Main Menu

মুক্তিযুদ্ধের গল্প: একজন বিদেশীর পাগলাটে ভালোবাসা-

+100%-
করাচি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট
১৫ঘ১৫মি পাকিস্তান টাইম

করাচি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের চিফ কন্ট্রোলার জামসেদ পায়চারী শুরু করেছেন। তার ভ্রু কোচকানো, নাকের নিচে চওড়া গোফ ঘামছে হালকা। তিনি চিন্তিত।

জামসেদ এই মুহুর্তে আছেন কন্ট্রোল টাওয়ারের চূড়ায়। তার সামনে একগাদা যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে থাকা একদল লোক তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে – পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পাকিস্তানের বিমান এবং অন্যান্য দেশের বিমান এবং বিমানবন্দরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আপডেট তৈরী করছে এইসকল লোক। জামসেদ অবশ্য তাদের কারও দিকে মনযোগ দিচ্ছেন না, তিনি লক্ষ্য করছেন তার সামনে বসে থাকা হালকা স্বাস্থ্যের ছেলেটাকে। সে ফ্রান্সের অর্লি বিমানবন্দরে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ৭২০ বোয়িঙ বিমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিমানটি প্যারিস টাইম এগারোটা পাচে ছেড়ে আসার কথা। পাকিস্তানে এখন বাজছে দুপুর সোয়া তিনটা, সে হিসেবে প্যারিসে এখন সোয়া এগারোটা। গত বিশ মিনিট হলো যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। রেডিওতে ঘ্যার ঘ্যার শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না।

‘পারা গেল?’ – জামসেদ প্রশ্ন করলেন।
‘না স্যার। রেডিও সিগন্যাল রিসিভ করছে না, অচল হয়ে গেছে হয়তো কোন কারণে।‘
‘অচল হবে কেন? নিশ্চয় বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কতক্ষন ধরে যোগাযোগ নেই?’
‘স্যার, ২টা ৫০ পর্যন্ত যোগাযোগ হয়েছে। যাত্রীরা উঠেছেন, টাওয়ার থেকে অনুমতি চা্ওয়া হয়েছে, অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল – কিন্তু স্যার তারপরই হঠাৎ সব বন্ধ। আমি স্যার তখন থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।‘
‘অর্লি এয়ারপোর্ট কি বলে?’
‘স্যারা তারাও কনফার্ম করতে পারছে না। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ‘
‘তুমি চিফ কন্ট্রোলারের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দা্ও, বলো আমি কথা বলবো’ – জামসেদ আবার পায়চারী করা শুরু করলেন। এমনিতেই দেশের অবস্থা ভালো না, এই সময় বিমান নিয়ে আবার কি ঝামেলা হলো। লক্ষন দেখে বিমান হাইজ্যাক ছাড়া তো আর কিছুই মনে হচ্ছে না। যদিও পরিস্কার করে বলা সম্ভব হচ্ছে না এখনো – প্যারিস কি বলছে তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। এর পেছনে যে ভারতের হাত নেই, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। প্যারিসে যোগাযোগ করতে পারলে হয়তো কিছু বোঝা যাবে।
‘স্যার, অর্লি এয়ারপোর্ট চিফ কন্ট্রোলার অনলাইন’ – ছেলেটির আহবানে জামসেদ এগিয়ে গেল।

অর্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, প্যারিস
১১ঘ৩০মি প্যারিস টাইম

মশিয়ে আলফনসো বেশ অবাক হয়েছেন হাইজ্যাকারের দাবী শুনে। দাবী শুনেই বোঝা যাচ্ছে এর পেছনে ভারতের হাত আছে। এমন একটি দিনে ঘটনাটা ঘটল যখন যখন পশ্চিম জার্মানি থেকে ভাইস চ্যান্সেলর উইলি ব্র্যান্ডট ফ্রান্স সফরে এসে পৌছেছেন। উদ্দেশ্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করবেন। ভাইস চ্যান্সেলর এর আগমন উপলেক্ষ্যে বিশেষ নজরদারি ছিল, জরূরী অবস্থায় যেনো কোন বিমান উঠা-নামা করতে পারে সে বিষয়ে প্রস্তুত অর্লি বিমানবন্দর। কিন্তু তাই বলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি ছিল না। ত্রুটি ছিল না সেটাও বলা ঠিক হচ্ছে না, কারণ সবার নজর এড়িয়ে একজন সন্ত্রাসী কিভাবে বিমানে উঠে পড়ল সেটাই প্রশ্নবোধক। সন্ত্রাসী একজন না একাধিক সে বিষয়েও কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। মোট যাত্রী ২৮ জন, তাদের মধ্যে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধও আছেন।

মশিয়ে আলফনসো অবশ্য সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিয়েছেন। যেমাত্র বিমানের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, সে মাত্রই তিনি বুঝেছেন গুরুতর কিছু ঘটেছে। তিনি বিমানবন্দরের দায়িত্বে পুলিশ কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করেছেন। তাদেরই একটা ফোর্স পিআইএ’র ৭২০বি বিমানের আশে পাশে অবস্থান নিয়েছে। হাইজ্যাকার চিঠি পাঠিয়েছে তাদেরই মাধ্যমে। মশিয়ে আলফনসো আবার পড়লেন চিঠিটা।

ছোট্ট চিঠি। হাতে লেখা এই চিঠিতে হাইজ্যাকার জানিয়েছে সে বিমানটা পাকিস্তানের একটা অংশের রিফিউজিদের জন্য ব্যবহার করতে চায়। তার কিছু দাবী দাওয়া আছে, সেগুলো মেনে নিতে হবে, অন্যথায় তার কাছে যে বোমাটি আছে সেটি সে উড়িয়ে দেবে। বিমানের নিরীহ যাত্রীসাধারণের মৃত্যুর জন্য সরকার দায়ী হবে।

আলফনসো অবশ্য নোট পেয়েই অর্লি পুলিশে যোগাযোগ করেছেন। পুলিশ কমিশনার তার দুজন ডেপুটি এবং ফোর্স নিয়ে এসে যাবেন আর কিছু সময়ের মধ্যেই। অবশ্য হাইজ্যাকারের দাবী কি সেটা জানা দরকার। কিন্তু যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না – কারণ রেডিও বন্ধ।

ঘর ঘর শব্দে রেডিও জীবন্ত হয়ে উঠল। পাইলট যোগাযোগ করছে। পাইলট ইংরেজিতে কথা বলছে।
‘স্যার, উনি জিজ্ঞেস করছেন তার দাবী মানা হবে কিনা?’
‘তাকে বলো, দাবী কি সেটা আগে জানা দরকার। তাছাড়া দাবী মেনে নেয়া না নেয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের নয়, সরকার এবং যথাযথ কতৃপক্ষ সেটা জানে।’
কিছুক্ষন চুপচাপ। পাইলট আবার কথা বলল – ‘তার দাবী ২০ টন মেডিকেল সামগ্রী এবং রিলিফ। এই বিমানে তুলে দিতে হবে, বিমান যাবে ভারতে। সেখানে কিছু পাকিস্তানি রিফিউজি আছে তাদের জন্য।’
‘তাকে বলো আমাদের সময় দরকার। এই মুহুর্তেই ২০টন সামগ্রী জোগাড় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
চুপচাপ। তারপর আবার – ‘উনি বলছেন এখনই উদ্যোগ নিতে। তিনি বা যাত্রীরা কেউ বিমান থেকে নামবে না। সামগ্রী পৌছাবে তারপর তিনি কিছু জিম্মিকে মুক্তি দিবেন।’

মশিয়ে আলফসনো নিশ্চিত হলেন, ভারতীয়দের হাত রয়েছে। পাকিস্তানের একটি অংশে কিছু বিদ্রোহ চলছে এবং সরকার তার দমন নিশ্চিত করছে, ফলে সেখানে কিছু রিফিউজি তৈরী হয়েছে। ভারত সরকার অবশ্য ভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছে। আলফসনো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন – পুলিশ কমিশনার আসলে বাকী সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।

অর্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, প্যারিস
১৩ঘ০০মি প্যারিস টাইম

আন্দ্রে প্যারেস্যুব খুব যে ভয় পাচ্ছিলেন তা নয়। তিনি একটি বিমানে উঠে বসেছেন এবং করাচি যাবার পরিবর্তে বিমানবন্দরেই আটকে আছেন এমন একটি বিমানে যেটি হাইজ্যাক করা হয়েছে – এত কিছু সত্ত্বেও তিনি খুব বেশী ভয় পাচ্ছিলেন না, তার মধ্যে একটা উত্তেজনা বোধ কাজ করছিল।

দুম করে উঠে হাইজ্যাকারকে কুপোকাত করে ফেলার ইচ্ছে যে তার একদমই হয়নি তা নয়, কিন্তু সেটা একদম প্রথম দিকে। হাইজ্যাকার ছেলেটা ফরাসী, একা। তার হাতে একটা নাইন মিলিমিটারে পিস্তল, কাধে একটা ব্যাগ। সেখান থেকে ইলেকট্রিকের তার বের হয়ে আছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি। কিন্তু মোটেও ভয় হচ্ছে না। কারণ হাইজ্যাকার ছেলেটা মোটেও ভয় দেখাচ্ছে না। তার বক্তব্য খুবই সাধারণ। পাকিস্তানের কিছু রিফিউজির জন্য তার রিলিফ দরকার, প্রায় ২০ টন। রিলিফ আসলেই সে জিম্মীদের মুক্ত করে দেবে। তার থেকে ভয়ের কিছু নেই। বিমানে একটা বাচ্চা মেয়ে আছে, বৃদ্ধ আছে একজন। হাইজ্যাকার ছেলেটা তাদেরকে সবার আগে মুক্তি দিবে বলে কথা দিয়েছে। রিলিফের প্রথম চালান আসলেই সে কিছু মানুষকে মুক্তি দিবে। সেই গ্রুপে আন্দ্রে থাকবে কিনা সেটা নিশ্চিত নয়।

ছেলেটা অবশ্য বারবার বলছে – এই রিলিফ অবশ্যই পাকিস্তানের বিদ্রোহীদের জন্য নয়। রিফিউজিদের জন্য। যদিও ছেলেটা মিথ্যে বলতেই পারে কিন্তু আন্দ্রে তাকে বিশ্বাস করছে, তাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে। একাই যে ছেলেটা একটা বোয়িং বিমান হাইজ্যাক করতে পারে, তার মধ্যে কেমন যেন একটা সততা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

অর্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, প্যারিস
১৪ঘ২০মি প্যারিস টাইম

সরকার আপাতত দাবী মেনে নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। মেডিকেল সামগ্রী আর রিলিফ নিয়ে একটা ট্রাক আধাঘন্টা আগে বিমানের কাছে পৌছেছে। বিমানে সেগুলো তুলে দেয়ার পরে আটজন জিম্মীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, এদের মধ্যে একটি শিশু এবং একজন বৃদ্ধ রয়েছেন। হাইজ্যাকার ছেলেটা দ্রুত তার দাবী পূরণ করার চাপ দিচ্ছে। বাকী জিম্মিদেরকে সে অন্য একটা বিমানবন্দরে নামিয়ে দেবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য হলেও বাকী সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে। অবশ্য ২০ টন সামগ্রী সরবরাহ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। এখন পর্যন্ত যা দেয়া হয়েছে তার পরিমান প্রায় আধা টন। আরও আধাটন সামগ্রী এবং রিলিফ যাচ্ছে পরের ট্রাকে। ট্রাক বোঝাই হচ্ছে, আর কিছুক্ষনের মধ্যেই ট্রাক রওয়ানা হয়ে যাবে।

পুলিশ কমিশনার হাজির হয়েছেন দেড় ঘন্টা আগে। তার সেরা অফিসাররা রয়েছে তার সাথে। কিন্তু বোমাসহ একটি ছেলেকে কুপোকাত করার কোন বুদ্ধি তার মাথায় আসছে না। ছদ্মবেশে অফিসারদেরকে পাঠানো যায়, কিন্তু যদি ছেলেটা ভুল করে বসে তবে তার অফিসারদেরসহ সব যাত্রীকে হারাতে হবে। বিনা যুদ্ধে এভাবে ছেড়ে দেবেন তাতেও মন সায় দিচ্ছে না। একটা ঝুকি নিয়ে ফেললে কেমন হয়?

অর্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, প্যারিস

১৭ঘ০০মি প্যারিস টাইম

মেডিকেল সামগ্রী এবং রিলিফ নিয়ে দ্বিতীয় ট্রাকটি হাইজ্যাক হওয়া বিমানের দিকে রওয়ানা হলো। ট্রাকের সাথে আটজন মানুষ। পোশাকে এরা সবাই রেডক্রসের কর্মী মনে হলেও তাদের সবার সাথে লুকানো অস্ত্র রয়েছে। এরা সবাই পুলিশের চৌকষ অফিসার। হাইজ্যাকার ছেলেটা ককপিটে অবস্থান করছে। এই টিমের দায়িত্ব হলো ছেলেটা কতটা ভয়ংকর সেটা বুঝে নেয়া। তারপর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিন্তু বাস্তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী সব ঘটলো না। একজন অফিসার ককপিটে ঢোকার সময় একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছিল বোধহয়। হাইজ্যাকার ছেলেটা দুম করে গুলি করে দিল। সেই গুলি অফিসারের ইউনিফর্ম ছিড়ে চামড়াকে রক্তাক্ত করে বেড়িয়ে গিয়ে দেয়ালে বিদ্ধ হলো। একটাই গুলি, দ্বিতীয়টা চালাবার সময় বা সুযোগ ছেলেটা পায় নি। হয়তো আরো গুলি ছুড়তে হতে পারে সেই ধারণাও তার ছিল না।

ঠিক সেই সুযোগটাই নিল অফিসার, ঝাপিয়ে পড়ল সে হাইজ্যাকার ছেলেটার উপর, তারপর খালি হাতই চালিয়ে দিলো ছেলেটার ঘাড়ে। এক মুহুর্ত মাত্র। কাধে বোমার ব্যাগ নিয়ে হাইজ্যাকার ছেলেটা ধরা পড়ে গেল।

হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় বিমান থেকে নামার সময় হাইজ্যাকার ছেলেটার ভাব ভংগী পাল্টে গেল। যেই মুখে বিশাল দাপট নিয়ে কিছুক্ষন আগেই সে ২৮ জন যাত্রী সহ একটি বিমান উড়িয়ে দেয়ার হুমকী দিচ্ছিল, সেই মুখেই সে অনুনয় বিনয় করতে লাগলো – তার দাবীকৃত মেডিকেল সামগ্রী আর রিলিফ যেনো জায়গামত পৌছে দেয়া হয়। রিলিফটা সত্যিই দরকার। আটমাস হয়ে গেছে তারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে – মেডিকেল এবং রিলিফ তাদের সত্যিই খুব দরকার।

অনেক বছর পরে

জ্যা ক্যূয়ে নামের একটি মধ্যবয়স্ক লোক কোলকাতা শহর থেকে কিছু দূরে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। এখন তার বয়স হয়েছে। চুলে পাক ধরেছে। আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে তিনি একটা দু:সাহসী কাজ করেছিলেন। জ্যা ক্যূয়ে একটা বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন – একাকী। তার কাছে একটি পিস্তল ছিল, আর ছিল একটি মিথ্যে বোমা। ব্যাগের মধ্যে তার ভর্তি করে তিনি প্রায় ধোকাই দিয়ে ফেলছিলেন সবাইকে। রেডক্রস কর্মীদের আড়ালে যে পুলিশ আসতে পারে সে ধারনাই তার ছিল না, নাহলে ঠিকই সেদিন ২০ টন মেডিকেল সামগ্রী এবং রিলিফ নিয়ে তিনি চলে আসতেন এই অঞ্চলে। তার দেশ ফ্রান্স থেকে এত দূরের কিছু দুর্গত মানুষের জন্য তার মধ্যে এত ভালোবাসার সঞ্চার কিভাবে হয়েছিল তা তিনি জানেন না। জানেন, এই পাগলাটে ভালোবাসাই তাকে একটি বিমান হাইজ্যাক করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল।

তার বয়স হয়েছে, তিনি তারিখটি মনে করার চেষ্টা করতে লাগলেন। তারিখ মনে পড়ল না, কিন্তু ঘটনাপ্রবাহগুলো মনে পড়ে গেল। পাকিস্তান তাদের পূর্বাংশের প্রদেশে বিদ্রোহ দমনের নামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, এদেশের মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিল পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে, আর কিছু সাহসী মানুষ সামান্য প্রশিক্ষন নিয়ে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নামের মহিলা এই দেশের জন্য জনমত গড়তে তখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ইন্দিরার কথাই তাকে সেই দু:সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করেছিল। তার পরিকল্পনা ছিল বিমানভর্তি রিলিফ নিয়ে আসবেন তিনি রিফিউজিদের জন্য, কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি। অবশ্য তিনি ব্যর্থ হলেও তার আর্জি ব্যর্থ হয়নি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে রিলিফ পৌছে গিয়েছিল। তার বিমান হাইজ্যাক প্রচেষ্টা ব্যার্থ হবার মাত্র ১৩ দিন পরেই পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয় – দেশটির নাম বাংলাদেশ।

হঠাৎ-ই তারিখটি মনে পড়ে গেল জ্যা ক্যূয়ের। সেদিন ছিল – ৩রা ডিসেম্বর, ১৯৭১






Shares