পবিত্র মদিনা শরিফসহ তিন সৌদি শহরে বোমা হামলায় নিহত ৭, হামলাকারী পাকিস্তানের নাগরিক (ভিডিও)
ডেস্ক ২৪:: সৌদি আরবের পবিত্র মদিনা শরিফেসহ তিন সৌদি শহরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় চারজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এখন পর্যন্ত কেউ এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।এ ঘটনায় দুই হামলাকারীও নিহত হয়েছে।
গতকাল সোমবার ইফতারের সময় পবিত্র মসজিদে নববির কাছে এ হামলা হয়। এ ছাড়া সৌদি আরবের আরও দুটি স্থানে গতকাল আত্মঘাতী বোমা হামলা ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, নিরাপত্তাকর্মীরা যখন ইফতার করছিলেন তখন হামলাকারী সেখানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা যায়, মসজিদে নববীর নিরাপত্তা চৌকির কাছে একটি গাড়িতে আগুন জ্বলছে। তা থেকে ফুলকি ছড়িয়ে পড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা একটি ভিডিওতে দুজন নিরাপত্তা কর্মীকে মাটিতে লুটিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
তবে আলজাজিরা জানিয়েছে, মদিনায় বিস্ফোরণের মূল কারণ এখনও জানা যায়নি। কেউ কেউ বলছে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী এর পেছনে দায়ী আবার অনেকেই বলছেন গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফলে মসজিদে নববীর বিস্ফোরণটি সংঘটিত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, বিস্ফোরণের স্থানে তারা বিভিন্ন দেহাবশেষ ছড়িয়ে থাকতে দেখেছেন।
সৌদি আরবে সোমবার দুইটি শহরে ব্যর্থ হামলার পর মদিনায় পরিচালিত হামলায় সফলতা পায় আত্মঘাতী হামলাকারী। জেদ্দা এবং কাতিফ শহরের হামলায় কেবল হামলাকারীরাই নিহত হয়েছেন।
৩টি শহরে হামলার প্রথমটি সংঘটিত হয় জেদ্দায়। দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সৌদি শহরে যুক্তরাষ্ট্র কনস্যুলেটের কাছে বিস্ফোরণে এক আত্মঘাতী নিহত এবং দুজন নিরাপত্তাকর্মী আহত হন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, সৌদি আরবে কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম বিদেশিদের লক্ষ্য করে জেদ্দায় এই হামলা হয়েছে। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর-জেনারেল মনসুর আল-তুর্কি এক বিবৃতিতে জানান, স্থানীয় সময় মধ্যরাত সোয়া ২টার দিকে ডা. সুলেইমান ফাকিহ হাসপাতালের গাড়ি রাখার স্থানে অবস্থানকারী এক ব্যক্তির ব্যাপারে সন্দেহ হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। তারা সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির কাছাকাছি গেলে হাসপাতালের গাড়ি রাখার স্থানে ওই ব্যক্তি নিজের শরীরে বেঁধে রাখা বিস্ফোরক বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটান।
এদিকে সৌদি আরবের জেদ্দায় মার্কিন কনস্যুলেটের কাছে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী পাকিস্তানের নাগরিক বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হামলাকারীর নাম আব্দুল্লাহ কালজার খান। এক যুগ যাবৎ স ব্যক্তিগত গাড়িচালক আব্দুল্লাহ কালজার পরিবার নিয়ে জেদ্দায় বসবাস করছিলেন।
জানা যায়, সোমবার সেহেরির সময় মার্কিন কনস্যুলেট সংলগ্ন হাসপাতালের পার্কিং লটের কাছে নিজের গাড়িটি পার্ক করে কালজার। এরপর গাড়ি থেকে বেরিয়ে সে হাসপাতালের বিপরীতে অবস্থিত কনস্যুলেট লক্ষ্য করে এগিয়ে যাচ্ছিল।
তার গতিবিধি সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন এবং তার দেহ তল্লাশির জন্য এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু তারা পৌঁছানোর আগেই হামলাকারী নিজের দেহে থাকা সুইসাইড বেল্টে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। তবে তাদের আঘাত তেমন মারাত্মক নয়।
এদিকে এই ঘটনার পর সৌদি আরবে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এ ছাড়া তাদের সে দেশে ভ্রমণ করার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। এর আগে ২০১৪ সালে সৌদি নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে ভয়াবহ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল। এর আগে ২০০৪ সালে জেদ্দার এই কনস্যুলেটে বিদ্রোহী-জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল। ওই ঘটনায় ৯ জন নিহত হন।
এরই প্রেক্ষিতে গতবছরের মার্চ মাসে সৌদিতে মার্কিন দূতাবাসের প্রধান কার্যালয় বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে কেবল জেদ্দা ও দাহরানে দুটি কনস্যুলেট চালু রয়েছে।
সূত্র – আলজাজিরা।