সরাইলের এমপি ও আ’লীগ মুখোমুখি :: ১৭ এপ্রিলের পর শুধু আ’লীগ মাঠে থাকবে
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল :: আগামী ২৩ এপ্রিল সরাইলের ৯টি ইউনিয়নের নির্বাচন। ইতিমধ্যে আ’লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছেন। মহাজোটের শরিক ও বর্তমান সরকারের বিরোধী দলের অন্যতম নেতা সরাইলের সংসদ সদস্য এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা। সরাইলে তিনি ৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়েছেন। এরপর থেকেই জেলা আ’লীগের সাথে এমপি’র দূরত্ব বাড়তে থাকে।
দলীয় কার্যালয়ে বসে দলীয় প্রতীক বরাদ্ধের পত্র দেওয়ার অনুষ্ঠানে মৃধা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবী করেন। শুরু হয়ে যায় এমপি’র সাথে জেলা আ’লীগের কাঁদা ছুঁড়াছুড়ি। সরাইলের এমপি’র বিরুদ্ধে আচরন বিধি লঙ্গনের অভিযোগ এনে বিবৃতি দেন জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার। এ অভিযোগ খন্ডন করে জাতীয় পত্রিকায় পাল্টা বিবৃতি দেন এমপি মৃধা।
এর জের ধরেই গত বৃহস্পতিবার ১৪৪ ধারা জারি করা সরাইল অন্নদা স্কুল সংলগ্ন মাঠে বড় প্যান্ডেল তৈরী করে দুপুর থেকেই চলে আ’লীগের সভা। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির বিএম শাখার পরীক্ষা ও আ’লীগের সভা চলে একেবারে পাশাপাশি। যেখানে লোকজনের চলাফেরা ও যান চলাচল নিষিদ্ধ। বিকাল ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চলছে পরীক্ষা। সেখানে নির্বিঘ্নে চলছে সমাবেশ। ক্ষমতাসীন দল হওয়ায় নিরব ছিল প্রশাসন। ভয়ে মুখ খুলেননি পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরীক্ষার্থীরা শুধু ছটফট করেছে।
আর ওই মুজিবনগর দিবসের প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের এমপি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আল-মামুন সরকার। সেই সাথে তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিস্কার ও হামলার হুমকি দিয়েছেন। আল-মামুন বলেন, মৃধা সাহেব আপনাকে মনে রাখতে হবে আ’লীগের মনোনয়নে সমর্থনে ও সহযোগীতায় আজ আপনি এমপি। বেশী বড় কথা বলবেন না। আপনি কাদের কেন কিভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী করছেন। কিভাবে উস্কানি দিচ্ছেন? সব খবর আমাদের কাছে আছে। কোথাকার কোন সিরাজ মিয়া। শাহজাদাপুরে বসে সংখ্যালঘুদের হয়রানি করছে। ভোটের জন্য হুমকি দিচ্ছে। এখনো সময় আছে। সিরাজ মিয়ারা সোজা পথে চলুন। নতুবা ফল ভাল হবে না। ওসিকে বলব তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। নতুবা আমরা দেখব। এমপি’র উদ্যেশ্যে তিনি আরো বলেন, আপনার নেতা এরশাদ সন্ধ্যায়, রাতে ও সকালে তিন রকম কথা বলেন। আপনার মাথা তো এত খারাপ হয়নি। আশা করি আজকের পর আপনার মাথা আরো ঠান্ডা হয়ে যাবে। যদি নুন খেয়ে থাকেন, তবে গুন গাইতে হবে। কোথাও কোন ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবেন না। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে বলেন, এখনো সময় আছে। মনোনয়ন প্রত্যাহার করুন। আঙ্গুলে ক্যানসার হলে কেটে ফেলে দেওয়া হয়। আমরা আঙ্গুল নয়, পায়ের উরু থেকে কেটে ফেলে দিব। প্রার্থী নৌকার মালিক নয়, মাঝি। নৌকার মালিক আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনা। এই নৌকাই সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। নৌকার সাথে রাগ করবেন না। আমরা সবল মাঝারি ও দূর্বল তিন শ্রেণির প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছি। শনিবার (আজ) পর্যন্ত অপেক্ষা করব। রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সহযোগীদের তালিকা পত্রিকায় প্রকাশ করব। ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর দিবসে সরাইল পরিস্কার করব। যে প্রার্থী বড় মিছিল আনতে পারবে সেই পাশ। নতুবা কাটা পড়ে যাবেন। ওইদিন মিছিলের পর সরাইলে কারো আওয়াজ থাকবে না। এমন মিছিল করবেন বৈঠার বারিতে যেন সব চলে যায়। লাইট্টল ফাইট্টল আমরা চিনি। সারা উপজেলায় যে সিরাজ মিয়ারা আছেন সাবধান হয়ে যান। তোমরা কি কর? কোথায় তোমাদের আয়ের উৎস? আল-মামুন সরকার তোমাদের হিসাব নিবেন। ইঙ্গিতে বুঝে নিন। ১৭ তারিখের পর শুধু আমরা বাহিরে থাকব। আর কেউ বাহিরে থাকতে পারবে না। বিদ্রোহী ও সহযোগীদের জল স্থল ও আকাশ পথে আক্রমন করা হবে। আ’লীগ ক্ষমতায় থেকে কি ফেল করতে পারে? ফলাফল ঘোষনা শুরু হলে ৯টি ইউনিয়নেই আ’লীগ পাশ করবে। সরাইল সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আ’লীগের প্রার্থী এডভোকেট জয়নাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক এডভোকেট নাজমুল হোসেন। বক্তব্য রাখেন- জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, যুগ্ম সম্পাদক-২ মহিউদ্দিন খান খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মাহাবুবুল আলম খোকন, সরাইল আ’লীগের যুগ্ম আহবায়ক-১ উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট আবদুর রাশেদ, সদস্য ফরহাদ রহমান মাক্কি, শফিকুর রহমান ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাছুম বিল্লাহ।
১৪৪ ধারা জারিকৃত এলাকায় আ’লীগ সমাবেশ করার কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কেন্দ্রের ২’শ গজের মধ্যে যান ও মানুষ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে স্থানীয় আ’লীগ নেতারা বিকাল ৪টা থেকে সভা শুরু করার কথা বলেছিলেন। আ’লীগের আহবায়ক এডভোকেট নাজমুল হোসেন ওই মাঠে ১৪৪ ধারা জারি থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, সকাল থেকে কিছু লোক মাঠে প্যান্ডেল তৈরীর কাজ করেছে। ৪টার পর সভায় লোকজন এসেছে।
এমপি জিয়াউল হক মৃধা আল-মামুন সরকারের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, বিদ্বেষমূলক, কুরুচিপূর্ণ ও পাগলামি উল্লেখ করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে বলা সকল অভিযোগ বানোয়াট বিভ্রান্তিকর ও ষড়যন্ত্র। আমি উনার বক্তব্যের প্রতিবাদ করছি। তাদের দলের কোন বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে এখন পর্যন্ত আমার কথাই হয়নি। সিরাজ মিয়া কর্তৃক সংখ্যালঘুদের হুমকি দেয়ার বিষয়টিও মিথ্যা। সরাইলের সচেতন জনগণ এমন অবান্তর বক্তব্যের জবাব দিবে। আর আমি জবাব দিব পার্লামেন্টের আগামী সভায়।