প্রেমের টানে উধাও ৯ সন্তানের জননী রিনা :: স্বামীর বিরুদ্ধে শ্বশুরের নারী নির্যাতন মামলা
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ প্রেম মানে না জাতকূল ধনী দরিদ্র উঁচু নিচু। এটা সবার জানা ছিল। কিন্তু প্রেমের কাছে পেটের সন্তানের প্রতি দরদও মূল্যহীন!!
প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে উধাও হয়ে এ সত্যটা স্থাপন করেছে সরাইলের ৯ সন্তানের জননী সুন্দরী গৃহবধূ রিনা বেগম (৩৪)। সন্তানদের স্বামীর কাছে রেখেই চিকিৎসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে ফিরে যায়নি আদৌ। চাঞ্চল্যকার এ ঘটনাটি ঘটেছে গত ২ জুলাই বৃহস্পতিবার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামে।
স্ত্রীর সন্ধানে চারিদিকে পাগলের মত ঘুরছে স্বামী রহিম খান (৩৭)। মায়ের জন্য সর্বক্ষণ চিৎকার করে কাঁদছে ছয় শিশু সন্তান। দুই বছরের শিশু মারুফ খান মায়ের বুকের দুধের জন্য ছটফট করছে সর্বক্ষণ। স্বামীর বাড়ির লোকজন বলছে পর পুরুষের হাত ধরে পালিয়েছে রিনা। ৫ জুলাই রোববার সরাইল থানায় এ বিষয়ে একটি জিডি করেছেন স্বামী রহিম খান।
আর ঘটনার সাত দিন পর গত বৃহস্পতিবার স্বামী শ্বাশুড়ির বিরোদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেছে রিনার পিতা রুস্তম আলী।
স্বামীর পরিবার, জিডি ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, গ্রামের আলগাবাড়ির বাসিন্দা রহিম ইটভাটার সর্দার। ১৪ বছর আগে ভালবেসে বিয়ে করেন একই গ্রামের দরিদ্র পরিবারের কন্যা রিনাকে। ভালই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। দূর্ভাগ্য, জন্মের পরই পরপর চারটি সন্তান তাদের মারা যায়। পরে সুমা (০৯) নামের মেয়েটিকে তারা দত্তক আনেন। এর ২/১ বছর পরই রিনা একে একে তিন মেয়ে ও তিন ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। সুমা পড়ছে তৃতীয় শ্রেণীতে আর শান্তা (০৮) দ্বিতীয় শ্রেণীতে। অপর চার শিশু সন্তান হচ্ছে কামরুল (০৬), রিপা (০৫), শারুখ খান (০৩) ও মারুফ খান (০২)। তারা প্রত্যকেই অবুঝ। কোলের সন্তান মারুফ এখনো মায়ের বুকের দুধ পান করে।
গত ২ জুলাই সকাল ৯টা। রিনা ঘুম থেকে উঠেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে স্বামীর কাছে টাকা চায়। স্বামী তাকে ১’শ টাকা দেয়। পথে রিনার বড় ভাই জাকিরের (৩৫) সাথে দেখা হয়। তার কাছ থেকেও ২০ টাকা চেয়ে নেয়। ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত রিনা আর বাড়ি ফিরেনি।
রহিম হাসপাতাল, আত্মীয় স্বজন সহ পরিচিত সকল জায়গায় খুঁজ করেও রিনাকে পায়নি। পরে খাওয়া ঘুম ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন সূত্রধরে স্ত্রীকে খুঁজে কোথাও পায়নি। ওদিকে ছয়টি শিশু মায়ের জন্য সর্বক্ষণ ছটফট করছে। দাদী মাহফুজা বেগম (৫৭) তাদের আগলে রেখেছেন। গত ৫ জুলাই রহিম তার স্ত্রী রিনা নিখোঁজ মর্মে থানায় একটি জিডি করেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয় ৫ ফুট উচ্চতা ও গোল আকৃতি মুখ মন্ডলের অধিকারি রিনা ছিল সুন্দরী। রহিমের পরিবার ও একাধিক প্রতিবেশী জানান, রমজানের ১০/১২ দিন আগে রিনার শিশু কন্যা রিপাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। রিপার সাথে রিনা ১৫ দিন সেখানে অবস্থান করেছিলেন। সেখানে খাদ্যের ঠিকাদারের লোক আজিজের সাথে পরিচয় হয় রিনার। বিবাহিত আজিজের মূল বাড়ি রংপুরে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে জেলা সদরে ভাড়া বাসায় থাকে আজিজ। আজিজকে ভাই ডেকেছে রিনা। সম্প্রতি তাদের সম্পর্ক গভীর হয়ে উঠে। সম্ভবত: ওই আজিজের হাত ধরেই রিনা স্বামী সন্তানদের মায়া ত্যাগ করে ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। রিনার ভালবাসার কাছে দুধের শিশুর মায়া মমতা কোন প্রতিক্রিয়া জাগায়নি।
এটা একা ইতিহাস। এ বিষয়ে জানতে আজিজের মুঠোফোনে (০১৭২১-৩০৫১১৪) ফোন দিলে রিসিভ করেন তার স্ত্রী। তিনি বলেন, আমার স্বামী সম্পর্কে এমন একটি ঘটনা ২/১ দিন ধরে শুনতেছি। তবে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ঘটনার সাত দিন পর রিনার বাবা রুস্তম আলী বাদী হয়ে স্বামী রহিম খান ও শ্বাশুড়ি মাহফুজা বেগম সহ তিন জনকে আসামী করে নারী নির্যাতন আইনে গত বৃহস্পতিবার একটি মামলা করেছেন।
জিডি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোঃ মশিউর রহমান বলেন, এখনো কোন ক্লু পায়নি। তদন্ত চলছে।