরল এবং জটিল কোন জেনেটিক রোগে আক্রান্ত বায়জিদ। এ ধরণের বিরল ‘জেনেটিক ডিজঅর্ডারে’ আক্রান্ত আরও একশোর বেশি শিশু আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
ডাক্তারি ভাষায় এর নাম ‘প্রোজেরিয়া’ বা ‘হাচিনসন-গিলফোর্ড প্রোজেরিয়া সিনড্রোম’।
মূলত এই রোগে আক্রান্তরা দ্রুত বুড়িয়ে যেতে থাকে, স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ছয়গুন দ্রুত হারে। তবে সে এই রোগটিতে আক্রান্ত,নাকি অন্য কোন সমস্যা রয়েছে, সেটি পরীক্ষার নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা।
বাবা লাভলু শিকদার আর মা তৃপ্তি খাতুনের সঙ্গে বায়জিদ
তবে বায়জিদ শিকদার এই রোগেই আক্রান্ত কিনা, বা তার অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা, সেটি পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই জানা যাবে বলে চিকিৎসকরা বলছেন।
চিকিৎসার জন্য শনিবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তার চিকিৎসায় ছয় সদস্যের একটি বোর্ডও গঠন করা হয়েছে।
এই ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ”আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি, এটা একটি জেনেটিক রোগ। তবে মনে হচ্ছে, এটা তেমন কিছু করা সম্ভব হবে না। তবে বোর্ড বসার আগে নিশ্চিত করে কিছু বলাও যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করব সার্জারির মাধ্যমে তার চামরা ঠিক করে দিতে, যেমনটা বিদেশে বয়স্কদের মুখের চামড়া ঠিক করা হয়।”
তবে কিভাবে এই সমস্যাটির সমাধান করা হবে, সেটি বোর্ডের সদস্যরা বসে ঠিক করবেন বলে তিনি জানান।
এর আগে এই হাসপাতালে চিকিৎসা পেয়েছেন আরেক বিরল রোগে আক্রান্ত, বৃক্ষমানব হিসাবে পরিচিত আবুল বাজানদার। তিনি এখন অনেকটাই আরোগ্যের পথে।
কথাবার্তা শিশুর মতো হলেও, বায়জিদ দেখতে ৮০বছরের বৃদ্ধের মতো
বায়জিদের বাবা লাভলু শিকদার আর মা তৃপ্তি খাতুন থাকেন মাগুরার খালিয়া গ্রামে। বায়জিদ তাদের প্রথম সন্তান। ২০১২ সালের ১৪ই মে মাগুরার এক সরকারি হাসপাতালে বায়জিদের জন্ম দেন তৃপ্তি খাতুন।
প্রথম যখন সদ্যজাত শিশুর মুখ দেখলেন, চমকে উঠেছিলেন তারা। একটা কংকালসার ছোট্ট দেহের ওপর ঝুলে আছে চামড়া। ভড়কে গেলেন চিকিৎসকরাও।
এরপর এই হাসপাতাল সেই হাসপাতাল ছোটাছুটি। কিন্তু কেন একটি নবজাতক শিশুর চেহারা এমন বুড়ো মানুষের মতো, কেন তার শরীরের চামড়া এখনই এমন ঝুলে পড়েছে, বলতে পারলেন না কেউই।
বিরল রোগ প্রোজেরিয়াঃ
বায়জিদের সব শারীরিক লক্ষণ মিলে যায় বিরল রোগ প্রোজেরিয়ার সঙ্গে, যদিও এখনো বাংলাদেশের কোন ডাক্তার সেটা লাভলু শিকদার বা তার স্ত্রীকে বলেন নি।
বাড়ীর উঠোনে ফুটবল খেলছে বায়জিদ
প্রোজেরিয়া রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৬টি দেখে এই রোগে আক্রান্ত ১৩৪ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। এটি বিশ্বের বিরলতম রোগগুলোর একটি।
খুব সহজ করে বলতে গেলে, প্রোজেরিয়ায় আক্রান্তদের বয়স বাড়ে খুবই দ্রুত, স্বাভাবিকের তুলনায় বহুগুণ বেশি হারে। ফলে এরা সাধারণত ১৪ বছরের মধ্যেই মারা যায়। তবে এই জেনেটিক কন্ডিশনে আক্রান্ত শিশুদের বুদ্ধিমত্তা কিন্তু আর দশটা শিশুর মতই।
লাভলু শিকদার চান, তার ছেলেকে আর দশটা শিশুর মতো সুস্থ করে তুলতে। কিন্তু তার আর্থিক সামর্থ্য নেই। কারও সাহায্য পেলে ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন, সেটাই তার আশা।
লাভলু শিকদার রঙ মিস্ত্রীর কাজ করেন। টানা-টানির সংসার। সন্তানকে দেখাতে গিয়েছিলেন ফরিদপুরের হাসপাতালে। এর বেশি সাধ্য নেই তার।