হিন্দু শিক্ষার্থীর ইসলাম ধর্ম পরীক্ষায় অংশগ্রহন, প্রধান শিক্ষককে শোকজ
সরাইলে জে এস সি পরীক্ষায় তুঘলকি কান্ড! মোহাম্মদ মাসুদ: সরাইলে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় তুঘলকি কান্ড ঘটেছে। এক প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে জয়চন্দ্র সরকার নামের এক হিন্দু শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে মাত্র চার দিনের প্রস্তুতিতে মুসলমান শিক্ষার্থীদের ইসলাম ধর্ম বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। বিষয়টি পরিবর্তনের জন্য ওই প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা শুরুর আগে পাঁচ হাজার টাকা উৎকোচ দাবীর বিষয়টি জানিয়েছে শিক্ষার্থী নিজে। এ ঘটনায় সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষক মোঃ মুখলেছুর রহমানকে কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরাইল রাহমাতুল্লিল আল-আমীন দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ার পর সকল পরীক্ষার্থী সহ কর্তব্যরত শিক্ষক গণ হতবাক হয়ে যান। এর কোন সদত্তোর বা সমাধান দিতে পারেননি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। ওইদিন বিকেলে ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় কালিকচ্ছ পাঠশালা উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট ৮৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। এর মধ্যে ১২ জন হিন্দু। অষ্টম শ্রেণীর হিন্দু ছাত্র জয়চন্দ্র সরকার নিজের আবশ্যিক বিষয় বাদ দিয়ে মুসলমান শিক্ষার্থীদের আবশ্যিক বিষয় ইসলাম ধর্ম পরীক্ষা দিচ্ছে। তার বাড়ি কালিকচ্ছের নমোশোদ পাড়ায়। স্কুলে তার রোল নং-২৯ ও শাখা- ক। তার প্রবেশ পত্র ও রেজিঃ কার্ড সূত্রে জানা যায়, তার বাবার নাম দেবেন্দ্র সরকার। মাতার নাম ভানু সরকার। রোল নং- ৬০৮০৭৫, রেজিঃ নং- ১৩১১২১৩১৩০ ও সেশন- ২০১৩। শিক্ষার্থী জয়চন্দ্র জানায়, এক মাস আগে প্রবেশ পত্র হাতে পেয়েছি। পরীক্ষা শুরুর ১০/১৫ দিন পূর্বে হেড স্যারকে বিষয়টি জানিয়েছি। স্যার বলেছেন ভুলে প্রবেশ পত্রে ইসলাম ধর্ম লিখা হয়ে গেছে। এখন তুমি ইসলাম ধর্ম পরীক্ষাই দিয়ে দাও। আর যদি পাঁচ হাজার টাকা দিতে পার তবে তোমার এটা সংশোধন করে আনতে পারব। আমি টাকা দিতে পারিনি। তাই সংশোধন ও হয়নি। আজ বাধ্য হয়ে অন্যের কাছ থেকে বই ধার করে মাত্র চার দিনের প্রস্তুতিতে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছি। সহকারি কেন্দ্র সচিব মোঃ হারুনুর রশিদ এ বিষয়ে বলেন, প্রবেশ পত্রে যা লিখা থাকে তাই মানতে হবে। সমস্যা মনে করলে শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের প্রধানকে জানাবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, সিলেবাস অনুসারে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত স্ব স্ব ধর্ম বিষয় আবশ্যক। অন্য ধর্ম গ্রহনযোগ্য নয়। কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, এ বিষয়ের আইনি বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাইদুর রহমান এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুঠোফোনে বলেন, মাদ্রাসা কেন্দ্রে কালিকচ্ছ পাঠশালার কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, এটা প্রধান শিক্ষকের খাম খেয়ালি। সে বিষয়টি আমাকে জানাইতে পারত। টাকা দাবীর বিষয়টি অনৈতিক ও শাস্তিযোগ্য অবরাধ। আমি প্রধান শিক্ষককে কারন দর্শানো নোটিশ দিয়েছি। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নিব। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মুখলেছুর রহমানের মুঠোফোনে বলেন, এটা অফিস সহকারি পার্থ রায়ের ভুলের কারনে হয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিষদের সকলকে নিয়ে বিষয়টি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। টাকার জন্য ছেলে আর যোগাযোগ করেনি। আমি পাঁচ হাজার টাকা চায়নি। |