মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের:: ওসি আবদুল কাদেরের প্রত্যাহার দাবী
ডেস্ক ২৪:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের দুটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগে নাসিরনগর থানার ওসি আবদুল কাদেরের প্রত্যাহার চেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী সায়েদুল হকের বিরুদ্ধেও ওই দুই ইউনিয়নের প্রার্থীদের বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।
রোববার রাত ৮টায় স্থানীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে হরিপুর ও গুনিয়াউক ইউনিয়নে মন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ইউএনও এবং ওসির অপ-তৎপরতার বিবরণ দেন জেলা আওয়ামীস লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।
তিনি বলেন নাসিরনগরের বিভিন্ন ইউনিয়নে দলের নীতিমালা লঙ্গন করে ডাকবাংলোয় বসে স্থানীয় সংসদ সদস্য সায়েদুল হক মনোনয়ন দেন। ৬ সদস্যের মনোনয়ন বোর্ডে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকলেও নাসিরনগরে তাদেরকে ছাড়াই (জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) মন্ত্রী প্রার্থী চূড়ান্ত করেন। এরমধ্যে হরিপুর ইউনিয়নে একজন রাজাকার পুত্রকে মনোনয়ন দেয়া হলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপত্তি জানায়। আর গুনিয়াউক ইউনিয়নে একজন জনপ্রিয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে আর ভাগিনা হুমায়ুন কবির দরবেশকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। সেখানেও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এদুটি ইউনিয়নে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করতে বললে জেলা আওয়ামী লীগ সেখানে কেন্দ্রের নির্দেশে ২জন যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে। মন্ত্রীর দেয়া প্রার্থী পরিবর্তন হওয়ায় তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্দ হন। ওই দুই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যাতে নির্বাচিত হতে না পারে সেজন্যে স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে দলীয় প্রার্থীদের এখন নানা হয়রানি করছেন।
হরিপুর ইউনিয়নে রাশেদ নামে একজনকে বিদ্রোহী প্রার্থী করা হয়েছে। সে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভোট নষ্ট করবে। আর এতে বিএনপি প্রার্থী জামাল জয়ী হবে। গুনিয়াউক ইউনিয়নেও বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন তিনি। সেখানে মন্ত্রীর ভাগ্নে মনোনয়ন বঞ্চিত হুমায়ুন কবির দরবেশ বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন করছেন। তার নেতৃত্বে শুক্রবার গুনিয়াউকের গুটমা গ্রামে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ব্যানার ও পোস্টার আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম সামদানী শনিবার থানায় মামলা দিলেও নাসিরনগর থানার ওসি আবদুল কাদের এখন পর্যন্ত মামলাটি রেকর্ড করেননি। উল্টো দু-জন আওয়ামী লীগের একনিষ্ট কর্মী দুলাল মিয়া (৪৪) ও সোয়াব মিয়াকে(৪০) রাতে ঘুম থেকে তুলে আনে পুলিশ। তাদেরকে জামায়াত-শিবির বানিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন মামলায় জেলে পাঠান ওসি।
আল মামুন সরকার বলেন বিষয়টি আমরা পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। আমি নিজেও ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। ওসি আমাকে বলেছেন মন্ত্রীর নির্দেশে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে এধরনের মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমরা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর পুলিশ সুপারকে ফোন করে মন্ত্রী বলেছেন আপনি আসামিদের পক্ষে কোন তদবির করলে আপনাকেও ছাড়বো না।
তিনি অভিযোগ করেন সায়েদুল হক নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করছেন। ইউএনও-ওসি স্বীকার করেন তারা মন্ত্রীর নির্দেশে ওই দুই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর নির্বতনমূলক আচরণ করছেন।
তিনি বলেন সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার যে নীতি গ্রহণ করেছে নাসিরনগরের ওসি আবদুল কাদের এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ওসি আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করার জন্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা দাবি জানাই। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি করছি। পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সরকারের মন্ত্রী সায়েদুল হকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে দেখার দাবি জানাচ্ছি দলের সভানেত্রীর কাছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান বাবুল, গোলাম মহিউদ্দিন খোকন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।