শেখ হাসিনা: একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক
ঝড়-ঝঞ্ঝা,হুমকি-ধমকি কোনোটিই টলাতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বিচক্ষণতার সঙ্গে দেশ ও জনগণের স্বার্থে যেটা যখন প্রয়োজন— করেছেন সাহসের সঙ্গে। বিডিআর বিদ্রোহের মতো দেশবিরোধী চক্রান্ত, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, হেফাজতে ইসলামের অরাজক পরিস্থিতি, সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের প্রচেষ্টা ও সরকার উৎখাতে টানা তিন মাসের আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন তিনি। সরকারকে দাঁড় করিয়েছেন মজবুত ভিত্তির ওপর। দলকে টানা তিনবার ক্ষমতায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্য কুড়িয়েছেন সুনাম। দেশের জন্য বয়ে এনেছেন গৌরব ও সাফল্য। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জাতিসংঘের মতো শক্তিধর সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রের চাপ মোকাবিলা করেছেন। ভারতের মতো বৃহৎ প্রতিবেশীর কাছ থেকে দেশের পক্ষে ন্যায্য অধিকার আদায় করেছেন।
রাষ্ট্র পরিচালনায় সাড়ে ১১ বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দেশের চলমান উন্নয়নের ধারার কথা তুলে ধরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রধানমন্ত্রীকে বর্তমান বিশ্বের একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দক্ষতা ও বিচক্ষণতা দিয়ে এখন বিশ্বমানের নেত্রীর পর্যায়ে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।
বর্তমান সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ নিয়ে জনমনে বিস্তর অভিযোগ থাকলে ব্যক্তি শেখ হাসিনা রয়েছেন এসবের ঊর্ধ্বে। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতার বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম তাকে বিশ্বের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নেতার স্বীকৃতি দিয়েছে।
ক্ষমতায় থাকার এই তিন মেয়াদে সরকার মাঝেমধ্যে কিছু ইস্যুভিত্তিক সমালোচনার মধ্যে পড়লেও ব্যক্তি শেখ হাসিনা রয়েছেন সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে। দেশের প্রতিষ্ঠিত একাধিক গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও দেখা গেছে, ধারাবাহিকভাবে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।
বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতির মধ্যেও গত কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পাশাপাশি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে গেছে দেশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা, কৃষি, খাদ্য ও তথ্যপ্রযুক্তিতে অভূতপূর্ব উন্নতি, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি, রেকর্ড ভাঙা রিজার্ভ, দারিদ্র্য হ্রাস, জনগণের জীবনমান উন্নয়ন— প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য। চলমান করোনা সংক্রমণও শেখ হাসিনা মোকাবিলা করেছেন শক্ত হাতে। উন্নত দেশগুলো যেখানে করোনা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো হয়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কম। করোনার প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতেও শেখ হাসিনর সরকার রিজার্ভ ও রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড গড়েছে। করোনায় খাদ্য ও অর্থ সহায়তা নিয়ে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমনত্রী।
বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী মেয়াদকালে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সংগঠন- ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোশিয়েশন (সিপিএ)সহ ডজনখানেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব পেয়েছে, এসবই শেখ হাসিনার কৃতিত্ব। পাশাপাশি স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও নারী উন্নয়নসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে পেয়েছে বিশ্বের রোল মডেলের স্বীকৃতি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পেয়েছে একাধিক পুরস্কারও।
আইনের শাসনের প্রশ্নে অনঢ় অবস্থান, আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর, বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ— সবই করছেন তিনি জনগণের প্রতি কমিটমেন্ট থেকে। মেট্রোরেল ও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় বড় মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমন, জলবায়ুসহ একাধিকে ইস্যুতে জাতিসংঘ অধিবেশনে তার দেওয়া প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিশ্ব নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রসংশা করেন। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এ সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার ও বাস্তুচ্যুত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের কাছে প্রসংশা পেয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আইনি লড়াই চালিয়ে অধিকার আদায় সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতার কারণে মিটেছে ৩৫ বছর ধরে অমিমাংসিত থাকা বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত নিয়ে জিইয়ে থাকা সমস্যা।
শেখ হাসিনাকে সফল রাষ্ট্রনায়ক আখ্যায়িত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিনি অন্তর থেকে যেটা বিশ্বাস করেন— সেটাই করেন বলেই এই সফলতা পাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিটি কাজ করেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যাও ঝুঁকি নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তার এই সাহসি সিদ্ধান্তে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্বল থেকে উজ্বলতর হচ্ছে।’
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুমোদন, জল ও স্থল সীমানার সমাধানের কথা তুলে ধরে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার যোগ্য ও আপসহীন নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সবধরনের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলীয় নেতা ও সরকার প্রধান হিসেবে সব সংকীর্ণতার নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে শেখ হাসিনা আজকের জায়গায় এসেছেন।’
করোনা মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘করোনা সংকটকে মোকাবিলা করে দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তাতে শেখ হাসিনা এখন অবিকল্প নেতৃত্ব। তার নেতৃত্বের কোনও বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। ’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনা নিঃসন্দেহে একজন অবিসংবাদিত নেত্রী। গুণে, মেধায়, যোগ্যতা এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে তিনি নিজেকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছেন। তার দৃঢ়চেতা মনোভাব তার অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। নেতৃত্বদান এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দলে এবং রাষ্ট্রে তার সঙ্গে তুলনা করার মতো দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তিত্ব নেই। তিনি এককভাবে করোনা মোকাবিলা করছেন। তার সঙ্গে চলার মতো কাউকে দেখি না।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আমরা যেমন বলি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। তেমনই শেখ হাসিনার জন্ম না হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের কাজ জাতি চোখে দেখতো না। শেখ হাসিনার জন্মের সফলতা ও স্বার্থকতা তার কর্মের মধ্য দিয়ে। ’
বঙ্গবন্ধুর হত্যা পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে এই প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, ‘দেশে রাজনীতি যখন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে ছিল, রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরিত্র হনন, দল ভাঙার রাজনীতি, যে ভাঙনের হাত থেকে আওয়ামী লীগও রেহাই পাচ্ছিল না। তেমনই একটি পরিস্থিতিতে দলের কেবল আরেকবার ভাঙন ঠেকাতেই নয়, দলকে সংগঠিত করার জন্যই তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি দেশে আসার পর কেবল আওয়ামী লীগ নয়, এদেশের মানুষও নতুন জীবন লাভ করে। তার নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামে আমরা সফল হয়েছি। বঙ্গন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে এবং হচ্ছে। সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশালী জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে।’
এ সময়ে শেখ হাসিনা নিজেও রাষ্ট্রনায়কোচিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকজন রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন বলে আমু মন্তব্য করেন।সূত্র::বাংলা ট্রিবিউন