Main Menu

গিনেসে পার্থের রেকর্ড

+100%-

নিজস্ব প্রতিবেদক:: পার্থ চন্দ্র দেব। পেশায় ছাত্র। তিনি ব্যাকরণ স্মৃতি তীর্থ আদ্য বিষয়ে হবিগঞ্জের সাংগবেদ সংস্কৃত কলেজ ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ে বিএসএস শেষ বর্ষ পড়াশুনা করছেন। নিজের প্রতিভা, অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর পরিবারের প্রেরণায় সাত হাজার আটশ ৭৭ ফুট দৈর্ঘ্যরে দীর্ঘতম সেফটিপিনের চেইন তৈরি করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছে পার্থ। গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাতে পেয়েছেন বিশ্ব রেকর্ড গড়ার স্বীকৃতিপত্র।
পার্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের প্রয়াত জগদিশ চন্দ্রের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোন নিয়ে তাদের সংসার। পার্থ হলো পরিবারের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় বাজারে ষ্টেশনারীর ব্যবসা করছেন। পার্থ সবমসয় নিজের মানসে লালন করতো নতুন কিছু করার।
সেফটিপিন দিয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম চেইন তৈরির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় পার্থের সাথে। তিনি সমকাল পত্রিকার এ প্রতিবেদককে জানান, প্রযুক্তির কল্যাণেই মূলত জানতে পারেন ভারতের শ্রী হার্শা নান এবং শ্রী নাভা নান নামে দুই ব্যক্তি ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল ১৭৩৩.১ মিটার দৈর্ঘ্যরে দীর্ঘ একটি চেইন তৈরি করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম তুলেছেন। তখন তিনিও এই রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড করার জন্য মনস্থির করেন।
তিনি ২০১৯ সালে ২৮ মার্চ নিজের জীবন বৃত্তান্ত দিয়ে গিনেস কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে রেজিষ্টেশন করেন। পরের মাসের ২০ এপ্রিল গিনেস কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘দ্য লংগেস্ট চেইন অফ সেফটিপিন’ এই ক্যাটাগরিতে আবেদন করেন। গিনেস কর্তৃপক্ষ তার করা আবেদনটি যাচাই-বাচাই করার জন্য তিন মাস সময় নেয়। তার আবেদন প্রক্রিয়াটি যাচাই-বাচাই করে জুলাই মাসের ১৯ তারিখ আবেদনটি গ্রহণ করেন। আবেদনের ৫৯তম দিনে কর্তৃপক্ষ চেইন তৈরি করার অনুমতি প্রদান করেন। সে সময় কর্তৃপক্ষ চেইন তৈরির প্রায় ১৪টি নিয়মাবলীও দেন।

তাদের দেওয়া নিয়মাবলীতে উল্লেখ করা হয়, সেফটিপিন পরিমাপ করার জন্য সরকার অনুমোদিত একজন সার্ভেয়ার লাগবে। এছাড়াও দুইজন নিরপেক্ষ স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে চেইন গননা করতে হবে। তবে চেইন গননায় কোন ভাবেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপশি স্বাক্ষীদের বক্তব্য ভিডিও চেইন পরিমাপ করার স্থিরচিত্র গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে। স্বাক্ষী ও সার্ভেয়ারের নিরপেক্ষতা ও যোগত্য যাচাইয়ের জন্য তাদের সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ পাঠাতে হবে।
তাদের দেওয়া সকল নিয়মাবলী মেনে সকল প্রকার তথ্য পাঠানো হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখ ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে’ নথিভুক্ত করেন। যা তাদের পাঠানো ইমেইলের মাধ্যমে জানতে পারা যায়। সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখ সার্টিফিকেট তার হাতে আসে।

পার্থ আরো জানান, গিনেস কর্তৃপক্ষের সম্মতি পাওয়ার পরই লেগে পড়েন নতুন রেকর্ড করার কাজে। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এক লাখ সাতাশি হাজার আটশো ২৩টি সেফটিপিন একের পর এক গেঁথে চেইনটি তৈরি করেন। এ ক্ষেতে তিনি কারো সাহায্য নেননি। নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে একাই এ কাজ করেছেন। এ চেইন তৈরিতে তার ৪৫ দিন ব্যয় হয়। আর সময় লাগে ২৪১ ঘন্টা ৪২ মিনিট। সময়ের হিসাব করার জন্য সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। সেফটিপিনের রং সোনালী। এ চেইনটি দৈর্ঘ্যে সাত হাজার ২৭৭ ফুট বা ২৪০১.৮২৯ মিটার।

২০১৯ সালে ৬ সেপ্টেম্বর শ্রী শ্রী পাগল সংকর জিও মন্দিরে এই চেইনের জরিপ কাজ করা হয়। সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত লেগেছিল পরিমাপ করতে। প্রমাণ হিসেবে করতে হয়েছে ভিডিও, তুলতে হয়েছে ছবি। এ সময় কর্তৃপক্ষের নিয়মাবলী অনুযায়ী দুজন স্বাক্ষী ও একজন সার্ভেয়ার উপস্থিত ছিলেন। একজন লাখাই মুক্তিযোদ্ধা সরকারী কলেজের প্রভাষক রাজীব কুমার আচার্য অপরজন ফান্দাউক পন্ডিত রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পল্লব হালদার। চেইনটি পরিমাপ করার জন্য সার্ভেয়ার হিসেবে ছিলেন মো. তোফাজ্জল হোসেন। চেইন জরিপ কাজে শেষে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে যাবতীয় তথ্য পাঠানো হয়। আট মাস পর পার্থের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন গিনেস ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ। তাদের পাঠানো সার্টিফিকেটে লেখা আছে ‘দ্য লংগেস্ট চেইন অফ সেফটিপিন’।

একটি রেকর্ড গড়েই থেমে যেতে চান না পার্থ। নতুন পরিকল্পনা হিসেবে আবারো চেইন তৈরির নতুন কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। সেটা স্টেপলার পিন দিয়ে আরেকটি চেইন তৈরি করে রেকর্ড করতে চান।

বিশ্বরেকর্ড করে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দেশের পতাকাকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছি। আমি অভিভূত। আমার স্বপ্ন লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিত করা। আজ আমি স্বার্থক। তিনি আরো বলেন, আমি চাই আমার এই দীর্ঘ চেইনের মতোই গোটা জাতির মেলবন্ধন দীর্ঘ হোক। সৃষ্টি হোক পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন। তিনি বলেন, আমায় সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছেন আমার ভাতিজি জয়শ্রী দেব ও আমার পরিবারের সকল সদস্য।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন জানান, পার্থ যে কাজটি করেছে সেটা শুধু নাসিরনগরের নয় বরং ব্রাহ্মণবাড়িয়া তথা বাংলাদেশের মুখ বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করেছে। তার এই কাজ তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা তার এই অর্জনে অভিভূত। আমরা তাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দিবো। সে যদি আরো এমন কাজ করতে চায় তাহলে তাবে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।






Shares