প্রেমিকার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সিএনজি অটোরিকশা চালক সাইদুর রহমান (১৯) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে নিখোঁজের পর ২ জানুয়ারি সকালে উপজেলার কাঞ্চনমুড়ি এলাকায় একটি বাথরুমের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে সাইদুরের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ঘটনায় নিহতের মা হনুফা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার শীতলপাড়া থেকে এই ঘটনার সাথে জড়িত একই উপজেলার কাঞ্চনমুড়ি এলাকার দানু মিয়ার ছেলে মো. রানাকে (২০) গ্রেফতার করে পুলিশ।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে এই হত্যার রহস্য উদঘাটন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা পুলিশ।
এ সময় পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বলেন, নিহত সাইদুর রহমান ও আটক মো. রানা প্রতিবেশী। সাইদুর তার সম্পর্কের ভাতিজা হয়। তারা একসাথেই চলাফেরা করত। দুইজনই জুয়া খেলতে বসলে সাইদুর খেলায় জিতে যেত। কিছুদিন আগে রানা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। গত ২৯ ডিসেম্বর কসবা সীমান্ত কমপ্লেক্সের সামনে সাইদুরের সাথে দেখা হয় রানার। এ সময় সাইদুরের মানিব্যাগে অনেক টাকা ও নতুন মোবাইল সেট দেখতে পায় সাইদুর। তার টাকা ও মোবাইলের প্রতি রানার লোভ হয়।
এ সময় রানা নানান ফন্দি করে সাইদুরকে প্রস্তাব দেয়, ‘রাতে এক লোক ইয়াবা নিয়ে আসবে, সেই ইয়াবা পৌঁছে দিলে চার হাজার টাকা দিবে। এতে সিএনজি ব্যবহার করা লাগব না, ড্রেজারের মাঠের উপর দিয়ে হেঁটে গেলেই হবে’।
রানার দেয়া ফাঁদে লোভে পরে সাইদুল কথা অনুযায়ী রাত সাড়ে ৭টায় ড্রেজারের মাঠে হাজির হয়। সেখানে এসে সাইদুর তার প্রেমিকার সাথে মোবাইলে কথা বলতে থাকে। এ সময় রানা একটি বাঁশের খুঁটি দিয়ে পেছন থেকে সাইদুরের মাথায় আঘাত করলে মাটিতে লূটিয়ে পড়ে সে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর সাইদুরকে ঝাপটে ধরে ও মাফলার দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে ধরে। পরে সাইদুরকে গলায় ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে রানা। হত্যার পর মানিব্যাগ মোবাইল রেখে মাঠের পাশে সাইদুরের মরদেহ একটি বাথরুমের সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়। তদন্ত শেষে গত ১২ জানুয়ারি কসবা থেকে রানাকে গ্রেফতার করে ডিবি ও পুলিশ।
এ সময় পুলিশ সুপার আরও জানান, মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই রানাকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় সাইদুর তার মোবাইল ফোনে প্রেমিকার সাথে কথা বলছিল। কল লিস্টের সূত্র ধরে আমরা সাইদুরের প্রেমিকার সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, হত্যার সময় মোবাইলটি চালু থাকায় শুনতে পেয়েছি সাইদুর বলছে, ‘চাচা আমাকে মারিস না’। সেই সূত্রে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা তদন্ত করে রানাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।