Main Menu

নাসিরনগরের পল্লীতে ব্যতিক্রমধর্মী শুঁটকি মেলা ও বিনিময় প্রথা

+100%-
আকতার হোসেন ভুইয়া,নাসিরনগর সংবাদদাতা ॥ নাসিরনগর উপজেলার পল্লীতে ঐতিহ্যবাহী দিনব্যাপী শুঁটকি মেলা শনিবার অনুষ্ঠিত  হয়। উপজেলা সদরের কুলিকুন্ডা গ্রামে শত বছরের বেশী সময় ধরে নিয়মিতভাবে প্রতিবছরে বাংলার নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বসে এ ব্যতিক্রম ধর্মী শুঁটকি মেলা। শুধু শুঁটকি আর শুঁটকি। নানা জাতের শুঁটকির পসরা সাজিয়ে বসেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। দুর-দুরান্ত থেকে ভোজন রসিকরাও আসে। শুঁটকি ছাড়াও এ মেলায় আরেকটি বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে “বিনিময় প্রথা” অথ্যাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। ভোরে এ মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে বিক্রি চলে। আর এ কারণেই ধারণা করা হয়এই মেলার ইতিহাস অনেক পুরনো। মেলার পাশ্বর্বতী ফুলপুর গ্রামের ৯০ বছর বয়স্ক মোঃ ফুল মিয়া জানায়, আমি যখন ছোট তখন বাপ-দাদার সাথে এ মেলা এসেছি। আর এখন নাতি-পতি নিয়ে মেলায় এসেছি। শুনেছি তারও বহু আগে থেকে এ মেলা চলছে। কুলিনকুন্ডা গ্রামের সাংবাদিক মোজাম্মেল হক সবুজ জানায়, কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কবে থেকে এ মেলা বসছে। তবে এলাকাবাসী জানান,শত বছরের বেশী সময় ধরে নিয়মিত ভাবে এই মেলা বসছে। এখনো বহু পুরনো প্রথা প্রচলন থাকায় আমরা ধারণা করছি, এ মেলা আদিম কালের। আলু, ডাল,সরিষা, পেয়াজ,রসুনসহ এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত নানা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি ক্রয় করেন। তাছাড়া এ মেলায় বোয়াল,শোল, গজার, বাইম,পুটি,টেংরাসহ এমন কোন জাতের শুঁটকি নেই যা পাওয়া যায় না। তবে দেশী মাছের শুঁটকির প্রাধান্যই বেশী। তাছাড়া ইলিশ ও কারফিউসহ বিভিন্ন জাতের মাছের ডিম পাওয়া যায়। আর এসব বাহারী শুঁটকির আকর্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী এ এলাকার লোকজন ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে ভোজন রসিকরা আসে। পছন্দের শুঁটকি ক্রয় করে তারা তৃপ্ত হন। এলাকার লোকজন ইত্তেফাককে জানান, এই মেলায় নাসিরনগর ও পাশ্ববর্তী এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা ছাড়াও চট্রগ্রাম,সিলেটের সুনামগঞ্জ ও দেশের অন্যান্য স্থান থেকে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা শুঁটকি নিয়ে আসে। একদিনে লাখ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়। মেলা আয়োজনের কোন কমিটি নেই। তারপরও মেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে। শুঁটকি বিক্রির লাখ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরে যায়। এছাড়াও মেলায় গৃহস্থালী পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা বিক্রি হয়। যুগ যুগ ধরে এ মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন বিভিন্ন ধরনে পণ্য ক্রয় বিক্রয় করে থাকে। এবারের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। তবে মেলার পাশাপাশি জুয়াড়ীদের তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। মেলার পার্শ্ববর্তী ধানী জমিতে রাত পর্যন্ত চলে জুয়া খেলা। পুলিশ প্রশাসন জুয়ার বিরুদ্ধে কথা বললেও জুয়াড়ীদের সাথে অঘোষিত চুক্তি রয়েছে বলে পাশেই পুলিশ দাড়িয়ে নীরব ভুমিকা পালনের অভিযোগ করেছে মেলায় আসা লোকজন।  
এদিকে উপজেলা সদরের লঙ্গণ নদীর তীরে একই দিনে বসে “বিনিময় প্রথা” অথ্যাৎ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য। ভোরে এ মেলা বসার পর সকাল ১০টা পর্যন্ত বিনিময়ের মাধ্যমে বিক্রি চলে।এছাড়াও এখানে সারা দিনব্যাপী চলে আরেকটি মেলা।এখানে বিক্রি হয় মৃৎশিল্পীদের হাতের তৈরি মাটির হাঁড়ি ও তৈজসপত্র। স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি হাড়িঁ,পাতিল, কলস,ঝাঁঝর,থালা,ঘটি,বদনা,বাটি ,পুতুল ও প্রদীপ মেলায় মানুষের নজরকাড়ে। গ্রাম্য মেয়েদের সামান্য পয়সা সংগ্রহের জন্য নানা ডিজাইনের মাটির ব্যাংকও বিক্রি হয় এ মেলায়।






Shares