কসবায় গৃহবধুকে নির্যাতন করে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিলেন আ’লীগ নেতা!



রুবেল আহমেদ : কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রবাসী দুলাল খানের স্ত্রী নার্গিস আক্তার (৪০) নামে এক গৃহবধুকে চারিত্রিক মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বেদম প্রহার করে রক্তাক্ত জখম করেছে তারই ভাসুরপুত্র রাজিব ও সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খান ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। রফিকুল ইসলাম খান বিনাউটি ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক। নার্গিস আক্তার থানায় মামলা দায়ের করলে এর পরদিনই রফিকুল ইসলাম সন্ত্রাসী কায়দায় নার্গিস আক্তারের ছোট সন্তানকে জিম্মি করে তার নিকট থেকে অলিখিত তিনটি একশত টাকার ষ্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয় এবং এই স্ট্যাম্পগুলোতে তার নিজের মতো করে মামলা সাজিয়ে নার্গিসকে হয়রানি করছে।
অলিখিত ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ায় নার্গিস আক্তার গত ২১ আগষ্ট ষ্ট্যাম্পসমুহ উদ্ধার করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেটের আদালতে মামলা দায়ের করেন। ষ্ট্যাম্প উদ্ধারের মামলা করায় সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খান ষ্ট্যাম্পগুলো ব্যবহার করে নার্গিস আক্তার ও তাঁর ভাই সবুজ ভ’ইয়া (৩০) কে আসামী করে সাড়ে আট লাখ টাকার বানোয়াট মিথ্যা মামলা করেন। এ ঘৃন্য ঘটনা নিয়ে গ্রামে রফিকুল ইসলাম ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
নার্গিস আক্তারের দায়ের করা কসবা থানার মামলা সুত্রে জানা যায়, তার স্বামী সহজ সরল বলে ভাসুর পুত্র রাজিব খান (৩২) ভাসুর স্ত্রী আনারকলী (৫৫) ভাসুর কন্যা হীরা মুক্তা (২৭) তার শ্বশুরের দেয়া বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে নানাভাবে চক্রান্ত করে আসছিলো। এসব নিয়ে মামলা মোকাদ্দমাও রয়েছে। একাধিকবার তার স্বামী দুলাল খানকেও মারধোর করেছে।
স্থানীয় গ্রামবাসী ও নার্গিস জানান, দুলাল খান প্রবাসে থাকায় রফিকুল ইসলাম বিভিন্ন সময় নার্গিসকে একান্তে তার বাড়িতে দেখা করতে বলতেন। কিন্তু নার্গিস রফিকুল ইসলামের স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে অবগত থাকায় তিনি তার কথায় সায় দেননি। ফলে রফিকুল ইসলাম নার্গিসের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলো বলে নার্গিস প্রতিবেদককে জানান।
গত ১৪ আগষ্ট সন্ধ্যায় রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আসামীরা বর্ণিত রাজিব, আনারকলী ও হীরা মুক্তা তার বাড়িতে জোরপূর্বক ঢুকে নার্গিস আক্তারকে রড, লাঠি দ্বারা বেদম প্রহার করে। সন্ত্রাসী কায়দায় নার্গিসের কাপড়-চোপর ছিঁড়ে ফেলে তার সারা দেহে রক্তাক্ত জখম করে এবং শ্লীলতাহানী ঘটায়। পরে গ্রামের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা নেয়ার পর নার্গিস কসবা থানায় গত ২০ আগষ্ট মামলা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২১ আগষ্ট তার সন্তানকে জিম্মি করে খালি ষ্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয় সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম খান ও রাজিব, আনারকলী ও হীরা মুক্তা।
নার্গিস আক্তার জানান, আমি না কি আমার ১৬ বছরের ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য রফিকুল ইসলাম থেকে ওই সকল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আট লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছি এবং ওই টাকা পরিশোধ করছিনা। তাই রফিকুল ইসলাম আমি এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে গত ২৭ আগষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মিথ্যা ও সাজানো মামলা করেছে। অথচ আমার ছেলে কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার বয়স ১৬ বছর। আমার ছেলের নামে কোনো পাসপোর্টও করা হয়নি।
এদিকে নার্গিস আক্তারকে নিয়ে আসামী আনারকলীর পুত্র প্রবাসে থেকে গফ ঔড়হু কযধহ নামে আইডিতে নার্গিস আক্তারের ছবি দিয়ে নানা ধরনের আপত্তিকর কথাবার্তা লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনায় নার্গিস বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে।
সৈয়দাবাদ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, কামাল হোসেন, বিল্লাল মেম্বারসহ গ্রামের বহু মানুষ জানিয়েছেন রফিকের কুদৃষ্টি যে সকল নারীর উপর পড়েছে ওই সমস্ত পরিবারগুলো ভেংগে তছনছ হয়ে গেছে। এমন একাদিক মহিলার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। কিন্তু এরা রফিকের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয়। নার্গিস আক্তার গত ২১ আগষ্ট ষ্ট্যাম্প উদ্ধারের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। বিজ্ঞ আদালত উক্ত ষ্ট্যাম্প উদ্ধার ও তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কসবা থানাকে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে কসবা থানার অফিসার ইনর্চাজ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন : নার্গিসের উপর যে শারিরীক নির্যাতন হয়েছে এ বিষয়ে আমরা মামলা নিয়েছি। ষ্ট্যাম্প উদ্ধারের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। তদন্তপূর্বক আইনগত ও মানবিকভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খানের সংগে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নার্গিসকে তিনি মারধোর করেননি। এছাড়া অলিখিত ষ্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষরও নেননি। নার্গিসের দায়েরকৃত মামলার প্রায় দেড়মাস আগে নার্গিস তার কাছ থেকে ছেলে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা নিয়েছে।