Main Menu

ডালিম হোটেলের ‘ঘাতক’ থেকে ‘মিডিয়া টাইকুন’ মীর কাসেম

+100%-

dalim-hবিশেষ প্রতিবেদন: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গোটা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে যে গণহত্যার পর্ব চলেছিল তাতে সরাসরি জড়িত মীর কাসেম আলি৷ তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানি সেনাকে মদতকারী রাজাকার ও আলবদর নেতৃত্বের অন্যতম এই ব্যক্তি ‘চট্টগ্রামের ঘাতক’ বলেও কুখ্যাত৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার ৪৩ বছর হতে চলেছে, এখনও চট্টগ্রামের বাসিন্দারা মীর কাসেম আলির নাম শুনলে শিহরিত হন৷ তার অত্যাচার ও গুমখুনের নিদর্শন হয়ে রয়েছে বন্দর নগরীর কুখ্যাত ডালিম হোটেল৷

এই সেই টর্চার সেল ডালিম হোটেল

dalim-

ডালিম হোটেল টর্চার সেল:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভয়াবহ নাৎসি অত্যাচার কেন্দ্রগুলি নির্বিচারে খুন ও অত্যাচারের নিদর্শন হয়ে রয়েছে৷ আর চট্টগ্রামবাসীর কাছে ডালিম হোটেল সেরকমই অত্যাচারের কেন্দ্র৷ যাকে একবার এই হোটেলে নিয়ে যাওয়া হত তার বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা থাকত না৷ এই বাড়ির বিভিন্ন ঘর ছিল বিভিন্নরকম টর্চার সেল৷ আদতে বাড়িটির নাম মহামায়া ভবন৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় মীর কাসেম আলি এই মহামায়া ভবন দখল করে নাম দেয় ‘ডালিম হোটেল’। হোটেলের আড়ালে খোলা হয়েছিল টর্চার সেল। এখানেই ধরে আনা হতো মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সপক্ষের লোকদের। চালানো হতো অবর্ণনীয় নির্যাতন।

 

ফাইল: এভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের দেহ পাচার করা হত

el-1

মূলত বিকেল থেকে শুরু হত অপারেশন৷ রাতভর ভয়াবহ অত্যাচারে মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দেহ ভোরের দিকে পাচার করা হত৷ সেরকমই এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমউদ্দিন৷ তাকে খুনের ঘটনা বেঁচে ফেরা কয়েকজন বন্দি চাক্ষুষ করেছেন৷ কাসেম আলির বিরুদ্ধে যত মানবতা বিরোধী অভিযোগ আনা হয়েছে তার অন্যতম কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমউদ্দিনকে খুন৷ ডালিম হোটেলের ভিতরেই কাসেম আলির নির্দেশে এই কিশোরকে পিটিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়৷ পরে লাস পাচার করা হয়েছিল৷ এছাড়াও ডালিম হোটেলে ঠিক কতজনকে খুন করা হয়েছে তার সঠিক কোনও হিসেবে মেলেনি৷ অন্যদিকে ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও কাসেম আলীর সহযোগীরা চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে কয়েকশ জনকে নির্বিচারে খুন করে৷ মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে মীর কাসেম আলি পাকিস্তান ও আলবদর বাহিনীর আস্থাভাজন হয়ে ওঠে৷ তাকে সংগঠনের তৃতীয় শীর্ষ নেতা করা হয়। নৃশংসতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে চট্টগ্রামবাসী তাকে ‘বাংলা খান’ বলেও ডাকতেন৷

ফাইল: মায়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সশস্ত্র শিবিরে মীর কাসেম আলি

kasem_rohinga

জামাতের অার্থিক যোগানদাতা:
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মীর কাসেম আলী দেশত্যাগ করে৷ পরে লন্ডনে তার খোঁজ মেলে৷ ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানকে খুনের পর বাংলাদেশ ফেরে মীর কাসেম আলি৷ এরপর জামাত ইসলামির শাখা সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরে অন্যতম নেতা ও জামাতের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হয়৷ ধীরে ধীরে কোটিপতি ব্যবসাদার হয়ে ওঠে কাসেম আলি৷ একে একে ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালের মতো ইসলামি দুনিয়ার সাহায্যপ্রাপ্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তা হয় এই কুখ্যাত ব্যক্তি৷

তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশে জামাত ইসলামির তার প্রচার মাধ্যমকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তুলেছিল৷ জামাত মতাদর্শের ‘দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের’ চেয়ারম্যানও এই মীর কাসেম আলি৷ ধর্মীয় উসকানি মূলক বার্তা ছড়ানোর অভিযোগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ‘দিগন্ত টিভি’র সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়৷ তার আগে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির সংবাদপত্র ‘নয়া দিগন্ত’ কার্যালয় থেকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় মীর কাসেম আলিকে গ্রেফতার করা হয়৷বাংলাদেশ সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহবুবে আলম জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট মীর কাসেম আলির ফাঁসির রায় বহাল রাখায় আর একটি মাত্র প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে৷ আইন মোতাবেক এবার মীর কাসেম আলি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন৷ রাষ্ট্রপতি সেই আবেদন খারিজ করলেই ফাঁসি দেওয়া হবে কাসেম আলিকে৷






Shares