করোনার আঘাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসী পরিবারটিতে আর কোন পুরুষ রইলো না
পুত্রের পর চলে গেলেন পিতাও। পরিবারটিতে এ দু-জনই ছিলেন পুরুষ সদস্য। করোনা ভাইরাস মহামারীতে হ্নদয় বিদারক এমন ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে আমেরিকা প্রবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের বাসিন্দা ডাক্তার আবদুস জাহেরের পরিবারে। তাদের মৃত্যুতে দেশে থাকা স্বজনরা দু:খের তিমিরে নিমজ্জিত। তিন সপ্তাহের বেশী সময় প্রাণঘাতী ভাইরাসের সাথে লড়াই করে গত ২১ শে এপ্রিল আমেরিকার বাফেলো হাসপাতালে মারা যান ডাক্তার আবদুস জাহের (৮৪)। এর ১০ দিন আগে ১১ই এপ্রিল মারা যান একমাত্র ছেলে সামসুছ জাহের জ্যাকি (৪০)। সংক্রমিত হওয়ার পর একই হাসপাতালে ৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন জ্যাকি। জাহেরের স্ত্রী সালমা জাহেরও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সংক্রমিত হয়ে।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, ডাক্তার জাহের ১৯৯৭ সালে আমেরিকা পাড়ি জমান। আর ছেলে জ্যাকি ২০০৫ সালে। পিতাপুত্রের মৃত্যুতে তছনছ হয়ে গেছে সাজানো এক সংসার। মৃত্যু হয়েছে অনেক স্বপ্নের। জ্যাকি বিবাহিত ছিলেন। তার ১০ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
আবদুস জাহেরের ছোট ভাই প্রয়াত উপ-সচিব আবুল ফজল নূরন্নবীর স্ত্রী পারভীন নবী জানান- তার ভাসুর আবদুস জাহের ছিলেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এ্যানেসথেশিয়ার এসোসিয়েট প্রফেসর। চাকুরী থেকে অবসরগ্রহনের পর আমেরিকা চলে যান। পুরো পরিবার নিয়েই থাকতেন সেখানে। তাদের মৃত্যুতে এখন আমার জা, আর দুই মেয়ে রয়েছেন।
পারভীন জানান- তার ভাসুর ডাক্তার জাহের গত বছরের আগষ্টে বাংলাদেশে এসেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন তার ছেলের বিয়েতে। এরপর দু-আড়াই মাস থেকে আবার চলে যান। ডিসেম্বরে তার আসার কথা ছিলো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘরে ডাক্তার জাহেরের বোনের বাড়ি।
তার এক ভাগিনা জামিনুর রহমান জানান- প্রতিবছরই মামা আসতেন আমাদের বাড়িতে আম্মাকে দেখার জন্যে। সর্বশেষ মাস ছয়েক আগে এসেছিলেন। যাওয়ার আগে আম্মার হাতে কিছু টাকা তুলে দিয়ে বলেছিলেন আর হয়তো না-ও আসতে পারি। মামা আর আসবেননা,এটাই সত্যি হলো। ডাক্তার জাহের সরাইলের শাহবাজপুর গ্রামের লালমিয়া পাড়ার মৌলভী আবদূন নূরের সন্তান। ১০ ভাইবোনের মধ্যে এক বোন আর তিনি বেঁচে ছিলেন।
(প্রতিবেদনটি মানবজমিনে প্রকাশিত)