সরাইলে আশ্রয়ণের ভীত নির্মাণের পর প্রমাণ হলো জায়গাটি ব্যাক্তি মালিকানার , সরকারের লাখ টাকা গচ্ছা
পরপর নির্মাণ চলছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫টি ঘরের। এরজন্য কাটা হয়েছে অর্ধশতাধিক বনজ ও ফলজ গাছ। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে বসতঘরও। এসবই চলছে ব্যক্তিমালিকানা ভূমিতে। প্রশাসনের ভুলের খেসারত দিতে হল সরাইলের ছিদ্দিকুর রহমানের পরিবারকে। উপজেলা থেকে জেলা প্রশাসনের দরজায় ঘুরে অবশেষে পুনঃজরিপে দেখা গেলো জমিটি খাস নয়। এরই মধ্যে সরকারের লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন চেয়ারম্যান বিচার চাইছেন পরিমাপকারী চেইনম্যানের। প্রশাসনও সেখানে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ও ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুনঃজরিপের নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, সার্ভেয়ার ওয়াসিম আকরাম, তেলিকান্দি ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার, চেইনম্যান আব্দুল গাফফার উপস্থিত থেকে জমি পরিমাপ করছেন। তারা জানান, আগে করা জরিপ ভুল ছিল। চেইনম্যানের ভুলেই ব্যক্তিমালিকানা জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছিল। দাগ নম্বর ঠিক মত ধরতে না পারায় এ ভুলের সৃষ্টি হয়েছিল।
জানা গেছে, স্থানীয় মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে ১৬ শতক ডোবা ও ২১ শতক বাড়ি কিনেন। পরে তিনি ডোবা ভরাট করে ঘর নির্মাণ এবং বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ রোপন করেন। সম্প্রতি গত ১৬ নভেম্বর অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন তার ব্যাক্তিমালিকানার জায়গায় খাস জমি আছে এমন দাবি করে কোন পূর্ব নোটিশ না দিয়ে ঘর ভেঙ্গে ফেলে এবং কয়েকলক্ষ টাকা মূল্যের গাছ কেটে ফেলে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মানের কাজ শুরু করেন। পরে সিদ্ধিকুর রহমান বিষয়টি জেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে পুনঃজরিপের নিদের্শ দেয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার সার্ভেয়ার ওয়াসিম আকরাম এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা উপরের নিদের্শে জায়গাটি পুনঃরায় পরিমাপ করতে এখানে এসেছি। আগের পরিমাপে কিছু ত্রুটি ছিল।
তবে নিজের দোষ অস্বীকার করে চেইনম্যান আব্দুল গাফফার বলেন, আমি কোন ভুল করিনি। আমাকে ইউএনও সাহেব বললেন, এই দাগের মধ্যে ৭২ শতক খাস ভূমি আছে। আমি শুধু সেটুকু পরিমাপ করে দিয়েছি।
অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূইয়া বলেন, দুইজন ইউএনও বসে থেকে জায়গা নির্ধারন করে দিয়ে গেছে। আমি ও নায়েব উপস্থিত ছিলাম। আমরা নিরুপায়। চেইনম্যান জায়গা মেপে দিয়ে, গাছ কেটে, সম্মানিত ব্যাক্তিকে সরকারের জায়গা দখলের তকমা দিয়ে অসন্মানিত করেছে। তার ভুলের কারনে এত ক্ষতি হল। আমরা তার বিচার চাই। এ ঘটনায় এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। সবাই আমাকে দায়ী করেছে। আমি জায়গা দখল বা বুঝিয়ে দেবার কে? এখন আবার মেপে বলল, আগের মাপে ভুল হয়েছে। এখন ভীতের ইট তুলে নিলেও সরকারের লাখ টাকা গচ্ছা যাবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মোঃ রুহুল আমিন বলেন, ভুক্তভোগীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা পুনঃজরিপ করে দেখেছি। আগের মাপে ভুল ছিল। আমরা এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকারের টাকা অপচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে সরকারের কোন ক্ষতি হয়নি। টিআরের টাকা দিয়ে চেয়ারম্যান এ কাজ শুরু করেছিল। (উল্লেখ্য, টিআরও সরকারেরই অর্থ)
এ বিষয়ে সিদ্দিুকুর রহমানের নাতি ফরিদুল হক বলেন, আমরা আমাদের বসতঘর ভাঙ্গা ও গাছকাটার ক্ষতিপূরণ চাই। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তির দাবি জানাই।