নাসিরনগর হিন্দু পল্লীতে হামলাকারীরা কোন ধর্মের মানুষ নয়:: ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম
ডেস্ক ২৪:: স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, যারা নাসিরনগরে হিন্দু পল্লীতে হামলা চালিয়েছে তারা খুনী, লুটেরা ও দুস্কৃতিকারী। জনগণকে সাথে নিয়ে এদের হাত ভেঙে দেয়া হবে। হামলাকারীরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এরা কোনো ধর্মের মানুষ নয়। নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িতে হামলার সময় তা প্রতিরোধে এগিয়ে না আসায় নাসিরনগরের নেতাকর্মীদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেছেন, আজ আপনারা আমাদেরকে যেভাবে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন, সেদিনও এভাবে এগিয়ে আসতে পারতেন। বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে নাসিরনগরের গৌর মন্দির পরিদর্শন করতে গিয়ে শান্তি সমাবেশে এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন নাসিম।
নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলার ১০ দিন পর দুপুরে ১৪ দলের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে যায়। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, অসিম কুমার উকিল, প্রাণ গোপাল দত্ত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে নাসিম তার এক বছর আগের সফরের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তখনকার নাসিরনগর আর এই নাসিরনগরের অনেক তফাত। নাসিরনগরে হামলার ঘটনা তাকে স্তম্ভিত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি ভাবতেও পারিনি এখানে সাম্প্রদায়িকতা থাকতে পারে। এই ঘটনার একটাই লক্ষ্য শেখ হাসিনা সরকারকে ছোট করা।’
সমাবেশে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আজকে দলে দলে ১৪ দলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ওই দিন (হামলার) তো এভাবে দলে দলে প্রতিরোধ করতে পারতেন। কিন্তু সেটি হয়নি। এই জন্য আপনারা ছোট হায়েছেন।’ তবে ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের দ্রুতবিচার আইনে বিচার করা হবে।
১৪ দলের মুখপাত্র বলেন, ‘এ দেশে সাম্প্রদায়িক কাউকে জায়গা দেওয়া হবে না। এ দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজদেরও নির্মূল করতে হবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া আটকাতেই একের পর এক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তবে আমরা জঙ্গিদের ছিন্ন-ভিন্ন করে দিয়েছি। এ সময়ে এই সন্ত্রাসী হামলার জন্য জনগনের কাছে দু:খ প্রকাশ করেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে নাসিম বলেন, ‘সবাই জঙ্গি দমেনের প্রশংসা করলেও একজন এর বিপক্ষে বলছেন। তিনি খালেদা জিয়া। তিনি জঙ্গি দমন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।’ খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাইরা তো আপনাদের আমলেই সৃষ্টি হয়েছে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা এমন কাজ করবেন না যাতে জাতীর সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। জনগণের ভোটেই আপনাদের নির্বাচিত হতে হবে।’ সাম্প্রতিক হামলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন বলে জানান তিনি।
রাশেদ খান মেনন বলেন, যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে তখনই নাসিরনগরে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে।
তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, দল কিংবা মুখ দেখে নয় নাসিরনগরে তান্ডব চালানো সকলকে অপরাধী বিবেচনা করে গ্রেফতার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আগুন সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গীদের ছাড় দেননি। ফলে এই হামলায় যারা জড়িত তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। শেখ হাসিনার সরকার এদেশের উপর একটি অসাম্প্রদায়িকতার ছাতা ধরে রেখেছেন। ফলে যারা এই অসাম্প্রদায়িকতা নষ্ট করতে চায় তারাই হামলা করেছে।
আলোচনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন গৌর মন্দির পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক নির্মল চৌধূরী। সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের স্যস্য বাবু নগেন্দ্র চন্দ্র দাস। তিনি বলেন আমাদের মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আলহাজ্ব এডঃ মোহাম্মদ সায়েদুল হক একজন সহজ সরল ও সৎ মানুষ । তার সুনাম ধ্বংস করতে ও জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে সুনাম ক্ষন্ন করতে একটি কুচক্রি মহল মন্ত্রীকে কলংকিত করতে এ ন্যাক্কার জনক ঘটনার জন্ম দিয়েছে।
অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন বেসরকারী বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন,তথ্য মন্ত্রী আহসানুল হক ইনু, আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সাবেক মন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি,সাবেক শিল্প মন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া,আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য র,আ,ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, ডঃ অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, ডাঃ নিম চন্দ্র ভৌমিক,তরিকত ফেডারেশন নেতা মোত্তাকিল বিল্লাহ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তা,এস,কে সিকদারসহ আরো অন্যান্যরা।
এ সময়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার যুবলীগ সভাপতি এডঃ শাহানুুর , ছাত্রলীগ সভাপতি এডঃ মাসুম বিল্লাহ, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ডাঃ রাফিউদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ হামিদা লতিফ পান্না,বি,আর,ডি,বি চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার রায়,উপজেলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অরুন জ্যোতি ভট্রাচার্য, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক নাসির উদ্দিন রানা। তাছাড়াও জেলা উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ,ছাত্রলীগের নেত্রীবৃন্দ সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়ের নেত্রীবৃন্দ সহ বিপুল লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরের প্রায় ১৫টি মন্দির ও শতাধিক হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এর পাঁচ দিন পর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাঁচটি ঘর ও একটি মন্দিরে আবার অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।