নাসিরনগরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে:: বাঁধা দিলে সরকারী কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের হুমকি
নিজস্ব প্রতিবেদক:: ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর উপজেলায় ড্রেজারের মাধ্যমে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এতে সেখানে থাকা বাজার, শত বছর পুরনো কবরস্থান ও চর পিয়ালপুর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত ২৫ আগষ্ট স্থানীয় ১৬জন ব্যক্তি জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ- দৌলা খাঁনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তাঁর ভাই মাজহারুল ইসলামের নির্দেশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। এদিকে গত ৭ সেপ্টেম্বর বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলে বালু উত্তোলনকারী স্থানীয় প্রভাবশালী মো. শাহেদুজ্জামান ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।
জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের দক্ষিণদিয়া এলাকার গোয়ালনগর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের আওতাধীন চর পিয়ালপুর মৌজার মেঘনা নদী থেকে খনন যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রতিদিন লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মো. শাহেদুজ্জামান, মিন্দি আলী ও আশিকুজ্জামান। গোয়ালনগর ইউপি চেয়ারম্যান আজাহারুল ইসলাম ও তাঁর ছোট ভাই নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সহকারী মাজহারুল ইসলামের নির্দেশে ওই প্রভাবশালী মহল বালু উত্তোলন করছে। ফলে ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়া চরটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাঁধা দিলেও প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন বন্ধ করছেন না। এতে ইউনিয়নের গোয়ালনগর বাজার, শতবর্ষী সরকারি কবরস্থান ও কৃষকদের শত শত বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বালু উত্তোলন বন্ধ করতে গিয়ে হুমকির শিকার হয়ে উপজেলা সহকারী কশিনারের (ভূমি) কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আতিুকর রহমান। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে বালু উত্তোলনে প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা। ইউপি চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম ও তাঁর ছোট ভাই মাজহারুল ইসলামের নির্দেশে বালু উত্তোলনের কথা জানান তাঁরা।
স্থানীয় লোকজন বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে গোয়ালনগর বাজারের সীমানা প্রচীর হেলে পড়েছে। বাজারের পশ্চিম দিকে শত বছরের পুরনো কবরস্থানটিও হুমকির মধ্যে পড়েছে। নদীর মধ্যে থাকা চরটিও নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ হাজার ফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেঘনার পাড় ঘেঁষে গোয়ালনগর ইউনিয়নের দক্ষিণদিয়া এলাকায় এক মাসের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন স্থানীয় ওই প্রভাবশালী মহল। গোয়ালনগর বাজার ঘাট ও গোরস্থান এলাকার ১০০ মিটার এলাকায় মেঘনা নদীতে একটি লোড ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একটি বাক্কøহেডে বালু ভরাটের পাশাপাশি সেখানে আরও কয়েকটি বাল্ক্কহেডকে বালু নিতে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। প্রতিদিন পাঁচ-ছয়টি বাল্ককহেডে ষাট হাজার ফুট বালু উত্তোলন করা হয়। এতে মেঘনার পাড়ে গোয়ালনগর বাজার, শত বছরের একটি পুরাতন গোরস্থান ও শত শত একর জমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বালু উত্তোলনকারী মো. শাহেদুজ্জামান বলেন, চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলামের নির্দেশে বালু তোলা হচ্ছে। বাজারের সামনে নদীতে চর জেগে উঠেছে। চর পড়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে নদী থেকে পানি সরে না। তাই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা শুরু করেছি। তিনি বলেন, বালু উত্তোলনের জন্য কবর হুমকির মুখে পড়েছে স্থানীয়দের এই দাবি সঠিক না। বালু উত্তোলনের জায়গা থেকে কবরস্থান অনেক দূরে।
গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম নিজের ও তার ভাইয়ের উপর আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নদীতে ঢেউয়ের কারণে বাজারের সামনে নদীতে প্রায় এক কিলোমিটার চর জেগে উঠেছে। সারা বছর যেন নৌযান বাজারে ভিড়তে পারে সেজন্য চরটি কাটতেই তারা বালু তুলছেন।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী সমকালকে বলেন, বালু উত্তোলনের সত্যতা পেয়েছে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়। বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলে গেলে প্রভাবশালীরা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন। বিষয়টি আমরা আইনী প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।