কসবায় রোজা রেখে দরিদ্র কৃষকের ধান কাটতে মাঠে ছাত্রলীগ
মিন্টু মিয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের একজন দরিদ্র কৃষক । চলতি মৌসুমে প্রায় তিন বিঘা জমিতে বিআর-২৮ জাতের ধানের আবাদ করেছেন।
দুই সপ্তাহ আগেই জমির ধান সংরক্ষণের উপযোগী হয়ে যায়। কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে ধান কাটার জন্য শ্রমিক না পাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ তার কপালে। তাই সোনালি ধান ঘরে তোলা নিয়ে শংকায় পড়েন মিন্টু মিয়ার। বৃষ্টি-বাদলের দিনে ধানগুলো সব জমিতে পড়েই নষ্ট হওয়ার শঙ্কা ছিল তার মনে। সেজন্য উপায় না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়েই কাটবেন জমির ধান। কিন্তু হঠাৎ করে মিন্টু লোকমুখে শুনতে পান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কৃষকের জমির ধান কেটে দিচ্ছেন।
মিন্টু মিয়া তার জমির ধান কেটে দেয়ার জন্য যোগাযোগ করেন কসবা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মানিকের সঙ্গে। মানিক তাকে আশ্বস্ত করেন পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দেবেন। এই আশ্বাসে কপাল থেকে চিন্তার ভাঁজ সরে মুখে হাসি ফোটে কৃষক মিন্টু মিয়ার।
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে মানিক ও কসবা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কাস্তে হাতে নেমে পড়েন মিন্টু মিয়ার ধানি জমিতে। উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের অন্তত ৬০ জন নেতাকর্মী মিন্টু মিয়ার তিন বিঘা জমির ধান কেটে দিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিন্টু নিজেও ধান কাটেন। রোজা রেখে ধানা কাটার পর সেই ধান আবার মিন্টুর বাড়িতে পৌঁছে দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
কৃষক মিন্টু মিয়া বলেন, ১৫ দিন আগে আমার জমির সব ধান পেকেছে। কিন্তু ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাচ্ছিলাম না। কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ভাবছিলাম স্ত্রী-সন্তানদের নিয়েই জমির ধান কাটব। কারণ ধানগুলো এখন কাটতে না পারলে জমিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে। হঠাৎ লোকমুখে শুনতে পাই ছাত্রলীগের ছেলেরা ধান কেটে দিচ্ছেন। পরে ছাত্রলীগ নেতা মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর আমার ধান কেটে দেবে বলে জানান। আজকে তারা আমার জমির ধান কেটে দিয়েছেন। শ্রমিক দিয়ে এই ধানগুলো কাটতে আমার অন্তত ১৫ হাজার টাকা খরচ হতো। ধান কেটে দেয়ায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই কৃষক।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশের পর থেকে কসবায় ছাত্রলীগ নেতারা মাঠে মাঠে ধান কাটছেন। প্রতিটি ইউনিয়ন ভেদে স্থানীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে উপজেলা নেতৃবৃন্দ এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
কসবা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মানিক বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রোজা রেখে কৃষক মিন্টু মিয়ার জমির পাকা ধান কেটে দিয়েছেন। যেসব কৃষকরা শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারবেন না, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের জমির ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেবে। এই দুর্যোগে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী কৃষকদের পাশে আছে এবং থাকবে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধান কাটায় অংশ নিয়েছেন কসবা উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য সুমন রানা ও মো. টিটু, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুম রানা, বিনাউটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান মো. শাহরিয়ার, খাড়েড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সুজন ও বায়েক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাদ্দামসহ ৬০ জন নেতাকর্মী।