Main Menu

দুইজন প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি সনদ

সরাইলের রানার যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতায় অসাধারণ সাফল্যের গল্প

[Web-Dorado_Zoom]

নাঈম খান রানা, যুক্তরাষ্ট্রে আলো ছড়ানো এক বাংলাদেশি শিক্ষক। যিনি শুধু শিক্ষকতা পেশার নয়, পুরো বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন বহির্বিশ্বে।

শিক্ষকতায় অসামান্য অবদানে সনদ পেয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে । সম্প্রতি দুই প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি পাওয়া এই সেরা শিক্ষক তার জীবনের নানা গল্প শেয়ার করেছেন দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে ।

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র – একটি স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের সন্তান নাইম খান রানা ঢাকায় বড় হয়েছেন । উচ্চ শিক্ষার জন্য এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৮৯ সালে ভর্তি হয়েছিলেন সনি অকল্যান্ডের সিটি কলেজে। ফলাফল ভালো হওয়ায় ছাত্রজীবন শেষ করার আগেই পেয়ে যান চাকরি। সেই থেকে তার সাফল্য শুরু । বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিজের সেরাটাই দিয়েছেন তিনি। ফলও পেয়েছেন । যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শুধু বাংলাদেশি নয় শিক্ষকতা পেশাকে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন তিনি ।

মানবজমিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় রানা জানান, ছাত্রজীবনেই সর্বোচ্চ একাডেমিক সম্মান পান সনি অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিগ এ্যাপেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন ২০১৪-২০১৫ এবং ২০২২-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে। ২০২০ এবং ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল লাইফ টাইম এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান ২০২০-২০২৪ সালে জো বাইডেনের স্বাক্ষরে। চলতি বছরের জুলাই মাসে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরে প্রেসিডেন্ট গোল্ড অ্যাওয়ার্ড এবং প্রেসিডেন্ট এডুকেশন এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড পান তিনি ।

শিক্ষাজীবনের নানা গল্পে নাইম রানা জানান, ১৯৯৩ সালে রামপো কলেজ এবং পরবর্তীতে সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের সিটি কলেজ থেকে ব্যাচেলার ডিগ্রি অর্জন করেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে । ১৯৯৭ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ এবং ১৯৯৯ সালে এমএসসিসি সম্পন্ন করেন মনমাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে । শিক্ষকতা শুরু করেন সেখানে । ১৯৯৯ সাল থেকে, মনমাউথ ইউনিভার্সিটিতে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন তিনি । এরপর ২০০৫ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক সিটির ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের তালিকাভুক্ত শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতায় যুক্ত থাকার জন্য সাতটি বিষয়ে তিনি সনদ গ্রহণ করেন । শিক্ষকতা অবদানের কারণে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনেও যুক্ত করা হয়েছিল তাকে ।

ছাত্রজীবনে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে এই শিক্ষক জানান, দেশ তাকে অনেক কিছু দিয়েছে, এখন বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য কাজ করতে চান ।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলেন নাইম খান । জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-শিক্ষকের রাজনীতি থাকতে পারে । কারণ এটা রাজনীতি চর্চার উন্মুক্ত স্থান । কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি হচ্ছে তা বাংলাদেশের হয় না । শিক্ষকদের নিজের মতাদর্শ শিক্ষার্থীদের উপর যখন চাপিয়ে দেওয়া হয় তখন এটা আর শিক্ষকতা না, স্বার্থের সংঘাত হয় । শিক্ষকদের সম্মান সবার উপরে তাই শিক্ষকদের এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত ।

নাইম রানার এই অর্জনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও গর্বের অনুভূতি ছড়িয়ে পড়েছে। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশনের (বাকা) পক্ষ থেকে তাঁকে ২০২২ সালে সম্মাননা প্রদান করা হয় ।

বাকার সেক্রেটারী শাহ বদরুজ্জামান রুহেল মানবজমিনকে জানান, নাইম রানার মতো ব্যক্তিরা আমাদের কমিউনিটির আইকন । তাদের কৃতিত্বে একদিকে যেমন বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হয়েছে তেমনি শিক্ষকতার মতো মহান পেশার প্রতিও পরবর্তী প্রজন্মের আগ্রহ তৈরি হবে । তিনি নাইম রানাকে কমিউনিটির কল্যাণে বিভিন্ন বিষয়ে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান ।
শিক্ষাবিদরা বলছেন নাইম রানা শিক্ষকতায় শুধু নিজের স্বপ্ন পূরণ করেননি, বরং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি অনেক তরুণের স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছেন, যা ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে আগামী প্রজন্মের কাছে । সূত্র: দৈনিক মানবজমিন






Shares