নাসিরনগরে সহিংসতা : গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন সাক্ষী আশুতোষ



ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলার আগে ফেইসবুকে দেওয়া ‘ধর্ম অবমাননার’ ছবি পোস্টে সন্দেহভাজন আশুতোষ দাস আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মফিজ উদ্দিন ভূইয়া জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আশুতোষ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি বলেন, বুধবার দিনভর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আশুতোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. শফিকুল ইসলামের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
তবে জবানবন্দিতে আশুতোষ কী বলেছেন তা জানাননি এ পুলিশ কর্মকর্তা।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ওসি মফিজ বলেন, গত ২৯ অক্টোবর রসরাজের বিরুদ্ধে পুলিশের করা আইসিটি আইনের মামলার সাক্ষী করা হচ্ছে আশুতোষকে। আশুতোষের জবানবন্দি মামলার তদন্ত কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জবানবন্দি শেষে আশুতোষকে তার বাবার জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান।
ধর্মীয় অবমাননার ছবি ফেসবুকে পোস্টের অভিযোগে নাসিরনগর থানায় আইসিটি মামলায় গ্রেপ্তার রসরাজের ফেইসবুক আইডি ও পাসওয়ার্ড আশুতোষ দাস জানতেন বলে এর আাগে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দাবি করেন নাসিররগরে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার আলামিন সাইবার ক্যাফে মালিক জাহাঙ্গীর আলম।
এ ঘটনার পরেই দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যায় আশুতোষ দাস। পরে পরিবারের সহায়তায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় বলে ওসি জানান। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে কে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করেছে, পোস্টের বিষয়টি রসরাজ দাস কিভাবে জানতে পেরেছে এবং পরে এ বিষয়ে কে ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিয়েছে, এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশকে তথ্য দিয়েছে আশুতোষ। এসব তথ্য আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও উল্লেখ করেছেন আশুতোষ ।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, আশুতোষের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও আশুতোষ অনেক তথ্য দিয়েছে। কিন্তু নথি না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও তথ্য বলা ঠিক হবে না।তিনি আরও জানান, আশুতোষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রসরাজের মামলাটি অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলার রহস্য উদঘাটন করতে পারব।
হরিপুর গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান আবু লালের ওমান প্রবাসী ছেলে মামুন রসরাজের মোবাইল ফোনে কল করে ছবি পোস্ট হওয়ার বিষয়টি অবগত করে এবং মুছে ফেলতে বলে। রসরাজ তখন বিলে থাকায় তার ছোট ভাই পলাশ ফোন ধরে। তখন আলোচনার প্রেক্ষিতে মামুন ক্ষমা চাওয়ার একটি পোস্ট লিখে ইমুতে দেন। আশুতোষ ছবি মুছে দিয়ে (রিমোভ) ওই পোস্ট ফেসবুকে দিয়ে দেন। তার আরেক চাচাতো ভাই হৃদয় ফেসবুক আইডিটি খুলে দেন বলে আশুতোষ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।
‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে গত বছরের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুমন্দির ও বাড়িঘরে হামলা লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর পরপরই কয়েকটি স্থানে আরও হামলা হয়। এ ঘটনায় দেশে বিদেশে ব্যাপক সামলোচনা হয়েছে। ফেইসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে করা আইসিটি আইনের মামলায় রসরাজ ও জাহাঙ্গীর এখন কারাগারে রয়েছেন।