ওয়াসিম বিডি’ ফেসবুক থেকে কাবা শরীফের বিকৃত ছবি আপলোড হয় :: অ্যাডমিনের সন্ধানে পুলিশ
ডেস্ক ২৪:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কয়েকদিন আগেই, ‘ওয়াসিম বিডি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে, পবিত্র কাবা শরীফের বিকৃত ছবি আপলোড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এমনকি কুমিল্লা ও চাঁদপুরের কয়েকজনকে আরো কয়েকটি বিকৃত ছবি শেয়ার দেয়া হয়।
পেজটি’র অ্যাডমিনের ব্যাপারে অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ। বিষয়টি জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (কনফিডেন্সিয়াল)-এর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে ‘ওয়াসিম বিডি’র অ্যাডমিন কারা বা কাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তা উদ্ঘাটনের জন্য বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৯শে অক্টোবর নাসিরনগর থানার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের ফেসবুক পেজে পবিত্র কাবা শরীফের উপর হিন্দুদের শিবের মূর্তির ছবি প্রকাশ করে। এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করা হয় এবং গত ৩০শে অক্টোবর রসরাজ দাসকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ওই মামলা তদন্তকালে রসরাজের ফেসবুকসহ অন্যান্য বিভিন্ন ফেসবুক পেজ অনুসন্ধানে ‘ওয়াসিম বিডি’ নামের একটি পেজ লক্ষ্য করা যায়। সেই পেজে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন ছবির সঙ্গে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন প্রতিমা সংযোজন করে নানারকম এডিট করা ছবি পোস্ট করা হয়েছে, যা বিভিন্ন ধর্মীয় উস্কানি সৃষ্টিসহ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে। তাই ওয়াসিম বিডি পেজটির অ্যাডমিন কারা বা কাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তা উদঘাটন করা জরুরি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এলাকায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতের পর প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সারাদেশে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত অভিযুক্ত রসরাজ এর ফেসবুক থেকে পবিত্র কাবা শরীফকে বিকৃত করা ছবিটি আপলোড করা হয়নি। একই ধরণের ছবি দেয়া হয়েছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পার্শ্ববর্তী জেলা কুমিল্লা এবং চাঁদপুরের কয়েকজন বাসিন্দাকেও। পুলিশের দাবি, ছবিগুলো আপলোড করা হয় ওয়াসিম বিডি নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডি আই জি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এটুকু জানা গেছে যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ছবিটি পাওয়া গেছে সেটি এখান থেকেই প্রেরণ করা এবং এই ছেলেটা এটা না বুঝে দিয়েছে।’
পুলিশের আশংকা, ওয়াসিম বিডি নামের ফেসবুক পেজে হিন্দু এবং মুসলিম দু’ধর্মের একাধিক বিকৃত ছবি রয়েছে যা পর্যায়ক্রমে সংঘাত সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হতে পারে। আর এ ধরণের সংঘাত এড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান তথ্য প্রযুক্তিবিদদের।
সোসাইটি অফ চিটাগাং আইটি প্রফেশনালস প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল্লাহ ফরিদ বলেন, ‘এটা সনাক্ত করার জন্য রাষ্ট্রিয় পর্যায় থেকে ব্যাবস্থা নিতে হবে বা অন্যান্য দেশের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে আইপি ট্রেস করে এটা বের করতে হবে।’
সোসাইটি অফ চিটাগাং আইটি প্রফেশনালস কার্যকরী সদস্য আসিফ ইফতেখার বলেন, ‘ফেইসবুকে যে একটা সংবাদ দিচ্ছি, একটা পোস্ট শেয়ার করছি বা লাইক দিচ্ছি এটার বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু এটা আমাদের আগে বুঝতে হবে। এছাড়া এটার প্রভাব কি হতে পারে সেটাও আমাদের বুঝতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না।’
এদিকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির জন্য ফেসবুক পেইজ ওয়াসিম বিডিকে শনাক্ত করলেও এখন পর্যন্ত তার এডমিনের সন্ধান পায়নি পুলিশ। এ অবস্থায় এডমিনকে শনাক্ত এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন।
ওয়াসিম বিডি পেজটির অ্যাডমিন কারা বা কাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তা উদঘাটন করা জরুরি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি। পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসপির চিঠির ভিত্তিতে আইটি এক্সপার্টদের মাধ্যমে ‘ওয়াসিম বিডি’ অ্যাডমিনের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার আশা করছেন তারা।