Main Menu

সরাইলে খাস পুকুর ইজারা; রাজনৈতিক নেতারা এখন মৎস্যজীবি

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে চলছে খাস পুকুর ইজারা দেওয়ার পক্রিয়া। প্রকৃত মৎস্যজীবিরা এ পুকুর পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। পুকুর ইজারা পেতে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধি গায়ক (শিল্পী) ও রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা এখন সেজে বসেছেন মৎস্যজীবি। আর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদেরকে অডিট রিপোর্ট ও প্রত্যয়ন পত্র দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা। এরপর রয়েছে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের তৈরী দালালদের দৌরাত্ম্য।

ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের “জাল যার, জলা তার” শ্লোগানটি। যুব উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে সরকারি জলমহাল নীতি মালা হওয়ার পর ইজারার পুরো দায়দায়িত্ব পায় নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর। পাল্টে যায় সমিতির নাম ও সদস্যদের ধরন।“জাল যার জলা তার”- এ শ্লোগানকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেই সরকার নতুন নীতিমালা প্রনয়ন করেন। কেবল মাত্র যাদের জাল আছে এবং মাছ চাষ করে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তাদের জন্যই এ নীতিমালা। তাই যুব নয়, কেবল মাত্র সত্যিকার মৎস্যজীবিদের নিবন্ধিত সমবায় সমিতিকে সরকারি খাস পুকুর ইজারা দেওয়ার আইন হয়। উপজেলায় তখন ছিল মাত্র ১৫টি প্রকৃত মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। পুকুর পাওয়ার লোভে নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতারাতি মৎস্যজীবি সেজে বসেন সারের ডিলার, ব্যবসায়ী, ইউপি সদস্য, বাউল শিল্পী, গায়ক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা কৌশলে কিছু সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজনকে নাম মাত্র সদস্য করেন। পরে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সাথে তদবির ও গোপন যোগসাজসে নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিয়ে নেন নিবন্ধন। অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখেন প্রকৃত মৎস্যজীবিরা। নিবন্ধনের কাজে লেনদেন হয় মোটা অংকের টাকার। একটি নিবন্ধনের জন্য সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সমিতির সম্পাদক ও রাজনৈতিক সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান, সমবায় অফিসের ওই সময়ের কর্তা ব্যক্তি নিবন্ধনের পুরো কাজের জন্য ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। জেলা অফিস সহ সব দায়িত্ব উনার। অনেকের কাছ থেকে আরো বেশী ও নিয়েছেন। অডিট রিপোর্ট ও মৎস্যজীবি হিসেবে প্রত্যয়ন পত্র নেওয়ার সময় আরেকটি দফতরে দিতে হয় টাকা। প্রকৃত মৎস্যজীবিরা ঠিকমত দফতরই চিনেন না। চাহিদা মাফিক টাকাও দিতে পারেন না। উপজেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের পর দ্রুত অকার্যকর হয়ে পড়েছে ৬০ টি যুব উন্নয়ন সমিতি।  অদ্যাবধি পর্যন্ত নিবন্ধন হয়েছে ৩২টি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। আগে ছিল ১৫টি। মোট সমিতি এখন ৪৭ টি। নতুন নিবন্ধিত অধিকাংশ সমিতির সভাপতি/সম্পাদক ও সদস্য রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, ব্যবসায়ী ইউপি সদস্য। তাদের লক্ষ্য শুধু সরকারি পুকুর নিজের দখলে নিয়ে বাণিজ্য করা। ফলে পদে পদে শোষিত এবং বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার প্রকৃত মৎস্যজীবি ও জেলেরা। সুযোগে টাকা কামাই করছেন এক শ্রেণীর প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতা কর্মী ও আমলারা। এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবিরের মুঠোফোনে (০১৮১৬-২৬৭০৭৪) একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আইন উদ্দিন আরিফ বলেন, প্রকৃত মৎস্যজীবিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এমপি ও মৎস্য কর্মকর্তা প্রত্যয়ন পত্র দেওয়ার পর আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। অডিট রিপোর্ট আমরা দেয়। আমার সময়ে মাত্র একটি সমিতি নিবন্ধন হয়েছে। অধিক টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জলমহাল ইজারা কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, ২০০৯ সালের নীতিমালার বাহিরে কিছু করা হবে না। একজন সদস্যও যদি প্রকৃত মৎস্যজীবি না হয় ওই সমিতির আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।


-সঞ্জয়






Shares