আনন্দবাজার:: মঙ্গলবার ঢাকার কল্যাণপুরের জঙ্গি ডেরায় পুলিশের গুলিতে নিহত ৯ জনের মধ্যে এক তরুণ মার্কিন নাগরিক। সেজাদ রউফ অর্ক নামে এই তরুণ গুলশনের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে নিহত হওয়া নিবরাস ইসলামের বন্ধু ও সহপাঠী। নিবরাসের মতোই ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ থেকে সে নিখোঁজ ছিল। পুলিশ নিহত জঙ্গিদের যে ছবি প্রকাশ করেছে, তা দেখেই অর্ককে চিহ্নিত করেন তার বাবা তৌহিদ রউফ। পরে মেডিক্যাল কলেজের মর্গেও তিনি যান। তৌহিদ পুরোপুরি নিশ্চিত না-হলেও পুলিশ নিহতদের তালিকায় অর্কর নাম রেখেছে।
কল্যাণপুরে জঙ্গি ডেরায় অভিযানের পরে গুলিতে নিহতদের ছবি কালই প্রকাশ করা হয়। এর পরে বুধবার রাতে ৭ জনের পরিচয় জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। তারা সকলেই ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া তরুণ বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী সাত জঙ্গির তিন জনই ঢাকার বাসিন্দা। বাকি চার জন সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, পটুয়াখালি ও নোয়াখালির ছেলে।
ঢাকার বসুন্ধরার ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে সেজাদ রউফ অর্ক ওরফে মরক্কো ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবরাসের সঙ্গেই পড়ত। পরে দু’জনে এক সঙ্গে মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায়। শাহবাগ থানায় একটি মামলায় নিবরাস ও অর্ক— দু’জনেই অভিযুক্ত ছিল। তার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জানুয়ারির পরে তার আচরণে বেশ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে। এর পরে ফেব্রুয়ারিতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি। একই দিনে নিখোঁজ হয়েছিল নিবরাসও। অনেক জায়গায় খোঁজখবর করার পরে ৬ ফেব্রুয়ারি অর্কর পরিবার পুলিশে ডায়েরি করে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান এ দিন দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, ব্যবসায়ী তৌহিদ রউফ তাঁদের কাছে এসে জানান, ‘‘আমার নিখোঁজ ছেলে সেজাদ রউফ অর্ক কল্যাণপুরে নিহতদের মধ্যে রয়েছে বলে ছবি দেখে ধারণা হয়েছে।’’ মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তাও তৌহিদের সঙ্গে পুলিশের কাছে যান। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘‘অর্কর বাবা এসেছিলেন। এক জনের দেহ দেখে তিনি তাঁর ছেলের সঙ্গে মিল পেয়েছেন।’’ তৌহিদ পরে সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘মৃতদেহ দেখে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই। কিছু মিল রয়েছে। ডিএনএ টেস্টে সন্দেহের নিরসন হতে পারে।’’
গুলশন হামলার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিখোঁজ হওয়ার পরে নিবরাস ঝিনাইদহের একটি মেসে কয়েক মাস ছিল। সেখানে তার এক সঙ্গী আবির রহমানও ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জে ইদের জমায়েতে হামলা চালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছে। নিখোঁজ অর্কও ঝিনাইদহের ওই মেসে ছিল কিনা, পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে।
এরই মধ্যে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশে তাদের চারটি সেন্টার সাময়িক ভাবে বন্ধ করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। ঢাকায় কাউন্সিলের পরিচালক বারবারা উইকহ্যাম জানান, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তাঁদের কর্মী ও গ্রাহকরাও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় দু’টি এবং চট্টগ্রাম ও সিলেটের সেন্টার দু’টি তাঁরা সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।