কসবায় আইনমন্ত্রী ও সাবেক এমপি শাহ আলম গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৭
রুবেল আহমেদ : কসবায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৭ জন আহত হয়েছে। এ সময় একটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে উপজেলার গোপীনাথপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ধ্বজনগর গ্রামের মোরশিদ মিয়া বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই তসলিমুর রেজাকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের বিরুদ্ধে কসবা থানায় মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
জানা গেছে, এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবলীগের সদস্য তসলিমুর রেজা ও একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। স্থানীয় রাজনীতিতে তসলিমুর রেজা আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহ আলম এবং মোক্তার হোসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি’র সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
জানা যায়, তসলিমুর রেজা সাবেক এমপি শাহ আলমকে নিয়ে দেয়া একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত । এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার গোপীনাথপুর বাজারে দু’পক্ষের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তসলিম রেজা ও মুক্তার মেম্বারসহ ৭জন আহত হয়। সংঘর্ষে গুরুতর আহত তসলিম রেজা ও মুক্তার হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত বাকি ৫জন স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় মোক্তার মেম্বারের সমর্থকের একটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তসলিমুর রেজার লোকজন।
এ বিষয়ে কথা বলতে আহত গোপীনাথপুর ইউপি সদস্য মুক্তার হোসেনকে না পেয়ে তার বড় ভাই গোপীনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেনের সাথে যোগাগাযোগ করা হলে জানান, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে গোপীনাথপুর বাজারে সাবেক চেয়ারম্যান মান্নান জাহাঙ্গীর ও গোপীনাথপুর আলহাজ্ব শাহআলম কলেজের অধ্যক্ষ আকরাম খানের সাথে দেখা করতে গেলে সেখানে ওই গ্রামেরই জেলা যুবলীগ সদস্য তসলিমুর রেজার সাথে ১৫ই আগষ্ট বিশাল জনসভা নিয়ে বাগবিতন্ডার জেরে এই সংঘর্ষ বাধে। তসলিমুর রেজার সমর্থকরা মুক্তার মেম্বারসহ সংগীদের ওপর হামলা করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবলীগ সদস্য তসলিমুর রেজা মুঠোফোনে জানান, ঘটনার দিন বিকেলে বাজারে সাবেক চেয়ারম্যান মান্নান জাহাঙ্গীর ও গোপীনাথপুর আলহাজ্ব শাহআলম কলেজের অধ্যক্ষ আকরাম খানের সাথে বসে চা খাচ্ছিলেন। এসময় গোপীনাথপুর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন কয়েকটি মোটরসাইকেলসহ বেশ কিছু ছেলেদের নিয়ে এখানে আসে। সে আমার সাথে কুশল বিনিময় করছিলো এসময় পেছন থেকে তার সাথে আসা লোকজন আমার মাথার পেছনে সজোরো আঘাত করলে আমি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই। এসময় অজ্ঞান অবস্থায় তারা আমাকে আরো মারধোর করে। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় এবং তাদের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। আমি আমজাদ হোসেন বা তার ভাই মুক্তার হোসেনকে আগে চিনতাম না। তাদের সাথে আমার কোনো বিরোধও নাই। আমি বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। কেনো তারা আমাকে মারলো আমি কিছুই জানিনা।
প্রত্যক্ষদর্শী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান জাহাঙ্গীর জানান, আধিপত্য নিয়েই দুইজনের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিলো। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অফিসার ইনচার্জ কসবা থানা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সাংবাদিকদের জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় তসলিমুর রেজাকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের বিরুদ্ধে কসবা থানায় মামলা দায়ের করেছে প্রতিপক্ষ। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।