সরাইল হত্যা মামলার মূল অপরাধি’কে বাদ দেয়ার অভিযোগ
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বরজু হত্যা মামলার সাত আসামিকে অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয়ায় অভিযোগকারী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তবে এই বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আ স ম আতিকুর রহমান বলেন, আমরা অধিকতর তদন্ত করে যাদেরকে কোন কিছুতেই পাইনি তাদেরকে অভিযোগ থেকে বাদ দিয়েছি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের লোপাড়া এলাকায় মোবাইল চুরির ঘটনায় চোর সন্দেহে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বরজু মিয়া কে হত্যা করা হয়। বরজু মিয়া লোপাড়া মধ্যপাড়া এলাকার আলী আফজল এর ছেলে। চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একই এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে সুজন মিয়া কে মারাত্মক ভাবে আহত করে ফেলে যায়। বর্তমানে সুজন মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
এই ঘটনায় গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর নিহতের ভাই ফজলু মিয়া বাদি হয়ে ২৬ জনকে আসামি ও ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা করে সরাইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহতের ভাই ও মামলার বাদি ফজলু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই হত্যাকারীদের সাথে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আ স ম আতিকুর রহমান মিলে মোটা অংকের টাকা সমঝোতা করে। সাত আসামি কে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়ে দেয় তিনি।
আমাকে সরাইল থানায় নিয়ে মামলার চার্জশিট দেয়ার কথা বলে সাত লক্ষ টাকা চায় তদন্তকারী কর্মকর্তা। আমি গরীব মানুষ, আমার ভাই কে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাইতে গিয়ে টাকা দিবো কোত্থেকে? তবুও বাড়িতে আলাপ করে তিন লক্ষ টাকা দেয়ার কথা বলি। এর আগেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাত আসামিকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দিয়ে দেয়। চার্জশিট দেয়ার আগে কোন স্বাক্ষীদের সাথে কথা বলে নাই। আমরা কার কাছে বিচার চাইবো। আমার ভাই কে যারা হত্যা করেছে তারা এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি আরও বলেন আমরা এই চার্জশিট মানি না।
মামলার একনম্বর স্বাক্ষী সুজন মিয়া’র পিতা শফিকুল ইসলাম বলেন, সরাইল থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা আ স ম আতিকুর রহমান আসামিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সাত আসামি কে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়ে দেয়। আমি এর বিচার চাই, আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই হত্যার বিচার চাই।
নিহতের ভাই মো: নবাব মিয়া বলেন, আমার ভাই কে মোবাইল চুরির ঘটনা সাজিয়ে হত্যা করে আসামিরা। আমরা হত্যাকারীদের কে অনেক আকুতি মিনতি করেছি ভাই কে না মারতে। যা বিচার আছে আমরা করবো তাতেও তারা তখন মানেনি। তারা তখন কাউকে সামনে আসতে দেয় নাই। আব্দুল হাই বলছিল এতোদিনে পাইছি তারে ছাড়া যাবে না। নির্বাচনে আমার বিরোধিতা করবিনি আর। এই কথা বলে বলে পিলারের সাথে বেধে অমানুষিক ভাবে মেরে ফেলে।
চুন্টা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলী মিয়া জানায়, এভাবে একজন মানুষ কে মেরে ফেলেছে যারা তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলে সাধারণ মানুষ কোথায় গিয়ে বিচার চাইবে কোথায় বিচার পাবে।
লোপাড়া এলাকার স্থানীয় আরিছ মিয়া, আব্দুল মালেক, আব্দুর রহিম, পল্লী চিকিৎসক নাছির মিয়া বলেন, রাতের অন্ধকারে একজন মানুষ কে ঘর থেকে তুলে নিয়ে মেরে ফেলা আর একজন মারাত্মক ভাবে আহত করে ফেলে রাখলো যারা তাদের বিচার হউক এইটা আমরা সবাই চাই।
মামলার আসামিরা হলো মো: ছায়েম মিয়া, আবদুল হাই, মো: হোসেন মিয়া, মন্তু মিয়া, রিপন মিয়া, নজরুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, ফুরকান মিয়া, আক্তার মিয়া, এনামুল মিয়া, তাবারক মিয়া, শাহীন মিয়া, আব্দু মিয়া, শফিকুল ইসলাম, শাহজাহান মিয়া, আফসার মিয়া, বাচ্চু মিয়া, নান্নু মিয়া, নাজিমুল মিয়া, জিলু মিয়া, ইমান আলী, সুমন মিয়া, সাইমন মিয়া, জামাল উদ্দিন, শরীফ মিয়া, মোছা: হাজেরা বেগম।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আ স ম আতিকুর রহমান বলেন, আমরা অধিকতর তদন্ত করে যাদেরকে কোন কিছুতেই পাইনি তাদেরকে অভিযোগ থেকে বাদ দিয়েছি। যারা এর সাথে জড়িত নয় তাদেরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।