বিদ্রোহীদের নিয়ে বিপাকে আ.লীগ
প্রথম আলো:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন ২২ মার্চ। এর মধ্যে ছয়টিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় পড়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে দলে বিরোধ এবং তৃণমূলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সমর্থন না থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সফিউল্লাহ মিয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ মুন্সী দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। সে সময় হানিফ মুন্সীর লোকজন পাল্টা কমিটি করেন। উভয় কমিটি একাধিকবার আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, উপজেলার এ দুই শীর্ষস্থানীয় নেতার আগের দ্বন্দ্ব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলছে। তা ছাড়া সাতটি ইউনিয়নে সফিউল্লাহ মিয়ার পছন্দের লোকজনই মনোনয়ন পেয়েছেন। ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীদের লড়াই হবে। এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে হানিফ মুন্সীর সমর্থনও রয়েছে বলে তাঁরা দাবি করেন। অবশ্য হানিফ মুন্সী বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ যে বেকায়দায় পড়েছে, তা মানতে নারাজ আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সফিউল্লাহ মিয়া। পাশাপাশি হানিফ মুন্সীর সঙ্গে তাঁর কমিটি নিয়ে থাকা দ্বন্দ্বের বিষয়ে তিনি বলেন, একসময় দ্বন্দ্ব ছিল। বর্তমানে কোনো দ্বন্দ্ব বা বিরোধ নেই। এখন কেউ যদি বিরোধিতা করেন, তাহলে আমাদের কিছু যায় আসে না। কারণ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে।
দুর্গাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিয়াউল করিম খান ও বিদ্রোহী প্রার্থী জাকির হোসেন, চরচারতলায় দলীয় প্রার্থী আইয়ূব খান ও বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়া উদ্দিন খন্দকার , তালশহরে দলীয় প্রার্থী আবু; আড়াইসিধায় দলীয় প্রার্থী সেলিম মাস্টার ও বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুল হাসান, তারুয়ায় দলীয় প্রার্থী ইদ্রিস মিয়া ও বিদ্রোহী প্রার্থী বাদল সাদির, লালপুরে দলীয় প্রার্থী মোর্শেদ মাস্টার ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল খায়ের, শরীফপুরে দলীয় প্রার্থী সাঈফ উদ্দিন এবং বিদ্রোহী প্রার্থী সুমন চৌধুরী ও তাজুল ইসলাম।
জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, চরচারতলা ইউনিয়নের জিয়া উদ্দিন খন্দকার, দুর্গাপুর ইউনিয়নের জাকির হোসেন ও মোয়াজ্জেম হোসেন মাজু, আড়াইসিধা ইউনিয়নের কামরুল হাসান, শরীফপুর ইউনিয়নের তাজুল ইসলাম, লালপুর ইউনিয়নের মো. আবুল খায়ের ও তারুয়া ইউনিয়নের বাদল সাদিরকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ১০ মার্চ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
উপজেলার আড়াইসিধা, শরীফপুর, লালপুর, তালশহর, তারুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আড়াইসিধায় বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুল হাসান ও দলীয় প্রার্থী সেলিম মাস্টার দুজনের অবস্থানই ভালো। লালপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোর্শেদ মাস্টার ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল খায়ের পরিছন্ন রাজনীতি করায় উভয়েরই বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
আড়াইসিধা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুল হাসান মোবারক বলেন, ‘তৃণমূল থেকে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। ১১ মার্চ দিবাগত রাতে আমার বাড়িতে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১২ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিম মাস্টারের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় বিভিন্নভাবে আমার কর্মী-সমর্থকদের গ্রেপ্তারসহ নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
লালপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল খায়ের বলেন, ‘আমি বিদ্রোহী প্রার্থী নই। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী। কারণ দলের কাছে মনোনয়ন চাইনি।’ তিনি দাবি করেন, নির্বাচনে তিনি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট পাবেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা জোর করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে যাবেন বলে প্রচার চালাচ্ছেন।
চরচারতলা ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নিরীহ হয়ে গেলাম। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা হুমকি দেয়। কেউই পোস্টার লাগাতে দেয় না। জনগণের ভালোবাসা আছে আমার প্রতি। তাই মাথাব্যথার কারণ আমি।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ মুন্সী দাবি করেন, ‘বর্তমানে দলে কমিটি নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। ইতিমধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে স্থানীয় পত্রিকা সূত্রে জানতে পেরেছি।’